গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য । সমস্যা ও প্রতিকার

পেটের পীড়া সবার কাছে সাধারণ রোগ। যে খাবার থেকে আমরা শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি আহরণ করি তার অপ্রয়োজনীয় অংশ মল রূপে দেহ থেকে বের করে দিই। স্বাভাবিক মলত্যাগ দেহের সুস্থতার একটি লক্ষণ। ডায়রিয়া হলে যেমন মল পাতলা হয়ে যায় আবার কখনো তা শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের আকার ধারণ করে থাকে। বেশি সময় ধরে মলত্যাগ না হওয়া বা পায়ুপথ দ্বারা বায়ু নির্গত না হওয়া বা মলত্যাগ সম্পূর্ণ না হওয়াই কোষ্ঠকাঠিন্য। সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ কোষ্ঠকাঠিন্যের পর্যায়ে পড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের বেশি হয়।

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। বেশির ভাগ মহিলাই সাধারণত এ সময় কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। এমনিতেই গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের সমস্যা থাকে। তারপর যদি পেট পরিষ্কার না হয় তাহলে ভাবী মায়ের শরীর ও মন ভালো থাকে না। পেটে সব সময় একটা অস্বস্তিভাব বিরাজ করে। কখনো আবার তলপেটে ও কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়।

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়ঃ

  • গর্ভাবস্থায় গর্ভজাত শিশুসহ জরায়ুর বৃহদন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টির কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য এ সময় বেড়ে যায়। আবার অনুপযুক্ত খাবার গ্রহণ কিংবা প্রয়োজন মতো পানি পান না করার কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এ সময় প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের অভাবেও সমস্যাটি বেড়ে যায়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
  • গর্ভাবস্থার জন্য ওজন ও আয়তনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জরায়ু বৃহদন্ত্র ও মলাশয়ে চাপ সৃষ্টি করার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। গর্ভের পূর্বে জরায়ুর দৈর্ঘ্য ৭.৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৫০ গ্রাম থাকে। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পূর্ণ বিকশিত জরায়ুর দৈর্ঘ্য ৩৫ সেন্টিমিটার ও ওজন ৯০০ গ্রাম হয়ে যায়।
  • এছাড়াও খাদ্যে আঁশের স্বল্পতা, পানি কম খাওয়া, দুগ্ধজাত খাদ্য বেশি পরিমাণে খাওয়া, খাদ্যাভ্যাসের বারবার পরিবর্তনশীলতা,  পরিপাকতন্ত্রের স্নায়ু ও মাংসপেশির সমস্যা (হাইপোমোবিলিটি), মলত্যাগের চাপ চেপে রাখার প্রবণতা, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন

  •  মলত্যাগের সময় প্রচুর চাপ প্রয়োগ।
  •  শক্ত বা ছোট ছোট মল যা বের করা কষ্টকর ও ব্যথা হয়।
  • মলত্যাগের অপূর্ণতা।
  • কমপক্ষে তিন দিন মলত্যাগ না করা।
  • পেট ফুলে যাওয়া বা পেট ব্যথা, যা মলত্যাগের ফলে কমে যায়।
  • বমি হতে পারে।
  •  মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া (হেমোরয়েড বা ফিশার-এর কারণে)।

প্রতিকার  

গর্ভাবস্থায় সঠিক খাদ্য-তালিকা অনুযায়ী আহার করলে এই সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়।

  • বেশি পরিমান পানি পান করা। দিনে অন্ততপক্ষে ৭-৮ গ্লাস পরিশ্রুত পানীয় পানি (ফোটানো এবং ঠান্ডা) পান করা উচিত। এছাড়াও পানীয় আহার বেশি করে করা দরকার।
  • টাটকা সবুজ শাকসবজি-ফল (আশযুক্ত খাবার) দৈনন্দিন খাদ্য-তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
  • হালকা গরম দুধ বা পানি পান করা।
  • ইসবগুলের ভুসি খাওয়া।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইন না খাওয়া (যেমন: চা, কফি)।
  • দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার আগে ‘ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স’ আছে কি না পরীক্ষা করে দেখা।
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা।
  • মলত্যাগের চাপ চেপে না রাখা।
  • কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কি না তা পরীক্ষা করা। যেমন: হাইপোথাইরয়েডিজম।l
  • দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করা।

চিকিৎসকের পরামর্শ

দুই সপ্তাহে অবস্থায় উন্নতি না হলে, মলের সঙ্গে রক্ত গেলে, মলত্যাগের সময় ব্যথা হলে অথবা চিকন মল বের হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কোষ্ঠকাঠিন্য নিজে খুব জটিল রোগ না হলেও এর কারণে বহু জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আগে থেকেই সাবধান হওয়া ভালো। এটি কোনো কোনো জটিল রোগের পূর্বাভাসও হতে পারে যেমন: মলাশয়ের ক্যানসার। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যকে অবহেলা নয়।

তথ্যসূত্রঃ

Fairy Land / প্রথম আলো

Sharing is caring!

Comments are closed.