ভালো থাকুক শিশুর চোখ
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ কোটি শিশু (০-১৫ বছর)। আমাদের দেশে মোট অন্ধত্বের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। সেখানেও শিশু অন্ধত্বের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। আবার পৃথিবীতে প্রতি এক মিনিটে একজন শিশু অন্ধ হচ্ছে। অথচ চিকিৎসার মাধ্যমে ১৫ শতাংশ শিশুকে অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। ২৮ শতাংশ শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রতিসরণ ত্রুটি (চশমাজনিত সমস্যা): শিশুর চোখের দৃষ্টিস্বল্পতার লক্ষণসমূহ হলো কাছ থেকে টিভি দেখা, পড়ার সময় বই চোখের কাছে নিয়ে পড়া, হাঁটা-চলার সময় ধাক্কা লাগা, ক্লাসে বোর্ডের লেখা দেখতে না পাওয়া, কোনো কিছু দেখার সময় চোখ ছোট করে দেখা, চোখ বাঁকাটেরা দেখা যাওয়া ইত্যাদি। চশমা দিয়ে সহজেই চোখের দৃষ্টি ত্রুটির চিকিৎসা করা যায়। চশমা ব্যবহার করলে স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরে আসে। স্কুলে ভর্তির আগে শিশুর চোখ পরীক্ষা করা দরকার।
বাঁকাটেরা চোখ: সামনের দিকে তাকানোর সময় চোখের মণি সোজাসুজি না থাকলে তাকে বাঁকাটেরা চোখ বলে। বেশির ভাগ টেরা চোখের কারণ জন্মগত। চোখের মাংসপেশি দুর্বল হলেও চোখ টেরা হতে পারে। শিশুদের সঠিক সময়ে চশমা না দিলে অনেক সময় চোখ টেরা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে চোখের ছানি, টিউমার ও আঘাতজনিত কারণেও শিশুর চোখ টেরা হতে পারে। চোখ টেরা অবস্থায় থাকলে দৃষ্টি কমে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিলে এটা সারিয়ে তোলা সম্ভব। বয়স বেশি হয়ে গেলে চিকিৎসায় তেমন ভালো ফল পাওয়া যায় না।
শিশু অবস্থায় চশমা দিয়ে বা ওষুধ দিয়ে অনেক টেরা চোখের চিকিৎসা করা হয়। কখনো কখনো ভালো চোখে পট্টি দিয়ে টেরা চোখটি সোজা করতে চেষ্টা করা হয়। এতেও উন্নতি না হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখ সোজা করা হয়। মনে রাখবেন টেরা চোখ আসলে ভালো নয়। এমনকি লক্ষ্মী টেরাও ভালো নয়, সময়মতো চিকিৎসা না করালে টেরা চোখে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়। এমনকি শিশু অন্ধও হয়ে যেতে পারে।
ছানি: শিশুদেরও চোখে ছানি রোগ হতে পারে। জন্মগত বা আঘাতজনিত কারণে শিশুর ছানি রোগ হয়। শিশুর চোখের মণি সাদা হয়ে গেলে সাধারণত চোখের ছানি বলে ধারণা করা হয়। সাদা মণি ছাড়াও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন সহজভাবে কোনো কিছু না দেখা, টেরা চোখ, চোখের অস্বাভাবিক নড়াচড়া ইত্যাদি। একমাত্র অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেই ছানিজনিত অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
চোখের আঘাত: চোখের আঘাত শিশুদের অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। চুন, ধারালো জিনিস যেমন ছুরি, কাঁচি, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ইত্যাদি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখবেন। চোখের আঘাতে টোটকা চিকিৎসা নেওয়া ঠিক নয়।
পুষ্টিজনিত অন্ধত্ব: বর্তমানে বাংলাদেশে শিশু অন্ধত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব। অথচ আমাদের আশপাশে ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত খাবার খুব সহজলভ্য। একটু সচেতন হলে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবজনিত অন্ধত্ব সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। শিশুরা যখন রাতে কম আলোতে কিছু দেখতে পায় না, তখন তাকে ‘রাতকানা’ বলে, যা ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবের প্রথম উপসর্গ। এ অবস্থায় শিশুরা রাতে বাইরে যেতে চায় না। নিশ্চুপ ঘরের ভেতর বসে থাকে। শিশুদের চঞ্চলতা কমে যায়।
ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব বেশি দিন চলতে থাকলে চোখের মণির দুপাশে সাদা অংশের ওপর অক্ষিঝিল্লি শুকিয়ে ক্রমান্বয়ে কর্নিয়া শুকিয়ে যায় এবং ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব আরও বেড়ে গেলে কর্নিয়ায় ঘা ক্রমশ দ্রবীভূত হয়ে অন্ধ হয়ে যায়। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব দূর করতে জন্মের পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খেতে দিন, ছয় মাস বয়সের পর শিশুকে চাল, ডাল, শাক-সবজি, মাংস, তেল দিয়ে রেঁধে খেতে দিন, শিশুকে নিয়মিত টিকা দিন, ছয় বছর পর্যন্ত ছয় মাস অন্তর ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ান।
মনে রাখবেন প্রতি মিনিটে একটি শিশু দৃষ্টিহীন হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার শিশু অন্ধ। অজ্ঞতা বা সুযোগের অভাবে প্রতিবছর হাজারো শিশু অন্ধ হয়। সময়মতো চিকিৎসা করে এ অন্ধত্বের প্রতিরোধ করা সম্ভব।
টি/আ
CLTD: Womenscorner