শিশু ইন্টারনেটে আসক্ত? শিশুর ইন্টারনেটে আসক্তি প্রতিরোধে করণীয়!

বর্তমানে অনেক শিশুকেই দেখা যায়, মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটে ভীষণভাবে আসক্ত। শিশুদের মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্তি একটি কঠিন অবস্থার সামনে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের। এ থেকে মুক্তি পেতে করণীয় কী? এ বিষয়ে  কথা বলেছেন ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : যেসব বাচ্চা এরই মধ্যে আসক্ত হয়ে গেছে, তাদের কীভাবে পেছানো যায়?

উত্তর : যেকোনো আসক্তির ক্ষেত্রে শেষ কথা হলো, এখান থেকে তাকে বিরত রাখতে হবে। মাদকাসক্ত হলে যেটা হয়, তার শারীরিক কিছু পরিবর্তনের কারণে হাসপাতালে রাখতে হয়, ওই শারীরিক সমস্যাটা যেন বড় কোনো সমস্যা না করে, সে জন্য কিছু ওষুধ দিতে হয় বা বদলাতে হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কথা হলো, তাকে এখান থেকে বের হতে হবে। এখান থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। এটা ধীরে ধীরেও করতে পারেন, হঠাৎ করেও করতে পারেন। দুই ধরনের হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে করলে যেটি হয়, অনেক সময় আবার চলে আসতে পারে।

একটু সুযোগ পাওয়ার কারণে চলে আসতে পারে। এখন হঠাৎ করলে কী হবে? একটু প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তার মেজাজ খারাপ হবে, একটু মন খারাপ হবে। শারীরিক একটু সমস্যাও হতে পারে। ঘুমের সমস্যা হতে পারে। হঠাৎ করে ক্ষেপে যেতে পারে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পরিবারের সবার সঙ্গে হয়তো যোগাযোগ কমে যেতে পারে। এ রকম হতে পারে। তবে এটি আপনাকে সহ্য করতে হবে। যেকোনো অভ্যস্ততা পরিবর্তন করতে গেলে বাচ্চারা তো অত বেশি বুঝবে না। ওই সময় হয়তো পরিবারের লোকগুলোতে কঠিন মনে হবে। তবে এটি করতেই হবে। শেষ পর্যন্ত উদ্দেশ্য হলো, এখান থেকে এটাকে সরাতে হবে। বইপত্রে বলা হয়, যেকোনো আসক্তি ছাড়ানোর জন্য অন্তত এক মাস লাগবে। তবে এর বাইরেও আরো সময় লাগতে পারে।

কেউ কেউ মাদকাসক্তের কথা বলে যে তিন বছর পর্যন্ত ফলোআপ করা লাগে। এখানেও কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফলোআপ করতে হবে। দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত উদ্দেশ্য হলো, এখান থেকে তাকে সরাতে হবে।

যেকোনো আসক্তি যদি ২০ বছর পরেও আসে, তাহলে পূর্ণ মাত্রায় চলে আসতে পারে। আপনি যদি আস্তে আস্তে করতে চান, তাহলে ওই ঝুঁকিটাও রয়েছে। সুতরাং আমার কথা হলো, প্রথমেই তাকে খেয়াল করা, আমি তাকে কতটুকু আসক্ত করে দিচ্ছি।

দুই নম্বর হলো যদি হয়ে যায়, একে সীমিত করা সম্ভব কি না। প্রথমেই তাকে খেয়াল করা যে আমরা তাকে কতটুকু আসক্ত করে দিচ্ছি। দুই নম্বর হলো যদি হয়ে যায়, তাকে সীমাবদ্ধ করা সম্ভব কি না। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাখা সম্ভব কি না। যদিও যেকোনো নেশা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাখা কঠিন হয়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট বাহানায় যখন একটি নির্দিষ্ট কথা বলেও চাওয়া শুরু করে, এটি কিন্তু একটি ক্ষতিকর লক্ষণ। তার মানে সে আস্তে আস্তে আসক্তির দিকে যাচ্ছে। তৃতীয় কথা হলো, এরা একটি পর্যায়ে গিয়ে পরিবারের নিয়ম আর মানতে চায় না।

আরেকটি বিষয় হলো, বেশিরভাগ মা-বাবা যেহেতু এসব ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন না, তখন ছেলেমেয়েরা প্রায়ই বলে তুমি কিছু বুঝতে পারো না। এটা আরেকটি খারাপ জিনিস। আমি একটু শক্তভাবে বইপত্রের বাইরেও কথা বলব, মা-বাবা অনেক সময় অনেক কিছু নাও বুঝতে পারে। আমার ছেলেমেয়ে কতটুকু করবে, সেটা আমিই ঠিক করব। অনেকে বলবে, স্বাধীনতা নেই, মতামত নেই। তবে স্বাধীনতা, মতামত সবকিছুতে দেওয়া যায় না। আগে আমি নির্ধারণ করব যে কী করবে, এর পর তার স্বাধীনতা, তার মতামত। তার নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অভিভাবকদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নয়তো অভিভাবকত্ব বলে তো কিছু থাকে না। এই আসক্তির ক্ষেত্রে সেখানে যেহেতু তার নিয়ম ভাঙার একটি বিষয় থাকে, পারিবারিক আইন বা প্রথাগত আইন ভাঙার একটি আশঙ্কা থাকে। এখানে কিন্তু অভিভাবকত্ব ভাঙার চরম একটি আশঙ্কা থাকে।

যেকোনো আসক্তিই ক্ষতিকর। তেমনি ইন্টারনেটে আসক্তিও। শিশুর ইন্টারনেটে আসক্তি প্রতিরোধে করণীয় কী?

প্রশ্ন : যেসব শিশু এখন পর্যন্ত সেই আসক্তিতে যায়নি, তাদের মা-বাবার আসলে কী করা উচিত?

উত্তর : একটি পর্যায়ে হয়তো অভিভাবকরা ভাবতে পারেন বিষয়টি ঘটছে। আমরা যে আনন্দের জন্য কাজটি করতাম, মোবাইল দিয়ে দিলাম বা ডিভাইস দিয়ে দিলাম, সেটি নয়। প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে তাকে তার ইনভলভমেন্টটা (জড়ানোটা) কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। তাকে ক্ষতিকর বিষয়গুলো বোঝাতে হবে। তাহলে আসলে সে নিজেকে সরাতে পারবে। নিজেই যেন খারাপ-ভালোর সীমাটা বুঝতে পারে, সেভাবে গড়তে হবে।

Sharing is caring!

Comments are closed.