মা আর বেবির বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলার ৫টি টিপস।
বাবা মায়ের কাছে সন্তান অমূল্য ধন। একজন মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন হল সন্তান। সন্তান আর মায়ের সম্পর্ক জন্মের আগ থেকে শুরু হয় আর এটি পূর্ণতা পায় সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে। কিন্তু মায়ের কিছু ভুল আর অসাবধানতার কারণে সন্তানের সাথে মায়ের দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। এই দূরত্ব থেকে বাঁচতে সন্তানের সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে হবে জন্মের পর থেকে।
একটি সুন্দর সম্পর্ক শুধু সুস্থ মানসিক বিকাশে সহায়তা করে না,এটি শিশুর ভেতর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এমনকি শিশুর মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে মা শিশুর সুন্দর সম্পর্ক। কিছু কৌশলে মার সাথে শিশুর সম্পর্ক সুন্দর রাখা সম্ভব। আজ এমনি কিছু কৌশল সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো।
১। জন্মের আগ থেকে ভালোবাসুন
সন্তান জন্মের আগে আপনি যদি আপনার অনাগত শিশুর জন্য ভালোবাসা অনুভব করেন, তাতে অবাক হবেন না। আপনার সন্তান কিন্তু আপনার ভিতরে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে। তাই শিশুকে দেখার আগে তার জন্য ভালোবাসা অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। এই বিষয়ে মজার এক তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, গর্ভবতী মহিলাদের ডিলিভারের তারিখ যতই কাছে আসতে থাকে ততই তার মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন নামক হরমোন তৈরি করে, যা সন্তানের সাথে মায়ের সম্পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
২। ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করুন
সন্তানের সাথে মায়ের সম্পর্ক জন্মের আগ থেকে শুরু হয়। কিন্তু এই সম্পর্কটি দায়িত্ব পালনের না হয়ে ভালোবাসার সম্পর্ক হিসেবে গড়ে তুলুন। শিশুর সাথে খেলাধুলা করুন, গল্প করুন।শিশুদের মত চিন্তা করার চেষ্টা করুন। এতে আপনি আপনার শিশুর পছন্দ, অপছন্দ , ভালো লাগা খারাপ লাগা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।
৩। শিশুর ইঙ্গিত বোঝার চেষ্টা করুন
শিশুর প্রয়োজন বুঝতে পারা সহজ কোন বিষয় নয়। ভিন্ন ভিন্ন শিশুর প্রয়োজন প্রকাশের ইঙ্গিত ভিন্ন ভিন্ন রকম। আপনার শিশুর প্রকাশ ভঙ্গিটি খুঁজে বের করুন। শিশুর মুখের এবং শরীরে ভঙ্গির দিকে খেয়াল রাখুন। আপনার কন্ঠস্বর শুনলে সে কি হাত পা ছুড়ে ফেলে নাকি খুশি উঠে সে দিকে লক্ষ্য করুন। শিশুর কান্নার ধরণ বোঝার চেষ্টা করুন। শিশুর ক্ষুধা লাগলে কিছুটা তীক্ষ্ণ স্বরে একনাগাড়ে কান্না করে যা অন্য কারণে কান্না থেকে পার্থক্য হয়।আপনার শিশু আপনার কোন ভঙ্গিটি পছন্দ করে তা খুঁজে বের করুন। আপনার কোল তার পছন্দ নাকি তাকে নিয়া হাঁটা পছন্দ সেটি খুঁজে বের করুন। তার পছন্দের কাজটি বার বার করুন, এতে আপনার সাথে তার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
৪। কথা বলুন, হাসুন এবং খেলা করুন
শিশু যত ছোট হোক না কেন, তার সাথে কথা বলুন। তার সাথে মজা করুন, খেলা করুন, হাসুন এই কাজগুলো শিশুকে আপনার অস্তিত্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। শিশুরা কথা বলতে না পারলেও আপনার প্রতিটি কথা সে বুঝতে পারে। আপনার কণ্ঠস্বর, শারীরিক ভাষা আপনাকে অন্যদের কাছে থেকে আলাদা করে তুলবে।
৫। নিজে শিশুকে খাওয়ান
অনেক মায়েরা বিশেষত কর্মজীবী মহিলারা শিশুকে খাওয়ানোর দায়িত্ব অন্য কারোর কাছে দিয়ে থাকেন। অথচ খাওয়ানো এবং ঘুম পাড়ানোর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি শিশুর সংস্পর্শে আসতে পারেন একজন মা। তাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও শিশুর জন্য সময় বের করুন।
আদরের সন্তানের সাথে সুন্দর একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে জেনে নিন আরও কিছু বিষয়।
- ছোট শিশুরা অনেক সময় গান, মিউজিক পছন্দ করে। শিশুর সাথে তার পছন্দের গান নিয়ে নেচে উঠুন কিংবা দোল খাওয়ান হাওয়ার মধ্যে। এতে শিশু আনন্দ পাবে।
- সন্তানের প্রতি কোন কারণে অনীহা থাকে, তা মন থেকে দূর করুন। ছেলে হোক অথবা মেয়ে এটি আপনার নিজের সন্তান। তাই সন্তানের প্রতি বিদ্বেষ ভুলে তাকে বুকে তুলে নিন।
- শিশুর সাথে ধীরে ধীরে কথা বলুন। ঘুম পাড়ানোর সময় ছড়া বা গান গাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এতে শিশুর সাথে আপনার একটি নিবিড়সম্পর্ক তৈরি হবে।
- কখন বাচ্চাকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। তার যখন ক্ষুধা পাবে সে নিজে থেকে আপনাকে জানান দিবে।
- ছোট শিশুকে আলাদা ঘুম পারাবেন না। এতে সন্তান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকে। আপনার এবং আপনার সন্তানের বাবার মাঝখানে সন্তানকে ঘুম পাড়ান।
সন্তানের সাথে সুন্দর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন অসীম ধৈর্য্য এবং ভালোবাসার। সন্তান জন্মের পর প্রথম কয়েকটি মাস অন্যরকম হয়, আপনার দৈন্দদিন জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে। এই পরির্তনকে মেনে নিন। মনে রাখবেন আপনার ছোট একটি উদাসীনতা তৈরি করে দিতে পারে সন্তানের সাথে সারাজীবনের জন্য দূরত্ব।