শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ানো কি ঠিক?
প্রশ্ন : শিশুদের খাবারদাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। এখনকার বাবা মায়েদের প্রধান সমস্যাই থাকে বাচ্চাটি খেতে চাচ্ছে না। শিশুদের খাবার-দাবারের মান ও পরিমাণ কী রকম হওয়া উচিত?
উত্তর : শিশুদের খাবার-দাবার তো একটি সাধারণ জিনিস। তবে বাবা-মারা আসলে বিষয়টিকে অনেক জটিল করে তোলেন। আমরাও এটাকে জটিল করে ফেলেছি, আর এটা নিয়ে যখন আলোচনা হয়,সেটা আরো জটিল থেকে জটিলতর হয়। একে খুব সহজ কেন বলছি, দেখুন, একটি বাচ্চার যেসব চাহিদা আছে, চাহিদাগুলোর ভিতরে খাবার একটি বিষয়। পৃথিবীতে যত প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে,খাবারের জন্যই তারা একটি গতির মধ্যে আছে।
একটি বাচ্চা যখন ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কান্নাকাটি করে, তখনই যদি আপনি তার মুখের কাছে আঙুল নিয়ে যান আপনি দেখবেন,যে বাচ্চাটা হা করছে। সে খেতে চাচ্ছে।
মানে তার চাহিদা আছে। তো কী খাবার দেবেন, বুকের দুধ। শুধু একটাই জিনিস সেটি হলো মায়ের দুধ। আমরা যদি একে নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আপনি বুঝবেন, নিশ্চিত হবেন যে এই বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও অনেক ধরনের রোগব্যধি থেকে সে মুক্ত হবে। অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে যদি আপনি বিষয়টি মানুষের মধ্যে দিতে পারেন, তাহলে শিশুর মানসিক বিকাশ ভালো হবেই। যেসব সমস্যাতে আমরা প্রতিনিয়ত ভুগছি, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা থেকে সে মুক্ত থাকবে। কোনো বাচ্চা যদি শুধু মায়ের দুধ জীবনের প্রথম দিন থেকে শুরু করে, মা যদি বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে এই বাচ্চার ভবিষৎ খুব ভালো। যখন তার ছয় মাস বয়স শেষ হয়ে গেল, মা বাবারা প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে বলে ডাক্তার সাহেব এর তো এখন ছয় মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, মায়ের দুধে তো এখন পেট ভরবে না, এখন আমি অন্য একটি দুধ দেই? অন্য দুধ দিতে চাওয়াটাই ধারণাগত ভুল, এটা ক্ষতিকর।
বাচ্চার যখন ছয় মাস হয়ে গেল, তখন মায়ের দুধ তার জন্য অপর্যাপ্ত। এটাই নিয়ম। তার অর্থ এই নয় যে অন্য একটি দুধ দেবেন। আপনি অন্য একটি দুধ কোথা থেকে দেবেন? আপনাকে তখন বাজার থেকে বাণিজ্যিক দুধ দিতে হবে। টিনের মধ্যে, প্যাকেটের মধ্যে যে দুধ আছে সেটি আনতে হবে। নয়তো কোনো জায়গায় থেকে গরুর দুধ আনতে হবে, নয়তো ছাগলের দুধ আনতে হবে। কিছু একটি আনতে হবে। এগুলোর একটি জিনিসও বাচ্চার বৃদ্ধির জন্য ভালো নয়। বিশেষ করে গরুর দুধ। এর মধ্যে যে প্রোটিন বা আমিষ থাকে সেটা মায়ের দুধের প্রোটিন থেকে কয়েকগুণ শক্ত। এটি ছোট বাচ্চার পক্ষে হজম করা সম্ভব হয় না।
প্রশ্ন : তাহলে মায়েদের একটি প্রশ্ন থাকে এই গরুর দুধ কখন থেকে খাওয়ানো প্রয়োজন?
উত্তর : এজন্য বাচ্চাটির পর্যাপ্ত পরিপক্বতা দরকার। সেই পরিপক্বতা হওয়ার পর আমরা গরুর দুধ দেব। এত তাড়াতাড়ি নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাঁদের পরামর্শ, দুই বছরের পর থেকে সীমিত পর্যায়ে গরুর দুধ খাওয়ানো যাবে। এটা কিন্তু প্রধান খাবার নয়।
অনেক মায়ের কাছে আমি জিজ্ঞেস করি, আপনার বাচ্চা কী খায়? বলে, দুই ঘণ্টা তিন ঘণ্টা পর সাত আটবার করে দুধ খাচ্ছে। তাতে কী হচ্ছে? এই দুধই সে খাচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারগুলো সেগুলো সে পাচ্ছে না।প্রশ্ন : ছয় মাস পর থেকে কোন খাবারটি দিয়ে তাহলে খাবার শুরু করতে হবে?
উত্তর : আমি একটু আগে বলছিলাম যে মায়ের দুধ খেতে হবে। আর ছয় মাস পরের থেকে যে খাবারটি দেওয়া হবে সেটা বাড়িরই খাবার হবে। কারণ,ওই বাচ্চাটিকে বড় হতে হবে বাড়ির খাবার খেয়ে। এই পর্যন্ত কোনো গবেষণায় আসেনি যে বাড়ির বাইরের খাবার খেয়ে বাচ্চা বড় হয়েছে।
প্রশ্ন : এই যে সুজি বা অন্য কোনো বিষয়- এগুলো সম্বন্ধে বলুন।
উত্তর : এগুলো খুবই ঝামেলার জিনিস। এগুলো খুব প্রয়োজনীয় কিছু নয়। আমরা দিব তবে একটি উপাদানের দিকে যদি আমরা বেশি ঝুঁকে যাই,তাহলে সমস্যা। অনেক বাচ্চা সারাদিন কেবল সুজিই খায়। অনেক বাচ্চা সারাদিন কেবল বাণিজ্যিক যে শিশু খাদ্য বাজারে রয়েছে সেগুলো খায়। এটাও ঠিক নয়।
প্রশ্ন : শিশুদের যে খিচুরি দেওয়া হয় সেটি কতখানি প্রয়োজনীয়?
উত্তর : আমরা যে খিচুরিটা তৈরি করি সেখানে ভাত আছে, ডাল আছে, চাল আছে, সবজি, মাছ, অথবা মাংস আছে, তেল আছে। তাহলে যেসব উপাদান প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরের জন্য দরকার, তার প্রতিটি একসাথে দিয়ে একটি মিশ্রিত খাবার তৈরি করি। এটা নরম করে তৈরি করা হয় যাতে একসাথে সব উপাদান চলে আসে। তবে এর অর্থ এই নয় যে বাচ্চাকে এটা খাওয়াতেই হবে। কোনো বাচ্চা যদি এটা খেতে না চায় তাহলে আমরা আলাদা আলাদাভাবে দিতে পারি।
কিন্তু একটি ছোট বাচ্চার জন্য আলাদা আলাদা খাবার দেওয়া খুব জটিল হয়ে যায়। সেজন্যই শিশুদের খিচুরি দেওয়া হয়।