ঈদ-জার্নির প্রস্তুতিঃ মা ও শিশুকে নিরাপদ রাখার টিপস

ঈদের খুশির একটা আলাদা শক্তি আছে। তা না হলে বাড়ি যাবার আগাম টিকেট পাবার জন্য ৬ ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরেও ক্লান্তির বদলে সবার চেহারায় দেখি আগ্রহ।

স্টেশনে এসে শিডিউলহীন বাস-ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকা মানুষের মধ্যে রাগ-বিরক্তির বদলে দেখি আনন্দ। ৫ ঘন্টার পথ ১৫ ঘণ্টায় পাড়ি দেবার পড়েও পরিচিতরদের ফোন করে উচ্ছসিত কন্ঠে জানায়, “বাড়ি পৌঁছে গেছি!”

সত্যিই তো। বন্ধুবান্ধব আর আত্নীয়স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত না হলে, ঈদের আনন্দই তো মাটি। তাই মনে হয় ঈদের জার্নির এত ধকল আমাদের কাছে কিছুই মনে হয়না।

কিন্তু, গর্ভবতী মা এবং বাচ্চাদের জন্য এত ধকল কি সহ্য হবে? তাই কিছু পূর্ব প্রস্তুতির দরকার, যাতে ঈদে বাড়ি যাবার এই লম্বা জার্নি তারাও নিরাপদে এবং সহজে করতে পারে।

আজকে আমরা আপনাদের জানাব লম্বা জার্নির আগে কীভাবে মা ও বাচ্চাকে তৈরি করবেন।

মা আর ছোট বাচ্চাদের লং জার্নি নিরাপদ ও আরামদায়ক করার জন্য ৫টি টিপস

 

১)নিরাপদ ও আরামদায়ক মাধ্যম বেছে নিন

লং জার্নি আসলে আর লং থাকেনা যদি আকাশপথে যাতায়াত করেন। বিমানে যাতায়াত দ্রুত, আরামদায়ক, এবং অন্য মাধ্যমের তুলনায় বেশি নিরাপদ, খরচা একটু বেশি এই যা। ছোট বাচ্চা এবং মায়ের ভালর জন্য সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই আপনার এটা বেছে নেয়া উচিৎ।

তবে সব এলাকায় তো আর এয়ারপোর্ট নেই, তাই এর পরের নিরাপদতম উপায় হচ্ছে ট্রেন।যদিও টিকেট ম্যানেজ করা অনেক কঠিন, কিন্তু সবাই তো করছে! এছাড়া সড়ক অথবা নৌপথ বেছে নিতে পারেন আপনার দেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুযায়ী। এখন বিলাসবহুল বাস এবং লঞ্চ সবই চালু হয়ে গেছে আমাদের দেশে। তবে কোন অবস্থাতেই লঞ্চ-এর অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে যাতায়াত করবেন না।

২) বাচ্চার বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন

বাচ্চার বয়স বুঝে খেলনা, রুপকথার বই, স্মার্টফোন ইত্যাদি সাথে নিন। তবে কিছু নতুনত্ব যেন থাকে। অর্থাৎ, বাচ্চার প্রিয় পুরনো জিনিসের পাশা পাশি নতুন একদুটি খেলনা, গল্পের বই ইত্যাদি। ফোনে করে নিয়ে নিন বাচ্চাদের কিছু মুভি অথবা গেম ইত্যাদি।

এতে করে বাচ্চার মনোযোগ থাকবে তার আনন্দ-ফুর্তির দিকেই, আপনাকে বিরক্তও কম করবে, আর জার্নির ধকলটাও কম ফিল করবে।

৩) বাচ্চার সুস্থ্য রাখার জন্য সাথে নিন এই সবঃ

আবহাওয়ার প্রভাব এবং জার্নির লেংথের কারণে বাচ্চারা সহজেই কাহিল হয়ে যেতে পারে। তাই আগে থেকেই আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন রোদ-ধুলা এড়ানোর জন্য ঠিক জানালার পাশের সিটে বাচ্চাকে দেবেন না, যাত্রাপথের জন্য আবহাওয়া বুঝে এক্সট্রা কাপড় নিয়ে নিন। বাচ্চা ছোট হলে উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং লিকেজপ্রুফ ডায়াপার যেমন সুপারমম বেবি ডায়াপার সাথে নিয়ে নিন।

বাচ্চার ঘুমানোর টাইম হলে তাকে সানগ্লাস পড়িয়ে দিন যাতে চোখে আলো কম লাগে এবং দ্রুত ঘুমিয়ে যায়। গরমের দিনে জার্নি করছেন তাই দরকার হলে হাতপাখা সাথে নিয়ে নিন। আর বাচ্চাকে বার বার অল্প করে পানি খাওয়াতে থাকবেন, যাতে ডিহাইড্রেটেড না হয়ে পড়ে।

৪) সাথে ক্যারি করুন প্রয়োজনীয় খাবারঃ

ছোট বাচ্চার জন্য সেরেয়াল, ইনফ্যান্ট ফর্মুলা, পানির ফ্লাস্ক, এবং ফিডিং বটল ইত্যাদি সাথে করে নিয়ে নিন। আপনার বাচ্চা যদি বড়দের খাবার খাওয়ার মত বয়সের হয়ে থাকে তবে ওর এবং আপনাদের জন্য ক্যারি করুন শুকনা খাবার যেমন বিস্কিট, চিপ্স, ফলমূল, খাবার পানি ইত্যাদি।

যাত্রাপথে রাত অথবা দুপরের খাবারের দরকার হলে ভাল রেস্টুরেন্ট দেখেশুনে খাবেন। এবং খাবার আগে অবশ্যই হাত ভালভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেবেন। পথে পানি শেষ হয়ে যাবারই কথা, তখন ভাল ব্র্যান্ডের মিনারেল ওয়াটার বটল কিনে নেবেন।

৫)গর্ভবতী অবস্থায় ভ্রমণ সাবধানতাঃ

গর্ভাবস্থায় প্রথম এবং শেষ তিনমাস জার্নি করা অনেক ঝুকিপূর্ণ। এছাড়াও ভ্রমণ কতটা নিরাপদ তা নির্ভর করছে আপনি কিসে ভ্রমণ করছেন এবং কতক্ষণ। গর্ভবতী হয়ে থাকলে দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য বিমান, রেল, অথবা বিলাসবহুল লঞ্চ বেছে নিন।

সড়কপথের ঝাকুনিতে আপনি আঘাত পেতে পারেন, তাই বাসে করে যাওয়া আমরা রেকমেণ্ড করতে পারছিনা। এছারাও বাসে দীর্ঘক্ষণ একজায়গায় বসে থেকে আপনার অস্বস্তিবোধ, অথবা বমিভাব ইত্যাদি অনেক বেশী হতে পারে।

সাবধানে চলা এবং নিজের প্রয়োজন মতো বিরতি নিয়ে চলার জন্য অনেকেই নিজের অথবা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে ঈদে যাতায়াত করেন। তবে এটিও পুরোপুরি ঝুকিমুক্ত তা বলা যায়না।

আপনার এবং গর্ভের শিশুর নিরাপত্তার জন্য ভ্রমণ করার আগে অবশ্যই আপনার গাইনোকলজিস্ট-এর সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

ব্যাগ গুছানোর সময় এই ১২টি জিনিস ভুলবেন না

লিখতে লিখতেই মনে হচ্ছিল, অনেক কিছুর কথা হয়ত পড়তে পড়তেই ভুলে যাবেন। তাই জার্নি নিরাপদ ও সহনীয় করার জন্য জরুরি এই জিনিসগুলো ব্যাগে গুছিয়ে নিন।

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ডায়াপার
  • বাচ্চার কাঁথা-চাদর ইত্যাদি
  • আপনার এবং বাচ্চার সানগ্লাস
  • হাতপাখা
  • নতুন এবং পুরনো মিলিয়ে কিছু খেলনা, রুপকথার বই, স্মার্টফোন গেইম/মুভি ইত্যাদি
  • বাচ্চার খাবার (সেরেয়াল, ইনফ্যান্ট ফর্মুলা) এবং সরঞ্জাম (ফ্লাস্ক, বটল, ইত্যাদি)
  • শুকনো খাবার (বিস্কিট, চিপস), ফলমুল, এবং খাবার পানি (পথে কিনতে পারেন)
  • কিছু খালি প্লাস্টিক ব্যাগ (ময়লা ফেলার জন্য, বা বমির জন্য)
  • বাচ্চার ওষুধ
  • যাত্রা পথের জন্য বাচ্চার এক্সট্রা কয়েক সেট কাপড় (আরামদায়ক)
  • বেবি ক্যারিয়ার, স্ট্রলার, ইত্যাদি (যদি থাকে এবং নেয়া সম্ভব হয়)
  • ফার্স্ট-এইড বক্স (বড় ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়, অথবা কি লাগবে ইন্টারনেটে দেখে নিজেও করে নিতে পারেন)

শুভ এবং নিরাপদ হোক আপনার ঈদের জার্নি

শুরুতেই বলেছিলাম, জার্নির কষ্ট ঈদের আনন্দের কাছে কিছুই না। তবে গর্ভবতী মা এবং বাচ্চাদের জন্য জার্নি টা নিরাপদ এবং সহনীয় হতেই হবে। দেখলেন তো, কিছু জিনিস আগে থেকে প্ল্যান করে আপনি ঈদের জার্নির জন্য রেডি হয়ে নিতে পারেন।

আশা করছি টিপস গুলো আপনাদের কাজে লাগবে। আর আপনাদের মাঝে কারো যদি আরো কিছু টিপস দেবার থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুন, এতে সব মায়েরাই আপনার কাছ থেকে উপকৃত হবেন।

CLTD# SuperMom

Sharing is caring!

Comments are closed.