গরমে শিশুর খাদ্য যেমন হওয়া উচিত

এই গরমে যে কোনো খাবারে অরুচি আসতেই পারে। তার উপর অসুখ তো আছেই। তাই এই সময় শিশুকে কী খাওয়ানো উচিত তা নিয়ে বাবা-মায়ের চিন্তা থেকেই যায়।

গরমে শিশুর সঠিক খাবার বাংলাদেশ গার্হস্থ্যঅর্থনীতি কলেজের ‘শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা বাসার বলেন, “গরমে শিশুর খাদ্য হওয়া উচিত সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত।”

তিনি আরও বলেন, “সহজপাচ্য বলতে সহজে হজম হয় এমন খাবার বোঝায়। গরমে শিশুর খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকা জরুরি। পানি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে ফলমূল থাকা আবশ্যক।”

জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুকাল ধরা হয়। এই সময়েই শিশু সবচেয়ে দ্রুত বড় হয়। তাই প্রতি একক ওজনের জন্য পুষ্টির চাহিদাও বাড়তে থাকে।

এই সকল চাহিদা পূরনের জন্য দেহ গঠনকারী খাদ্য উপাদান যেমন- প্রোটিন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ইত্যাদি সঠিক পরিমাণে শিশুর খাবারের তালিকায় থাকা জরুরি।

শিশুকালের বিভিন্ন পর্যায়ে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রকমের খাবার দেওয়া প্রয়োজন।

এই প্রসঙ্গে রুমানা বাসার বলেন, “জন্ম থেকে ছয় মাস— শিশু মায়ের দুধ পান করে থাকে। তাই এই সময়ে মাকে সহজপাচ্য ও পানি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যাতে শিশু পর্যাপ্ত পানি পায়। মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করা গেলে শিশুর চাহিদাও পূরণ হবে।”

তিনি আরও জানান, সুস্থ শিশুর ওজন ছয় মাসে তার জন্মের সময়ের ওজনের দ্বিগুন ও এক বছরের মধ্যে তিনগুন হয় এবং তার উচ্চতা বাড়ে নয় থেকে ১০ ইঞ্চি। এই সময়ে শিশু মায়ের দুধের পাশাপাশি বাইরের খাবার খেতে দিতে হবে।

বিশেষ করে এই গরমে পুরানো ও বেশি মসলাযুক্ত খাবার শিশুকে দেওয়া যাবে না। দিনে এক থেকে দুইবার যেকোনো ফলের জুস খেতে দিতে হবে। তাছাড়া অবশ্যই দিনে একটি ডিম ও একগ্লাস দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে মৌসুমি ফল যেমন- আম, তরমুজ, পেঁপে, কলা ইত্যাদি দিতে হবে। এতে করে শিশু গরমে প্রয়োজনীয় ফাইবার, পানি, ক্যালরি, আয়রন, ভিটামিন ইত্যাদি উপাদান পাবে ।

দুই বছর থেকে পাঁচবছর— এই বয়সে শিশুরা বেশি দুরন্ত ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই সময় তাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। তাই প্রতিদিনের খাবারের পাশাপাশি বারবার তাদের ফলের রস, স্যালাইন ও গ্লুকোজ দিতে হবে।

দুধ ও ডিমের পাশাপাশি ফল খেতে দিতে হবে। এছাড়া তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি রাখতে হবে। প্রতিদিন একই ধরনের খাবার খেলে একঘেয়েমি আসতে পারে আর এতে শিশুর খাওয়ায় অরুচিও আসতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাবারের বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন।
এজন্য সবজিকাটা ও রান্নার পদ্ধতিতে বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে। এই বয়সি শিশুদের ‘ফিঙ্গার ফুড’ যেমন- গাজরের টুকরা, মটরশুঁটি, গোল করে কাটা আলু ইত্যাদি খেতে দিতে হবে। এতে করে শিশুর হাতে তুলে খাওয়ার অভ্যাস হবে ও খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

গরমে শিশুর সঠিক যত্নের জন্য তাকে নিয়মিত গোসল, খাওয়া ও ঘুমানো প্রতিটি কাজ করতে হবে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী। যতটা সম্ভব শিশুদের ভাজাপোড়া ও তেল চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়াতে হবে।

Sharing is caring!

Comments are closed.