পিল না খেয়েও প্রেগনেন্সি আটকানোর ৯ টিপ্‌স

গর্ভনিরোধক পিল দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে। আবার ৭২-ঘণ্টা পিলও ঘনঘন খেতে থাকলে একটা সময় পর ওই পিল আর কাজ করে না। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্র অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। জেনে নিন পিল ছাড়া কীভাবে আটকাবেন গর্ভধারণ।

গর্ভনিরোধক পিলের বহু সাইড এফেক্ট রয়েছে। মাথার যন্ত্রণা, গা-বমি থেকে শুরু করে ঠিক সময়ে পিরিয়ড্‌স না হওয়া, মুড সুইং তো আছেই, তা ছাড়াও একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন এই পিল খেলে গর্ভাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ইনস্ট্যান্ট পিলগুলি বেশি খেলে একটা সময় পর তা আর কাজ করে না।

নিয়মিত পিল খাওয়া ছাড়াও আরও বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে গর্ভধারণ এড়ানো সম্ভব। নীচে রইল তেমনই ৯টির কথা

১) পিরিয়ডে কন্ডোম

মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন অনেকেই কন্ডোম ব্যবহার না করেই সেক্স করেন। কারণ প্রচলিত ধারণা হল, মাসের ওই সময়টিতে গর্ভধারণের কোনও সম্ভাবনা নেই। আদতে কিন্তু সম্ভাবনা একটা থেকেই যায়। তা ছাড়া পিরিয়ডের সময়ে কন্ডোম ছাড়া সেক্স করলে নানা ধরনের ইনফেকশনও হতে পারে পুরুষাঙ্গে।

২) উইথড্রয়ালের ঝুঁকি

ইজ্যাকুলেশনের আগে পুরুষাঙ্গ যোনির ভিতর থেকে বের করে নেওয়াকেই মনে‌ করা হয় গর্ভধারণ এড়িয়ে চলার সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি। কিন্তু এতেও সম্ভাবনা থেকেই যায় কারণ ইজ্যাকুলেশনের আগে পুরুষাঙ্গ থেকে যে রস নিঃসৃত হয়, তার মধ্যে অনেক সময় স্পার্ম থেকে যায়। তা ছাড়া সম্পূর্ণ উইথড্র করার আগেই ইজ্যাকুলেশন শুরু হয়ে যেতে পারে। ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল।

৩) হাত নয়

প্রি-ইজাকুলেশন নিঃসরণের পর যদি পুরুষাঙ্গে হাত দিয়ে থাকলে, একটি টিস্যু পেপারে হাত মুছে তবেই কন্ডোম পরা উচিত। ওই নিঃসরণে স্পার্ম থাকতে পারে এবং কন্ডোমের বাইরের অংশে ওই নিঃসৃত রস যদি কোনওভাবে লেগে যায় তবে ইন্টারকোর্সের সময়ে কন্ডোম পরে থাকলেও গর্ভধারণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

৪) সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন

কন্ডোম না-পরা অবস্থায় পুরুষাঙ্গকে যোনির সংস্পর্শে আনা উচিত নয়। প্রি-ইজাকুলেশন নিঃসরণে স্পার্ম থাকার সম্ভাবনা থাকে। স্পার্ম হল এমনই এক ধরনের জীবকোষ যা নিঃসরণের পর ৫ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে এবং যোনিরসের সংস্পর্শে এলে সেই রসের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে যেতে পারে ডিম্বাশয়ে।

৫) গর্ভনিরোধক জেল

মেয়েদের জন্য বেশ কিছু গর্ভনিরোধক জেল বা ফোম রয়েছে। কন্ডোমের পাশাপাশি এগুলি ব্যবহার করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ এড়ানো সম্ভব। নজ্‌ল বা প্লাস্টিক অ্যাপ্লিকেটরে পাওয়া যায় এই ‘স্পার্মিসাইড’গুলি। ছোট ট্যাবলেটের মতো দেখতে এই অ্যাপ্লিকেটর ইন্টারকোর্সের অন্ততপক্ষে ৫ মিনিট আগে যোনির অনেকটা ভিতরে পুশ করতে হয়। শরীরী উত্তেজনার ফলে অ্যাপ্লিকেটরটি গলে গিয়ে জেলটি বেরিয়ে আসে ও একটি আবরণ তৈরি করে। স্পার্ম এই তরলের সংস্পর্শে এলে নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই এই ধরনের অ্যাপ্লিকেটর ব্যবহার করা উচিত। এর কোনও সাইড এফেক্ট নেই এবং এতে যৌন উত্তেজনা বা তৃপ্তিতে কোনও প্রভাব পড়ে না।

৬) গর্ভনিরোধক রিং

চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যদি যোনির ভিতরে গর্ভনিরোধক রিং স্থাপন করা যায় তবে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভধারণের কোনও সম্ভাবনা থাকে না। প্রতিটি পিরিয়ডের পর একটি করে নতুন রিং স্থাপন করতে হয়। ইন্টারকোর্সের সময় একটি বিশেষ হরমোন নিঃসৃত হয় এই রিংগুলি থেকে যা স্পার্মকে অক্ষম করে দেয়। এই রিং অনেকটা অ্যাপ্লিকেটরের মতোই। মেয়েরাই যোনির ভিতরে পুশ করতে পারেন।

৭) গর্ভনিরোধক ইঞ্জেকশন

ডিপো প্রোভেরা হল এমন একটি ইঞ্জেকশন যা গর্ভনিরোধক পিলের পরিবর্ত যা গর্ভনিরোধক হিসেবে ৯৯ শতাংশ কার্যকর। একটি ইঞ্জেকশন নিলে ৩ মাস পর্যন্ত গর্ভধারণ আটকানো যায় তবে এই ৩ মাসে পিরিয়ড্‌স হবে না। এই ইঞ্জেকশন নিতে হয় নিতম্বে বা বাহুতে।

৮) গর্ভনিরোধক প্যাচ

এটি পরতে হয় বাহুতে। ত্বকের রঙের এই প্যাচটি বিশেষ হরমোন নিঃসরণ ঘটায় যা ত্বকের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। একটি প্যাচ এক সপ্তাহ পর্যন্ত কাজ দেয়। একটি মাসের মধ্যে পিরিয়ড্‌সের সপ্তাহটি বাদ দিয়ে বাকি ৩ সপ্তাহ পরতে হয় এই প্যাচ। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই প্যাচ কখনোই পরা উচিত নয় কারণ এতে শরীরে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। একই রকম ভাবে কাজ করে গর্ভনিরোধক ইমপ্লান্ট। এটি বাহুতে সার্জারির মাধ্যমে লাগাতে হয়। একবার সার্জারির পর ৩ বছর গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না।

৯) আইইউডি

এটি হল এক ধরনের ডিভাইস যা ইউটেরাসে স্থাপন করতে হয়। ভারতে এটি কপার-টি নামেই বেশি পরিচিত। এর মধ্যেও একটি বিশেষ ধরনের হরমোন থাকে যা স্পার্ম নষ্ট করে দেয় ও গর্ভধারণ আটকায়। কপার-টি থাকলে পিরিয়ড্‌সের উপর কোনও প্রভাব পড়ে না।

গর্ভনিরোধক জেল, প্যাচ, ইঞ্জেকশন এবং আইইউডির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ আবশ্যিক।

Sharing is caring!

Comments are closed.