গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ হলে কি বাচ্চা নষ্ট হয়? ডা. আইরিন পারভীন আলম
প্রথম তিন মাসের রক্তক্ষরণের কারণ
* শতকরা ২০-৩০ ভাগ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এর মধ্যে অর্ধেকের বাচ্চার কোনো সমস্যা হয় না, পুরো গর্ভাবস্থা কাটিয়ে পূর্ণ সন্তান প্রসব করা হয়।
* বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রথম তিন মাসে রক্তক্ষরণের প্রধান কারণ। অনেক সময় অল্প রক্তক্ষরণ হয়; কিন্তু ঠিকমতো চিকিৎসা ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী থাকলে শেষ পর্যন্ত সন্তান প্রসব সম্ভব।
* একটোপিক প্রেগনেন্সি : জরাযু ছাড়া পেটের ভেতরে অন্য কোনো জায়গায় (যেমন টিউব, ডিম্বাশয়) যদি ভ্রƒণ স্থাপিত হয় তবে তাকে একটোপিক প্রেগনেন্সি বলে। মাসিক বন্ধ হওয়ার পর পেটে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে হালকা রক্তপাত এর প্রধান লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একটোপিক প্রেগনেন্সি কিনা তা জানা যায়।
* ইমপ্লেনটেশন রক্তপাত : বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছাড়াই কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে জরায়ুতে ভ্রƒণ স্থাপিত বা ইমপ্লেনটেশনের সময় রক্তপাত হতে পারে।
* আর কিছু কারণে প্রথম তিন মাসে মাসিকের রাস্তায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। তা হলোÑ মোলার প্রেগনেন্সি, যেখানে জরায়ুতে ভ্রƒণের পরিবর্তে টিউমার জাতীয় সমস্যা হয় এবং এ অবস্থায় রক্তক্ষরণের সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুরের থোকার মতো বের হয়।
তবে একটা ব্যাপার জেনে রাখা ভালো যে, যেসব ভ্রƒণের জন্মগত কোনো ত্রুটি থাকে, সাধারণত সেসব বাচ্চাই নষ্ট বা এবরশন হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে রক্তক্ষরণের কারণ
* এ সময়ে রক্তক্ষরণের প্রধান দুটি কারণের একটি হলো গর্ভফুল নিচে জরায়ুর মুখের কাছাকাছি থাকা, যাকে বলা হয় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, যাদের আগে জরায়ুতে কোনো ধরনের অপারেশন যেমনÑ ডিএনসি, সিজারিয়ান অপারেশন বা যাদের যমজ বাচ্চা হয় তাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
* অন্যটি হলো গর্ভফুল জরায়ুর স্বাভাবিক অবস্থা থেকে একটু আলগা হয়ে যাওয়া। বিভিন্ন কারণে এ রকম সমস্যা হতে পারে। যেমনÑ প্রেসার বেশি থাকা বা পেটে কোনো কারণে আঘাত পেলে এরকম হতে পারে।
* আরও একটা যে কারণে শেষের দিকে রক্তপাত হতে পারে তা হলো সময়ের আগেই যদি ডেলিভারির ব্যথা উঠে যায়। অনেক সময় জরায়ুর মুখের কোনো সমস্যার জন্য গর্ভাবস্থায় রক্ত যেতে পারে।
এ সময়ে করণীয় : প্রথম দিকে অল্প রক্ত গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম ও চিকিৎসা নিলে ভ্রƒণের অনেক সময় কোনো ক্ষতি হয় না আবার কিছু ক্ষেত্রে রক্ত যাওয়ার সঙ্গে বেশি পেট ব্যথা থাকলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রক্ত বেশি গেলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ অবস্থায় যে কোনো সময় রোগীর রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। তাই এ সময় রক্তের ডোনার রেডি রাখতে হবে। এ সময় পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে এবং ভারি কাজ করা, ভ্রমণ ও সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
ডা. আইরিন পারভীন আলম
প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা