বাচ্চাদের মাথা ন্যাড়া করলে চুল ঘন বা কালো হয়?
আমাদের মা দাদীরা মনে করেন চুল কামিয়ে বা ন্যাড়া করে ফেললে চুল ঘন বা কালো হয়ে গজায়। এই কারনেই বাবা মা থেকে শুরু করে প্রায় সবাই ছোট বয়সে বেশিরভাগ বাচ্চাদের মাথা ন্যাড়া করে দেন। তেমনি বড়দের ক্ষেত্রে চুল লালচে দেখাচ্ছে বা চুল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পড়ে যাচ্ছে এই রকম পরিস্থিতি হলে এই প্রবণতা দেখা যায়। এই ভুল ধারনা আমাদের বেশিরভাগের মধ্যেই বিদ্যমান। কিন্তু চুল ফেলে দিলে আসলেই কি ঘনভাবে চুল গজায়?
আসল সতিটা হলো চুল কামালে চুল ঘনভাবে গজায় না। মাথা ন্যাড়া করা চুল পড়া বন্ধ করে না বা কালোও করে না। আসলে এটি বংশগত একটি বিষয়। আমরা চুলগুলোকে গাছ হিসেবে কল্পনা করলে হেয়ার ফলিকলকে সেই গাছ উত্পন্ন হবার বীজ হিসেবে কল্পনা করতে পারি। একটি বীজ থেকে যেমন মাত্র একটি গাছ উত্পন্ন হওয়া সম্ভব, ঠিক তেমনি একটি হেয়ার ফলিকল থেকে মাত্র একটি চুলই উত্পন্ন হবে, কখনোই দুইটি নয়।
এই ফলিকলগুলো আরো নির্ধারন করে তাদের থেকে উত্পন্ন চুল সারা জীবনে মোট কতটুকু লম্বা, পুরু (মোটা নাকি পাতলা) ও কি রকমের (সোজা নাকি কোকড়া) হবে। অনেকের দেখা যায় জোয়ান বয়সে চুল হারিয়ে টাক মাথায় ঘুরে বেড়ান। তাদের হেয়ার ফলিকলগুলো ঐ পরিমাণ চুল উত্পন্ন করার পর আর চুল উত্পন্ন করতে পারে না। ফলে একটা নির্দিষ্ট বয়সে তাদের মাথায় জোর করেও আর চুল আনা সম্ভব হয় না।
চুল বা দাঁড়ি কাটার পর আমাদের মনে হয়, নতুন গজানো চুলদাঁড়িগুলো আগের তুলনায় একটু বেশি মোটা। এটা একেবারেই ভ্রান্ত ধারনা। একটি চুলকে একটি পেন্সিলের মাথার সাথে তুলনা করলেই এটা বোঝা যাবে। যদি কোন পেন্সিলের মাথা লিখতে গিয়ে হঠাৎ ভেঙ্গে যায়, তখন তা ভোতা দেখায় (অর্থাত্ মোটা দেখায়)। চুল হঠাত্ কাটলেও তা ঠিক একই অবস্থা হয়। অর্থাত্ ডগাগুলো আগের চিকন অবস্থার তুলনায় মোটা অবস্থায় থাকে। তবে অচিরেই তা আবার আগের চিকন অবস্থায় ফিরে আসে। চিন্তা করুন, সেই ভাঙ্গা পেন্সিল দিয়ে এক পৃষ্ঠা লেখার পর কি পেন্সিলের মাথা আগের মতই মোটা থাকে?
আমাদের মাথায় মোট কতগুলো হেয়ার ফলিকল থাকবে, তা আমাদের বাবা-মা ও দাদা-দাদী বা নানা-নানী অর্থাত্ বংশানুক্রমে নির্ধারিত হয়।অনেক সময় দেখা যায়, সদ্যোজাত বাচ্চাদের মাথার পেছনের দিকে চুল খুবই বর্নহীন ও পাতলা, যা নেই বললেই চলে। আর এটা দেখার পরে মা-বাবা সেই বাচ্চার মাথা ন্যাড়া করে দেন, যাতে চুল ঘন ও লম্বা হয়। জন্মের পর এই পাতলা চুলকে বলা হয় ভেলাস হেয়ার। এই চুল জন্মের ৩ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই পরিবর্তন হওয়া শুরু করে ও ২ বছরের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রাপ্তবয়স্ক চুল দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়।
আপনি যদি সত্যিই আপনার সন্তানের চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত ও গঠন সুগঠিত করতে চান, তবে আপনাকে নিয়মিত তার মাথা পরিষ্কার রাখতে হবে। চুলের গোড়ায় ময়লা জমে চুলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। তাই আমাদের সবার উচিত্, প্রতিদিন একবার শ্যাম্পু দিয়ে বাচ্চাদের চুল পরিস্কার করে দেয়া।চুল বার বার কাটলে বা ন্যাড়া করে দিলেই চুল বেশি বড়, ঘন ও পুরু হয় না। বরং বার বার ন্যাড়া করলে লাভের বদলে ক্ষতি হয় বেশি। কারণ, এতে বাচ্চার স্কাল্প বা মাথার তালু বার বার আঘাতপ্রাপ্ত হয়। হেয়ার ফলিকল এই আঘাতের ফলে তার কাজ ঠিকমত না করতে পারলে চুল আরো ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
অনেকেই বলেন, জন্মের পর বাচ্চাদের মাথায় যে ময়লা (অ্যামনিওটিক ফ্লুইড) লেগে থাকে, তা দূর করতে জন্মের কিছুদিন পরেই মাথা ন্যাড়া করা উচিত্। আসলে ১-২ সপ্তাহ মাথা শ্যাম্পু দিয়ে পরিস্কার করে দিলে এই ময়লা ৯৯-১০০% পরিস্কার হয়ে যায়। গন্ধও পুরোপুরি চলে যায়। বরং আপনি যদি বাচ্চার মাথা ন্যাড়া করতে গিয়ে অসাবধানতাবশতঃ রেজর বা ব্লেড দিয়ে হেয়ার ফলিকলসহ কিছুটা চামড়া তুলে ফেলেন, তবে নিশ্চিত থাকেন, আপনার বাচ্চার মাথার ঐ অংশটুকু সারাজীবন টাক হয়েই থাকবে।ছোট্ট বাচ্চারা অনেক কিউট হয়। চুল থাকলে তাদের দেখতে আরো কিউট লাগে। বাচ্চাদের মাথা কখনোই টাক করবেন না। প্রয়োজনে চুল ছোট করে কাটবেন, ঠিক আপনি যেমন চুল বড় হয়ে গেলে কাটিয়ে আসেন সেলুন বা পার্লারে গিয়ে।
সূত্র : Dailyhunt
CLTD: Womenscorner