সন্তানকে বড় করতে মায়ের সাথে বাবার সক্রিয় উপস্থিতি প্রয়োজন যেসব কারণে!
সন্তানরা ছোট থেকে বাবাকে কাছে পায়না সেভাবে, এতে তাদের মধ্যে ধারণা জন্মে বাবার সাথে শুধু টাকার সম্পর্ক। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের ভুল উপস্থাপনের কারণে বর্তমান সময়ে এসে বাবারাও সন্তান বড় করার বিষয়ে এক ধাপ পেছনে থাকতে বাধ্য হন। মায়েদের ওপরে সব দায়িত্ব থাকে।
অবশ্যই মায়ের ভালোবাসা সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পেশাল। কিন্তু তাই বলে বাবাকে পার্শ্বচরিত্র বানিয়ে দেওয়াটা মোটেও উচিত নয়। একজন সক্রিয় বাবা শিশুর বাড়ন্ত সময়ে মায়ের মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। শুধু শিশুকালে নয়, সন্তানের কৈশোর থেকে শুরু করে পরবর্তী জীবনেও বাবার অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা যদি শিশুর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, স্নেহময় হন, তাহলে শিশু জ্ঞান বিকাশ ও সামাজিক উন্নয়নে চমৎকারভাবে প্রভাব ফেলে থাকে। শুধু তাই নয়, বাবার সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব শিশুকে ভালো মানুষ হওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাবা শুধু শিশুর অভ্যন্তরীণ মানসিকতা নয়, বাহ্যিক আচরণের ক্ষেত্রেও প্রভাব রাখেন। সাধারণত বাবা তার সন্তানের সাথে যেরকম আচরণ করেন সেটার উপর ভিত্তি করে সন্তান তার বন্ধু, প্রেমিক বা প্রেমিকা এবং জীবন সঙ্গীর সাথে আচরণ করেন। অর্থাৎ শিশু তার বাবার আচরণের দ্বারা ভবিষ্যৎ জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।
নিরাপত্তা ও ইমোশনাল সাপোর্টের জন্য ছোট মেয়েরা তাদের বাবার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। একজন বাবা তার মেয়েকে দেখান পুরুষের সাথে কিভাবে চমৎকার একটা সম্পর্ক রাখা যায়। যদি বাবা ভালবাসেন, ভদ্র নমনীয় হন, তবে তার মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নিজের জীবনসঙ্গী খোঁজার সময় বাবার মাঝে দেখতে পাওয়া গুণাবলী খুঁজবে।
বাবা যদি যত্নবান হন, অন্যান্য মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন তাহলে তার ছেলেও ছোটবেলা থেকে সেই গুনটি আনুসরণ করে বড় হবে। যদি কোন শিশুর বাবা না থাকে তাহলে সে অন্য কোন পুরুষের মাঝে বাবার ছায়া খুঁজে বেড়ায়, সে চায় তার জন্য সেই পুরুষটি প্রয়োজনীয় নিয়ম নির্ধারণ করে দিক। তাকে শেখাক কিভাবে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুরা প্রথম এক বছর বাবার সাথে সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত ছিল, তারা ভবিষ্যৎ জীবনে জ্ঞান ভিত্তিক কর্মকান্ডে তুলনামূলক ভালো করেছে। জ্ঞানের প্রতি, জানার প্রতি তাদের কৌতুহল ও অন্বেষণ করার ক্ষুধাটাও বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাবা স্রেফ ঘরের দ্বিতীয় অভিভাবক নন। একজন সক্রিয় বাবা তার সন্তানের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রভাব রাখতে পারেন। সেই প্রভাবগুলো অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে রাখা প্রায় অসম্ভব।
তাই বাবাকে অবশ্যই তার নিজের গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং সন্তানের সাথে সেই মোতাবেক নিজেকে পরিচালনা করতে হবে। তবেই আমরা আগামী প্রজন্মের মাঝে চমৎকার মানুষদের পাব। কারণ আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।