কীভাবে আপনার শিশুদের সঠিকভাবে “না” বলবেন
একটি সন্তানকে বড় করে তোলা বেশ কঠিন কাজ । দেখা গেছে যে, শিশুরা অন্য কিছুর থেকে তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার উপর বেশি ভরসা করে । তাই তাদেরকে আমাদের তৈরি করা নিয়মগুলি মেনে চলা শেখানোর আগে আমাদের নিজেদেরকে প্রথমে সঠিক কাজ করতে হবে । সামাজিক–অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং বাইরে জগতের সাথে আরও পরিচিত হওয়ার কারনে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাবা–মায়েদের দায়িত্ব পালন করার উপায়গুলি আলাদা হয় ।
আপনার সন্তানকে কখন এবং কেন “না” বলা উচিত?
শিশুরা প্রায়ই বায়না করে । কিছু বাবা–মা তাদের “কঠোর না” নীতির সাথেই থাকে; কিছু বাবা–মা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এড়ানোর জন্য তাদের বায়না মিটিয়ে দেয়, অনেকে তাদের শিশুরা হতাশ হলে মন খারাপ করেন । আপনার সন্তানকে “না” বলার গুরুত্ব উপেক্ষা করা যায় না, কারণ এটি আপনার সন্তানকে পরবর্তী জীবনে হতাশার সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে । আসুন, আমরা এমন কিছু পরিস্থিতি সম্পর্কে জানি, যেখানে “না” বলতে হয় এবং কেন তা করা উচিত ।
১) অন্যদের বা নিজেদেরকে আঘাত করতে পারে এমন কাজগুলি
শিশুরা স্বভাবত পরীক্ষা করতে ভালোবাসে এবং তাদের কাজের পরিণাম কি তা বুঝতে পারে না । অতএব, এটা বাবা–মায়ের দায়িত্ব যে, তাদেরকে নিজেদের বা অন্যদের ক্ষতি করা থেকে বাধা দেওয়া ।
২) কিছু ভাঙা
যখন শিশুরা কিছু ভাঙার চেষ্টা করে, তাদের “না” বলে সেখানেই থামিয়ে দিলে এবং তাদেরকে অন্য একটি নিরাপদ কাজ করতে দিলে, তা তাদের আগের কাজটি সম্পর্কে ভাবাবে এবং তাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে ।
৩) তারা নিজে নিজে করতে পারে এমন কিছুতে “না”বলুন
মাঝে মাঝে তাদেরকে একটু প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক, তবে আপনার সন্তানদেরকে যোগ্যতাসম্পন্ন হতে উত্সাহিত করুন ।
৪) প্রয়োজন নেই এমন কিছু চাইলে দৃঢ়ভাবে “না” বলুন
যা শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, তারা তা–ই ভালোবাসে । “না” বললে, তা তাদের হতাশা মেনে নিতে সাহায্য করবে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেবে যে, তারা যা চায়, সেই সবই তারা পেতে পারে না, যার ফলে তারা বিগড়ে যাওয়া বাচ্চায় পরিণত হবে না ।
৫) যখন পরিকল্পনায় কোন বদল হচ্ছে, তখন “না” বলুন
নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কিছু কারণে আমাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন হতে পারে । যখন কোনো জিনিস তারা যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে হচ্ছে না (তাদের পছন্দের কিছু তারা হারাতে হচ্ছে), তাদেরকে নম্রভাবে “না” বলুন এবং তাদেরকে বুঝতে দিন যে, পরিকল্পনাতে পরিবর্তন হতেই পারে ।
৬) আপনার সন্তানদের তাদের ক্রিয়াকলাপের মধ্যে কোন কিছুকে অগ্রাধিকার দিতে শেখান
পরিস্থিতি অনুযায়ী, আপনার সন্তানকে বুঝতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, সাময়িকভাবে নিজের প্রয়োজনীয়তার থেকে অন্যের প্রয়োজনীয়তাকে আগে স্থান দেওয়া উচিত । তারা যত বড় হতে থাকে, তত বেশি উদার হতে থাকে ।
৭) পরে বিব্রত হতে হয় এমন কিছুতে এখনই দাঁড়ি টানুন
আপনি আপনার সন্তানের কিছু কার্যকলাপকে অপছন্দ করছেন এমন অসম্ভাব্য পরিস্থিতিতে, তখন ভদ্রভাবে “না” বললে তা আপনার সন্তানকে বুঝতে এবং আপোস করতে সহায়তা করবে ।
৮) আপনার মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায়, এমন কিছুতে “না” বলুন
আমরা যে সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণ করি তার মাধ্যমে আমরা আমাদের শিশুদের মূল্যবোধের শিক্ষা দিই । যখন আপনার সন্তান পরীক্ষা করে যে আপনি কতটা সহ্য করবেন, তখন “না” বলা ভালো ।
৯) খাবার নষ্ট করা
পেট ভর্তি থাকলে খাবার নিয়ে খেলা করা শিশুদের অভ্যাস । “না” বললে, তারা তাদেরকে দেওয়া খাবারের মূল্য দিতে শিখবে ।
১০) পোষা প্রাণী বা গাছকে আঘাত করা
পোষা প্রাণীর লেজ ধরে টানা বা টব থেকে গাছ উপড়ে ফেলায় শিশুদের ঝোঁক থাকে । মিষ্টি করে একটা “না” বললে, তা তাদের সহানুভূতির অনুভূতিকে বিকাশ করতে এবং অন্যান্য জীবের প্রতি ভালবাসার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে ।
সন্তানের ভালোর জন্য কিভাবে তাদের “না” বলতে হবে
জেনে রাখা ভালো যে, কোন কিছুতে “না” বলে আমরা শুধু তাদের জন্য সীমানা নির্ধারণ করছি, তাদের ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়াগুলিকে বাধা দিচ্ছি না । নীচে কিছু কৌশলের তালিকা দেওয়া হলো যেগুলির মাধ্যমে আপনার সন্তানের আবেগের সীমা না পেরিয়েই তাদেরকে “না” বলা যাবে:
১) বিকল্প প্রস্তাব
একটি শিশুর পক্ষে কোনও নির্দিষ্ট জিনিসের জন্য “না” শোনা সহজ হয়ে যায়, যদি আপনি তাদের অন্য কিছু দিয়ে বিভ্রান্ত করেন এবং তাদের শক্তিকে অন্য কোথাও ব্যবহার করতে সাহায্য করেন ।
২) “না” বলার সময়, তাদের সঠিক জিনিসটি শেখান
সংশোধন করার সময়, জিনিসগুলি করার সঠিক উপায়টি তাদের দেখালে তা তাদের সাহায্য করবে ।
৩) তাদের সঠিকভাবে খেলতে শেখান
বাচ্চারা যখন তাদের বন্ধু বা অন্য ভাইবোনদের সাথে খেলে, তখন তাদের লড়াই করা বা ঈর্ষার মতো কিছু অবাঞ্ছিত দোষগুলি দেখা যায় । আপনি তাদের খেলার সময় নিজেকে জড়াতে পারেন এবং এই ধরনের আচরণ থেকে নিরস্ত করার পাশাপাশি তাদেরকে সঠিক আচরণও শেখান ।
৪) আঘাত করা
শিশুরা রাগ হলে অন্যদের আঘাত করে – এটি বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার একটি অংশ এবং এটি যে ভুল, তা তারা প্রথমে উপলব্ধি করে না । আপনি তাদের “না” বলতে পারেন এবং নিজেকে কিভাবে প্রকাশ করতে হয় তা শেখাতে পারেন ।
৫) ফোন নেওয়া
শিশুরা সাধারণত আমাদের ফোনের প্রতি আকৃষ্ট হয় । তারা যে ফোনটি পেতে পারে না, এটা বলার সাথে সাথে, বিকল্প হিসাবে তাদের খেলার জন্য অন্য খেলনা দিন ।
একটি সুখী শিশু হল একটি সুখী আত্মা, যে ইতিবাচক বিকিরণ করে । আপনার সন্তানকে “না” বলার আগে একটি বিকল্প খুঁজে নিলে তা সাহায্য করতে পারে । ইতিবাচকভাবে বাবা–মায়ের দায়িত্ব পালন করলে, সন্তানের উপর একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে এবং তাদেরকে আবেগের সাথে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে ।
CLTD: banglaparenting.firstcry