বাবা মায়েরা সন্তানকে শাসন করতে যে ভুলগুলো করে থাকেন

বাবা-মায়ের আদেশ বা নির্দেশ যখন সন্তানেরা শুনতে চায়না তখন সেটা তাদের জন্য খুবই হতাশাজনক হয়।

কিছু বাবা-মা সন্তানের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হয়ে কাজটি নিজেই করে ফেলেন, আবার কিছু বাবা-মা চিৎকার করে বিরক্তি প্রকাশ করে থাকেন। বাবা-মায়ের কিছু ভুলের কারণেই আসলে এই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আজ আমরা এই রকম কিছু ভুল শনাক্ত করার চেষ্টা করব।

১। সন্তানকে অতিরিক্ত আদর করা

অনেক পিতা-মাতাই সন্তান কেন্দ্রিক। তাদের সন্তানেরাও এই পরিবেশে বেড়ে উঠে। তারা এটা খুবই পছন্দ করে। সন্তানকে ঘিরেই বাবা মায়ের জীবন আবৃত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, সন্তান যাই করুক না কেন বাবা-মা এতে কিছু মনে করেনা। কারণ, সন্তানের সুখেই পিতামাতার সুখ। সন্তানের জন্য পিতামাতা যা কিছু করেন তা ভালোবেসে ও মনোযোগ দিয়েই করেন। তাই সন্তানের জন্য কাজ করলে তারা রোমাঞ্চিত হন। কিন্তু এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে,

সন্তানকে ভালোবাসতে হবে কিন্তু তার পূজা করা যাবেনা। সন্তানের সাথে পিতামাতার এমন আচরণ করা উচিৎ নয় যার ফলে সন্তান এটা বুঝতে পারে যে, সে তার পিতামাতার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। যা একটি মিথ্যা মূর্তি স্থাপন করে। সন্তান কেন্দ্রিক বাসা না হয়ে স্রষ্টা কেন্দ্রিক বাসা হওয়া প্রয়োজন। এর ফলে সন্তান ভালোবাসা পাবে আরো উন্নত উপায়ে এবং সে স্বার্থপরতার চেয়ে পরার্থপরতা শিখবে বেশি।

২। সন্তানকে নির্ভুল ভাবা

শিশুদের নিয়ে যারা কাজ করে থাকেন যেমন- শিক্ষক ও কাউন্সেলররা প্রায়ই বলে থাকেন যে, এখন যেসব পিতামাতা তাদের সন্তানের বিষয়ে নেতিবাচক কথা শুনতে পছন্দ করেন না, সমস্যা যখন বৃদ্ধি পায় তখন তারাই চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করেন। কিন্তু যখন আপনি মুক্তমন ও হৃদয় দিয়ে শুনবেন তখন আপনি নিজেই উপকৃত হবেন। একজন বিশৃঙ্খল পূর্ণবয়স্ককে ঠিক করার চাইতে বিক্ষুব্ধ শিশুকে পরিবর্তন করা সহজ।

৩। সন্তানকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা

সন্তানের অর্জনে সব পিতামাতাই গর্বিত হয়। যখন সন্তান সফল হয় তখন পিতামাতা এতটাই সুখি হয় যে তারা অনুভব করে যে, তারাই সফল হয়েছে। যদি আপনারা সন্তানের প্রতিটি বিষয়েই জড়িয়ে যান এবং অর্পিত হন তাহলে কোথায় তার শেষ আর কোথায় আপনার শুরু তা নির্ধারণ করাটা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সন্তান যেহেতু পিতামাতার ছোট্ট সংস্করণ তাই পিতামাতা তাদের অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো সন্তানের মাঝে পরিপূর্ণতা পাওয়ার আশা করেন। এর ফলেই সেই চাওয়াটি আর সন্তানের জন্য চাওয়া না হয়ে নিজের চাওয়া হয়ে যায়। এজন্য সন্তানের সুখ ও পিতামাতার সুখের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

৪। অনেক বেশি নির্দেশ দিয়ে থাকেন

অনেকেই প্রতিদিন সন্তানকে শত শত আদেশ দিয়ে থাকেন যেমন- মোজাগুলো তুলে রাখো, টেবিলে কাঁটাচামচ ঠুকোনা ইত্যাদি। যদি আপনার সন্তানটি খারাপ ব্যবহার করে তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনি আপনার সন্তানকে সারাদিনে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি আদেশ দিয়ে থাকেন। অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে শিশুকে বার বার উপদেশ দেয়া ও সতর্ক করার ফলে তার মধ্যে বিরক্তি চলে আসে। তাই কেবল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই উপদেশ দিন।

৫। দুর্বল নির্দেশনা দিয়ে থাকেন

নির্দেশনা দেয়ার সময় দুর্বল শব্দ ব্যবহার করা ঠিক নয় যেমন- তুমি কি এখন তোমার দাঁত মাজার জন্য যাবে? এই বাক্যটির দ্বারা বোঝা যায় যে, দাঁত ব্রাশ করা বাধ্যতামূলক নয়। কর্তৃত্বের সঙ্গে নির্দেশ দিন। তাহলে সে কাজের গুরুত্ব বুঝতে পারবে।

খারাপ অভ্যাস দূর করাটা কঠিন। যদি আপনি দৃঢ়ভাবে শুরু করেন তাহলে আপনার সন্তানও তা ধরতে পারবে। হয়তো বিষয়টি ১০ বার বা ২০ বার চেষ্টা করতে হবে। সন্তানেরা পতিত হলে বাবা-মা দুঃখ পান। কিন্তু কোনো কোনো সময় তাদের পতিত হতে দিতে হয়। এটা মনে রাখতে হবে যে, স্বল্প সময়ের কষ্ট দীর্ঘ মেয়াদি সুখ আনয়ন করে।

Sharing is caring!

Comments are closed.