শিশুদের কোষ্টকাঠিন্য রোধে কী করবেন জেনে নিন!

অনেক শিশুই কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় ভুগে থাকে। এ নিয়ে অভিভাবকরা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

 এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ।

প্রশ্ন : কোষ্ঠকাঠিন্য যেকোনো বয়সের যে কারোরই হতে পারে। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়?

উত্তর : অনেক কারণে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কিছু কিছু মেডিকেল কারণে হয়, কিছু কিছু সার্জিক্যাল সমস্যার কারণে হয়। যেমন : বাচ্চাদের যদি হাইপোথাইরয়েডিজম থাকে, বাচ্চারা যদি পানি কম খায়, যদি মাংস জাতীয় খাবার বেশি খায়,

ফাস্টফুড খায়, তাহলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এ ছাড়া কিছু কিছু সার্জিক্যাল কারণ রয়েছে যার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আমরা একে এনাল ফিসার বলি,পাইলস বলি, হেমোরয়েডস বলি,

রেক্টাল স্টেনোসিস বলি- এই রকম অনেক সমস্যা রয়েছে যার জন্য বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

প্রশ্ন : কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে শিশুদের খাদ্যতালিকায় কী কী থাকা উচিত?

উত্তর : বাচ্চাদের মাংস জাতীয় খাবার কম খাওয়াতে হবে। আঁশ জাতীয় খাবার, যেমন : শাকসবজি বেশি করে খাওয়াতে হবে। বাচ্চারা সাধারণত খেতে চায় না, এটি প্রত্যেকটি মায়েরই একটি প্রচলিত অভিযোগ। কেন খেতে চায় না সে ব্যাপারে বলছি। আমাদের সমাজে এখন প্রতিটি বাচ্চা চিপস খায়, চকোলেট খায়, অথবা এই জাতীয় রুচিকর কিছু খাবার খায়। ধরলাম যদি এক পিস চিপসে ২ ক্যালোরি থাকে, তাহলে ১০০টি চিপস যদি একটি প্যাকেটের ভেতর থাকে,

তাহলে শিশুটি পাচ্ছে ২০০ ক্যালোরি। তাহলে তার তো সারাদিন আর কিছু খাওয়ার কথাই না। সুতরাং চিপস খাওয়ার পর মা যদি বাচ্চাকে সাধারণ খাবার দিতে চায়, ভাত দিতে চায়, সুজি দিতে চায়, সে তো খাবে না। কারণ তার আর ক্ষুধা থাকবে না। খাওয়ার ইচ্ছা থাকবে না। তার শক্তিও তো আর দরকার নেই।

তবে এই জিনিসগুলো যদি এড়িয়ে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয়, সেই খাবারের সাথে যদি একটু দুধ থাকে, একটু শাকসবজি থাকে, ফল থাকে- এগুলো থাকলে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না। পায়খানার সময় কষ্ট হবে না।

কোষ্টকাঠিন্য হলে পায়খানার রাস্তা চিরে যায়। এনাল ফিসার হয়। যখনই এনাল ফিসার হয়, তখন পায়খানা করতে গেলে তার ব্যথা হয়।সেজন্য সে আরো চেপে রাখে। যখনই পায়খানা আসে, সে ঘরের মধ্যে দৌঁড়াদৌড়ি করে। শিশু পায়খানা করতে চায় না। কিছুক্ষণ পর আবার যখন পায়খানা আসছে সে বসছে ঠিকই, তবে ব্যথার জন্য আবার দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়। পায়খানা না করলে যত সময় যাচ্ছে তখনই তার পায়খানা আরো শক্ত হচ্ছে। এরপর যখনই সে পায়খানা করতে যায় তার আরো কষ্ট হয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে তাকে শাকসবজি বেশি করে খাওয়াতে হবে। গরম দুধ, ফলের জুস এগুলো খাওয়াতে হবে।

প্রশ্ন : বাচ্চার নিয়মিত পায়খানা করার অভ্যাস বা সময় কি কোষ্ঠকাঠিন্যতে কোনো প্রভাব ফেলছে?

উত্তর : দুই বছর পর্যন্ত বাচ্চা মায়ের দুধ খায়। একটি বাচ্চা যদি মায়ের দুধ খায় তাহলে পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত সে স্বাভাবিকভাবে পায়খানা করবে। একটি বাচ্চা দিনে দুই থেকে তিনবার পায়খানা করার পর তার যদি অস্বস্তি অনুভব না করে, সেটা তার জন্য স্বাভাবিক। আবার একটি বাচ্চা দিনের মধ্যে তিন থেকে চার বার পায়খানা করছে, তারপরও যদি সে সুস্থবোধ না করে, পায়খানা পরিষ্কার না হয়, তাহলে সেটি কোষ্ঠকাঠিন্য। এ জন্য কোষ্ঠকাঠিন্যর ব্যাপ্তি অনেক।

আসলে পায়খানা শক্ত হলে একে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। এই পায়খানা যেন কষা না হয়, নরম থাকে এবং সহজে পায়খানা পেট থেকে বেরিয়ে যায় তার জন্য সবজি খেতে হবে।

প্রশ্ন : বাচ্চাকে প্রতিদিন কাছাকাছি সময়ে পায়খানা করার জন্য কমোডে বসানোর কোনো প্রয়োজন আছে কি?

উত্তর : বড়দের প্রত্যেকদিন সকালে এবং বিকেলে পায়খানার একটি অভ্যাস হয়ে যায়। বাচ্চাদের এই বিষয়টি সেভাবে তৈরি হয় না। যার জন্য বাচ্চার যখনই পায়খানার বেগ হবে সে সেটি করবে। নির্দিষ্ট সময়ে করার অভ্যাস করতে পারলে ভালো। তবে সেটা সবসময় করা সম্ভব হয় না। এর জন্য একটু সময় লাগে। যখন সে বুঝতে শেখে, বয়স ধীরে ধীরে বাড়ে তখন ঠিক হয়। তবে করাতে পারলে ভালো। এতে পরিবারের লোকদের সুবিধা হয়।

প্রশ্ন : কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য সার্জারির আগ পর্যন্ত, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি আর কি কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন আছে?

উত্তর : একটি বিষয় তো আছেই যে শাকসবজি বেশি করে খাওয়াতে হবে, পানি খাওয়াতে হবে- এগুলো তো করবেই। এ ছাড়া প্রাকৃতিক কিছু জিনিস পাওয়া যায় যেগুলো পায়খানাকে নরম করে। যেমন : ইসুবগুলের ভুসি। এ রকম কিছু জিনিস রয়েছে খেলে পায়খানা নরম হয়। অথবা কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো পায়খানাকে নরম করে। সেই জাতীয় ওষুধ দিলে পায়খানা নরম হয়। পাশাপাশি পায়খানার রাস্তা যদি কেটে যায়, যাকে এনাল ফিসার বলি, সেখানে লোকাল কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম দিতে হয়। এগুলো দিলে ব্যথা, প্রদাহ কমে যায়। তখন সে ভালোভাবে পায়খানা করে। ধীরে ধীরে সমস্যাটির সমাধান হয়ে যায়।

প্রশ্ন : আপনি বলছিলেন কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, সার্জিক্যাল সমস্যার কারণে, আবার কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটলেও তার প্রভাব হিসেবে সার্জিক্যাল সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর: অনেক সময় দেখা যায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য তার এনাল ফিসার হলো। এনাল ফিসার হলে, ওষুধ দিয়ে আমরা চেষ্টা করবো এর সমাধান করতে। না হলে ছোট একটি অস্ত্রোপচার আছে এটি  করে দিলে বাচ্চা ঠিক হয়ে যায়। আর আরো কিছু সমস্যা রয়েছে যেগুলোতে অস্ত্রোপচার করতেই হয়।

প্রশ্ন: অস্ত্রোপচারের পর খাদ্যাভ্যাসের যদি পরিবর্তন না করে তাহলে কী এটি ভালো হবে

উত্তর : না, হবে না। আসলে অস্ত্রোপচারই সমাধান নয়। একটি পর্যায়ে এসে আসলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে আমাদের আসলে বাধ্য হয়েই অস্ত্রোপচার করতে হয়। আমরা কখনো চাই না, একটি বাচ্চার অস্ত্রোপচার করা হোক। এটি পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ, বাচ্চার জন্য ভীতিকর কারণ বা সার্জনের জন্যও ঝুঁকির কারণ। এই জন্য অস্ত্রোপচার না লাগলে কখনো করা হয় না। যখন দরকার হয়, তখনই করা হয়।

তবে অস্ত্রোপচারই শেষ নয়। এরপরও তাকে নিয়মিত শাকসবজি খাওয়াতে হবে। পায়খানা যেন নরম থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে তার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।  নয়তো এই সমস্যাগুলো আবার নতুন করে হতে পারে।

প্রশ্ন : প্রায় সব মা-ই চিকিৎসকের কাছে এলে যেই অভিযোগটি করেন, সেটি হলো, তার বাচ্চা খেতে চায় না। আপনারা যে খাদ্যতালিকা দিচ্ছেন, সেগুলো জোর করেও বাচ্চাকে খাওয়ানো যায় না। এ জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য লেগেই আছে। সেই মায়েদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর : একটি বিষয় হচ্ছে মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছে, সে খাবেই। বাচ্চাকে বোঝাতে হবে তোমার এই খাবার ঠিক নয়। তুমি এই খাবার খাও। প্রথমে হয়তো সে খেতে চাইবে না। তবে যখন ক্ষুধা লাগবে এক পর্যায়ে এসে তাকে খেতে হবে। তাকে তো খেয়েই বাঁচতে হবে।

তথ্য সুত্রঃ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন – ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ

Sharing is caring!

Comments are closed.