আপনার নবজাতক সন্তানের বৃদ্ধি এবং বিকাশ
জন্মের প্রথম কয়েক মাস আপনার বাচ্চার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন তার অধিকাংশ পেশী, জ্ঞানীয়, চলাফেরা এবং অন্যান্য দক্ষতার বিকাশ শুরু হয়। এই পর্যায়ে আপনার শিশুর বিকাশের উপর যদি আপনি নজর রাখতে চান তবে, আপনার বাচ্চার বিকাশের লক্ষণগুলি বোঝা জরুরী যা নির্দেশ করে আপনার বাচ্চার যতটা বেড়ে ওঠার কথা সে ততটাই বাড়ছে। প্রথম মাসে, আপনার নবজাতক বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় যা তার শারীরিক, বোধবুদ্ধি সংক্রান্ত, মানসিক বিকাশ, ভাষা, সেইসাথে সংবেদনশীলতা এবং অঙ্গসঞ্চালন বিষয়ক বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে। আপনার এটা জানা জরুরী যে, জন্মের প্রথম কিছুদিনের মধ্যে আপনার সদ্যোজাত বাচ্চার কিছুটা ওজন কমবে, অতিরিক্ত পরিমাণ তরল হ্রাস পাওয়ার কারণে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে, সে এই ওজন ফিরে পাবে। এমনকি আপনি প্রথম মাসের প্রতি সপ্তাহে আপনার শিশুর 113 গ্রা: থেকে 227 গ্রা: ওজন বৃদ্ধি লক্ষ্য করতে পারেন।
এর পাশাপাশি, তার মস্তিষ্কও দ্রুত বিকাশের মধ্য দিয়ে যায় এবং শীঘ্রই সেগুলি বিভিন্ন বিকাশের মাইলফলকগুলিতে পৌঁছে যাবে।
নবজাতকের বিকাশ – প্রথম সপ্তাহ
প্রথম সপ্তাহে আপনি লক্ষ্য করতে পারেন আপনার শিশু প্রচুর ঘুমোচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তার হাত ও পা কুঞ্চিত দেখাতেও পারে। এটি গর্ভের মধ্যে যে অবস্থানে সে ছিল তার কারণে হয়। শিশু পরবর্তী কয়েক মাসে ধীরে ধীরে প্রসারিত হবে। আপনি তাকে স্বস্তি দিতে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
শিশু আচমকাই খুব জোরে জোরে কেঁদে উঠে আপনাকে সচকিত করতে পারে । এটিকে ‘মোরো রিফ্লেক্স‘ বলা হয়, যখন বাচ্চা পিছন দিকে বেঁকে গিয়ে তার হাত ও পা প্রসারিত করে দিতে পারে। এই রিফ্লেক্স কয়েক মাস পরে প্রশমিত হয়ে থাকে।
১ সপ্তাহ বয়সে আপনার বাচ্চা তার সামনে মাত্র ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত দেখতে পারে। তার মানে হল এই যে সে কেবল তখনই আপনার মুখ দেখতে পাবে যখন তা তার খুব কাছে আনা হবে। এমনকি সে আপনার মুখ চিনতে সক্ষম হতে পারে। বাচ্চারা নিকটস্থ দৃষ্টিশক্তির সাথে জন্ম নেয় এবং তাদের দৃষ্টি ধীরে ধীরে জন্মের পরে বিকশিত হয়। আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে আপনার নবজাতক ট্যারা চোখে আপনার দিকে তাকাচ্ছে তবে তাতে চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রথম কয়েক মাস সাধারণভাবে শিশু খুবই অবাক দৃষ্টিতে তাকাবে।
প্রথম কয়েক দিন আপনি শিশুর মলে সবুজ রঙের মিশ্রণ লক্ষ্য করতে পারেন। এটি মেকোনিয়ামের কারণে হয় – যেটি হল ভ্রূণের মল। একবার এটি পরিষ্কার হয়ে গেলে, আপনার শিশুর মল হলুদ হয়ে যাবে।
২ সপ্তাহ বয়েসী শিশুর শারীরিক বিকাশ
আপনার সদ্যজাত শিশু কান্নাকাটি করে তার চাহিদাগুলি সম্বন্ধে জানান দেয়। এই সময়ে শিশুর সাথে কথা বলতে থাকুন, যাতে সে আপনার গলা চিনতে পারে। আপনার শিশু আপনার গলার স্বর চিনতে শুরু করতেও পারে কারণ তার শ্রবণশক্তির বিকাশ হয় এবং আপনার স্বর শোনার অপেক্ষায় থাকে।
এই সময় বহু শিশুর মধ্যে পেটে ব্যাথা দেখা যায়। এই অবস্থায় শিশু অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে সপ্তাহে 3 দিন 3 ঘন্টার বেশিক্ষণ ধরে কোনও কারণ ছাড়াই ক্রমাগত কাঁদতে থাকে। যদিও এতে চিন্তার কোন কারণ থাকে না এবং সাধারণত প্রায় তিন মাসের মধ্যে সমস্যাগুলি হ্রাস পায় তবুও আপনি আপনার পেটে ব্যাথায় কাঁদে এমন শিশুর সাথে কীভাবে আচরণ করবেন সে সম্পর্কে পরামর্শের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন। আপনার শিশুর আম্বিলিকাল কর্ডটি দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে গিয়ে খসে পড়ে যাবে এবং একটি সুন্দর স্বাভাবিক নাভি রেখে যাবে। আপনার শিশুর আম্বিলিকাল কর্ড খসে পড়ে না যাওয়া পর্যন্ত সংলগ্ন অংশ শুকনো রাখতে তাকে স্পঞ্জবাথ দেওয়াই ঠিক হবে।
৩ সপ্তাহ বয়সের শিশুর বিকাশ, তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে, আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে আপনার বাচ্চা তার পেটের উপর ভর দিয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য মাথা উঁচু করার চেষ্টা করছে। আপনার শিশুর ঘাড়ের পেশীর বিকাশে সাহায্য করার জন্য শিশু জাগ্রত থাকা অবস্থায় আপনি তাকে যথেষ্ট সময় ধরে উপুড় করে রাখুন। আপনার শিশু যখন উপুড় হয়ে থাকবে সেসময় আপনি অবশ্যই আপনার শিশুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকা নিশ্চিত করুন। আপনার শিশু উপুড় হয়ে থাকার সময় তাকে ঘুমাতে দেবেন না কারণ এটি হঠাৎ শিশু মৃত্যু সিন্ড্রোম (এসআইডিএস) এর ঝুঁকি বাড়ায়। শিশুরা এই সময়ে চুষা নিয়ে ভুলে থাকতে পারে, তাই এই সময়কালে আপনার শিশুকে নিজে নিজে শান্ত হতে সহায়তা করার জন্য একটি চুষি একটি দুর্দান্ত হাতিয়ার হতে পারে। তার দৃষ্টি এবং দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতার উন্নতি হতে থাকবে এবং সে হয়তো গভীরভাবে আপনার মুখের দিকে তাকাতে সক্ষম হবে। আপনি এই সময়ে তার কাছে এক ঝলক হাসিও প্রত্যাশা করতে পারেন। এটি সামাজিক প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে আপনার হাসির একটি অনুকরণ।
৪ সপ্তাহ বয়সের শিশুর বিকাশ
আপনার 4 সপ্তাহ বয়সী শিশুটির বিকাশের মধ্যে শ্রবণশক্তির উন্নতিও অন্তর্ভুক্ত। এর মানে হল আপনার শিশু গান শুনতে এবং শব্দগুলিকে আরও ভালোভাবে খেয়াল করতে পারবে। কিছুটা উন্নতি হওয়া ঘাড়ের পেশী সাহায্যে সে বেশ কিছুক্ষণ তার মাথা তুলে থাকতে পারবে এমনকি এদিক ওদিক ফেরাতে বা ঘোরাতেও সক্ষম হতে পারে। আপনি তার সামনে দাঁড়িয়ে এই কাজটিতে আরও সাহায্য করতে পারেন ধীরে ধীরে একদিক থেকে অন্যদিকে সরে গিয়ে তা অনুসরণ করার জন্য উৎসাহিত করার মাধ্যমে।যাইহোক, যদি আপনার শিশু কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই দীর্ঘ ঘন্টার জন্য কাঁদতে থাকে, তবে সে হয়তো পেটের ব্যাথায় ভুগছে। আপনি একটি পেটের ব্যথায় ভোগা শিশুকে শান্ত করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি চেষ্টা করতে পারেন। যেমন ঘুমানোর সময়ও সে যেন কোনও আরামদায়ক জায়গায় থাকে তা নিশ্চিত করা, তাকে আস্তে আস্তে দোল খাওয়ানো, মধুর সঙ্গীত চালানো ইত্যাদি।
কিভাবে নবজাতক শিশুর যত্ন নেবেন
আপনার সন্তান সুরক্ষিত থাকতে আপনার উপর নির্ভর করে। এখানে কয়েকটি জিনিস বলা হল যা প্রথম মাসের নবজাতক শিশুর যত্নের অংশ আপনার শিশুর বেশিরভাগ বিকাশই ঘটে যখন সে ঘুমায়। অতএব, আপনার শিশুকে যথেষ্ট বিশ্রাম পেতে সাহায্য করুন। বুকের দুধ খাওয়ানোকে প্রাধান্য দিন। বুকের দুধ আপনার শিশুর শারীরিক ও জ্ঞানীয় বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক পুষ্টি ধারণ করে। আপনার শিশুর জন্য নরম এবং আরামদায়ক ডায়াপার ব্যবহার করুন। প্রতিবার মলমূত্র ত্যাগের পরে ডায়াপার পরিবর্তন করুন। নাড়ী না পড়া পর্যন্ত সাবধানে আপনার শিশুকে স্পঞ্জ স্নান দিন। উষ্ণ জল দিয়ে নাড়ী পরিষ্কার করুন এবং নরম টয়লেট কাগজ দিয়ে শুকিয়ে নিন। একবার নাড়ী পড়ে গেলে, আপনি ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে তাকে টবে স্নান করাতে পারেন। আপনার শিশুর স্নানের জন্য শুধুমাত্র হাল্কা সাবান ব্যবহার করুন এবং সব প্রয়োজনীয় সতর্কতা অনুসরণ করুন।
কিভাবে নবজাতক শিশুর যত্ন নেবেন
কোনও সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে আপনার শিশুর যত্ন নেওয়ার আগে সর্বদা আপনার হাত ধুয়ে নিন।আপনার শিশুকে ধরার সময় তার ঘাড় এবং মাথায় ঠেকনা দিন সে এখনো সুগঠিত হয়নি এবং ঘাড়ে ও মাথায় অবলম্বনের অভাবে তার ঘাড়ের পেশীগুলিতে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আপনার শিশুকে ধরুন। বাচ্চারা তাদের মায়ের স্পর্শে সান্ত্বনা পায়; আদর করা এবং তাদের কোলে তোলা তাদের শান্ত করার একটি দুর্দান্ত উপায়। তাদের সাথে কথা বলুন। যদিও আপনার বাচ্চা আপনার কথা বুঝতে নাও পারে বা প্রতিক্রিয়া জানাতে নাও পারে তবুও আপনার বাচ্চার সাথে কথা বলা এবং যোগাযোগ করা তার সাথে বন্ধনের একটি দুর্দান্ত উপায়। এটা তাকে শুনতে এবং ভালভাবে স্বর চিনতে সাহায্য করতে পারে। cl: banglaparenting