শিশুর বুদ্ধির বিকাশে যা করবেন

শিশুর বুদ্ধির বিকাশের জন্য তাকে সৃষ্টিশীল বিভিন্ন কাজে উৎসাহিত করুন।

 আজকের সুস্থ, সবল ও বুদ্ধিদীপ্ত শিশু আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কর্ণধার এই শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বুদ্ধির বিকাশে পিতামাতা, পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুকে নিজের ইচ্ছা, প্রভাব, স্বপ্ন চাপিয়ে দেবেন না। নামীদামি স্কুলে ভর্তি, ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে গিয়ে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট করে শিশুর মানসিক, শারীরিক, বুদ্ধির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করবেন না।

শিশুর বুদ্ধির বিকাশ কেন হয় না

১. জিনগত বা বংশগত কারণ।

২. মায়েদের অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যজ্ঞানের অভাব।

৩. শিশুর বুদ্ধির বিকাশের সময় বিভিন্ন রোগ ও অত্যধিক ওষুধের ব্যবহার।

৪. শিশুর বুদ্ধির বিকাশের প্রতি পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার অভাব।

৫. গর্ভবতী মায়ের অপুষ্টি।

৬. শিশুকে ভালো কাজে প্রশংসা না করে সব সময় তিরস্কার বা নিন্দা করা।

৭. শিশুকে পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ানো।

৮. এ ছাড়া শিশুর সামনে পারিবারিক ঝগড়া ও অশোভন আচরণ শিশুর বুদ্ধির বিকাশে অন্যতম অন্তরাল।

মেধাহীন শিশুর যে সমস্যা হয়

নানা ধরনের জটিলতা মেধাহীন শিশুর নিত্যসঙ্গী—

১. আচরণে অস্বাভাবিকতা।

২. লেখাপড়ায় অমনোযোগী।

৩. খাবারে অনীহা।

৪. রাগ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়া।

৫. স্কুল-কলেজের ফলাফল ও ব্যক্তিগত দক্ষতা অসন্তোষজনক হওয়া।

৬. মেধাহীন শিশুরা বড় হয়ে পরিবার, সমাজ তথা দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ। এটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে সরাসরি ব্যাহত করে।

শিশুর বুদ্ধির বিকাশে যা করবেন

১. গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিন

যেহেতু শিশুর বুদ্ধির বিকাশের ৭০ ভাগ মায়ের গর্ভকালীন থাকা অবস্থায় শুরু হয়, তাই গর্ভকালীন মাকে ফলিক এসিড, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান; পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মানসিক চাপমুক্ত এবং হাসিখুশি রাখুন।

২. শিশুর এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বিশেষ যত্ন নিন

শতভাগ বিলিয়নের বেশি নিউরন নিয়ে একটি মানবশিশুর জন্ম হয়। শিশুর বুদ্ধির বিকাশ যেহেতু মস্তিষ্কের নিউরনের ওপর নির্ভরশীল এবং এই নিউরনের বৃদ্ধি শুধু গর্ভকালীন ও প্রথম পাঁচ বছরই সম্পন্ন হয়, তাই এ সময়গুলোতে শিশুর চাই বিশেষ যত্ন।

৩. শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন

মস্তিষ্কের সক্রিয় ও সতেজ রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবেন। মেধা নষ্ট করে এমন ক্ষতিকর খাবার বাদ দিয়ে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, বেশি করে প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।

৪. মেধার বিকাশে শিশুর চাই পর্যাপ্ত ঘুম

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অপর্যাপ্ত ঘুম শিশুর বুদ্ধির বিকাশে বিঘ্ন ঘটায়, তাই শিশুর মেধার বিকাশে পর্যাপ্ত ঘুমের নিশ্চয়তা করুন।

এ ছাড়া—

* ভালো কাজে শিশুকে সব সময় উৎসাহিত করুন এবং প্রশংসা করুন।

* শিশুর সামনে পারিবারিক ঝগড়া, অশোভন আচরণ করবেন না।

* পরিবারের ও প্রতিবেশীর শিশুর সঙ্গে আপনার শিশুকে মিশতে দিন এবং খেলার সুযোগ দিন।

* শিশুর সামনে সিগারেটসহ অন্যান্য নেশা করবেন না।

* শিশুকে বিভিন্ন জিনিস, মানুষের সঙ্গে পরিচয় করে দিন। এতে মেধার বিকাশ ঘটে।

* শিশুর ওপর সব সময় কোনো কিছু চাপিয়ে দেবেন না। তাকে পছন্দ ও দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ দিন। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

* শিশুকে বকা, ধমক, উচ্চ স্বরে কথা ও মারবেন না। এতে মেধার বিকাশে বিঘ্ন হয়।

* শিশুকে প্রচুর সময় দিন। তার সঙ্গে কথা বলুন। শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ছুটিতে শিশুকে বেড়াতে নিয়ে যান। এতে বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে।

* সৃষ্টিশীল বিভিন্ন কাজে শিশুকে উৎসাহিত করুন। এতে মেধার বিকাশ ঘটবে।

লেখক
ডা. শাকিল মাহমুদ সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।

Sharing is caring!

Comments are closed.