শিশুদের পেটে নাড়িজনতি সমস্যা হলে করণীয়

শিশুদের ইনটিসটাইনাল অবসট্রাকশন বা পেটের ভেতর নাড়িতে খাদ্য সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি জটিল রোগ। তবে সময়মতো এই রোগের চিকিৎসা হলে একটি শিশু আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। আজ সোমবার এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের এক হাজার ৯৩৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজ।

প্রশ্ন : শিশুদের ইনটিসটাইনাল অবসট্রাকশন বলতে আমরা কী বুঝি?

উত্তর : ইনটিসটাইনাল অবসট্রাকশনে পেটের ভেতর নাড়িতে খাদ্য সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা সাধারণত যে খাবার খাই তা নাড়ির চলাচলের মাধ্যমে ওপর থেকে নিচে নামে এবং হজম হয়। যদি কোনো কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমরা অবসট্রাকশন বলি। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে।যেমন- মলদ্বার যদি শক্ত হয়ে যায়, মল অত্যন্ত আঠালো হয়, জন্মের পর যদি নাড়ি ঠিকমতো বৃদ্ধি না পায়। অনেক সময় নাড়ি জন্মগতভাবে প্যারালাইসিস থাকে। আবার দেখা যায় জন্মের পর হয় তো শিশুটির মলদ্বারই তৈরি হয়নি।নাড়ি যে জিনিসের সঙ্গে আটকানো থাকে, তাকে মেজেনটি বলা হয়। এতে যদি কোনো ছিদ্র থাকে তখন এই সমস্যা হতে পারে।জন্মগতভাবে হার্নিয়া থাকলে, পেটের পেশিতে যদি কোনো ছিদ্র থাকে তখন দেখা যায় নাড়ি হয়তো এতে আটকে গেছে তখনো এই সমস্যা হয়।নাড়ির কোনো অংশ যদি প্যাঁচ লেগে যায়, তখন ভলভোলাস বলা হয়। সে ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা যায়। নাড়ির একটি অংশ আরেকটির মধ্যে ঢুকে গেলে এই সমস্যা হতে পারে।
এ ছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বা বমি করলে শরীরে ডিহাইড্রেশন হয়। তখন নাড়ি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। শরীরে বেশি ইনফেকশন হলেও এই সমস্যা হতে পারে।

প্রশ্ন : এই রোগের লক্ষণ কী?

উত্তর : এই রোগে পেটে ব্যথা হবে। যেসব শিশু কথা বলতে পারে না, তারা এই ব্যথায় বিরক্তি বোধ করে। শিশুর বমি হয়, এই ক্ষেত্রে সবুজ রঙের বমি হয়। সাধারণত শিশুর পেট অনেক ফুলে যায়। পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়।

প্রশ্ন : কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

উত্তর : জন্মের পরে যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বোঝা যায় শিশুটির মলদ্বার নেই, সবুজ বমি হচ্ছে অথবা পেট ফুলে যাচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে শিশুটিকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

প্রশ্ন : এই রোগের চিকিৎসা কী?

উত্তর : প্রথমে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এ সময় চিকিৎসকরা শিশুটির মুখ দিয়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ মুখে খাবার দিলে সমস্যা বাড়তে থাকবে। স্যালাইন দিতে হবে। নাকে নল দিয়ে খাবার বের করতে হবে। নাড়িকে বিশ্রাম দিতে হবে।এরপর পরীক্ষা করে দেখতে হবে কী কারণে সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ এক্স-রে, আলট্রাসোনোগ্রাম করে দেখা হয় কেন এই  সমস্যা হচ্ছে।শিশুর কী সমস্যা তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারসাজেশন থাকলে পেট কাটতে হবে, পেট দিয়ে মলদ্বার তৈরি করা হয়, যদি নাড়ির কোনো অংশ পচে যায় তখন কেটে ফলতে হয়। নাড়ি জোড়া লেগে থাকলে ম্যানুয়ালি গরম মব দিয়ে পেটে কমপ্রেশন দিলে আস্তে আস্তে ছুটে যায়।

প্রশ্ন : জন্মগত ত্রুটির ফলে হাসফান ডিজিজ বা পায়খানার রাস্তা তৈরি না হলে সেই ক্ষেত্রে কী চিকিৎসা নেওয়া হয়?

উত্তর : এসব সমস্যায় জন্মের পর পর পেট দিয়ে মলদ্বার বানিয়ে দেওয়া হয়। তারপর শিশুটি একটু বড় হওয়ার পর মলদ্বারে নির্দিষ্ট জায়গাতেই মলদ্বার তৈরি করে দেওয়া হয়। তখন পেটে তৈরি করা রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে বেশ সফলভাবে করা হচ্ছে।

Sharing is caring!

Comments are closed.