শিশুর বডি মাসাজের কিছু গুরুত্বপূর্ন টিপস
বডি মাসাজ শরীরের বিভিন্ন স্থানের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একটি পরিপূর্ণ মাসাজ দিতে পারে শিশুর পূর্ণ তৃপ্তিময় ঘুম। শিশুর বডি মাসাজের মাধ্যমে অনেক গুলো সম্যাসার সমাধান করা যায় যেমন ওজন বৃদ্ধি, শিশুর বদ হজম কমিয়ে ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, সংকুচিত টিস্যু গুলো স্বাভাবিক হয়।
গোসল করার আগে তেল মেখে গোসল করানো একটা ট্রাডিশনও বলা চলে। শিশু জন্মের সাথে সাথে মা ,ঠাকুমা ,দাদী, চাচিরা শিশু লালন পালনের বিভিন্ন টিপস দিয়ে থাকে। আর এটাও বলে থাকে শিশুকে অবশ্যই যেন গোসল করার আগে তেল মেখে গোসল করানো হয়।
কিন্তু হয়ত কখনো জানাই হয় না কীভাবে সঠিক উপায়ে তেল মাসাজ করতে হয় বা এর উপকারিতা। শিশুর বডি মাসাজ করার জন্য বেবি মাসাজিং জেল, বেবি অয়েল বা বেবি লোশন নিয়ে করতে পারেন। সোজা কথা শিশুর শরীর পিচ্ছিল করতে হবে যাতে মাসাজ করতে সুবিধা হয়।
শিশুর বডি মাসাজের উপকারিতাঃ
-বেবি’র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ঠান্ডা ,জ্বর ও পেটের অসুখের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
-বেবি’র মস্তিস্ক গঠনে সহায়তা করে।
-বেবি’র হাড় হয় সুগঠিত ও মজবুত।
-বেবি’র বৃদ্ধি সহায়ক হরমোনকে উদ্দীপিত করে।
শিশুর মাসাজের সময় নিবার্চন
শিশুর বডি মাসাজ যেন কখনই ভরা পেটে না হয়। তাই বলে শিশুর খালি পেটেও যেন না হয় কারণ আমরা সবাই জানি শিশুরা ক্ষুধা পেটে ও ঘুমের সময় একটু খিটখিটে হয়ে যায়। তাই সব চেয়ে ভালো হয় যদি শিশুর খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর শুরু করা যায়। মাসাজের সবচেয়ে ভালো সময় গোসল করার আগে ১/২ ঘণ্টা আগে বা রাতের ঘুমের ১/২ ঘণ্টা আগে।
অব্যশই খেয়াল করতে হবে শিশু যেন অন্য সময়ের চেয়ে বেশি শান্ত থাকে কারণ শিশুর শান্ত থাকাটা খুবই জরুরী তাহলে শিশুর মাসাজ পরিপূর্ণ উপভোগ করতে পারবে। তাই সম্ভব হলে টিভি বন্ধ রাখুন এবং শিশু গান শুনতে ভালোবাসলে অল্প ভলিউমে গান চালিয়ে রাখতে পারেন। সব সময় চেষ্টা করুন রুমের পরিবেশ শান্ত রাখার। আপনি চাইলে বেবির সাথে গুন গুন করে গানও গাইতে পারেন। মোট কথা বেবি যেটা বেশি উপভোগ করবে তাই করতে হবে।
মাসাজ শুরু করার আগে যা যা প্রয়োজন
আপনি চাইলে কুসুম গরম তেল ব্যবহার করতে পারেন তার জন্য গরম পানির বাটির মধ্যে তেলের বাটি রেখে দিন এমনিতেই গরম হয়ে যাবে। সেটা শিশুর জন্য বেশি উপভোগ্য হবে এবং মাসাজ শুরু করার আগে যা যা প্রয়োজন তা হলঃ
১/ একটি চাদর বা তোয়ালে ( বিছানোর জন্য )
২/ তেল বা ক্রিম ( মাসাজের জন্য )
৩/ বাটি (তেল রাখার জন্য )
৪/ নরম তোয়ালে (বডি মোছার জন্য )
৫/ গরম পানি (তেল গরম করার জন্য বা গোসলের জন্য )
৬/ পর্যাপ্ত সময়
শিশুর মাসাজ
১নং চিত্রঃ-
১. প্রথম বেবিকে কোন পাটি বা তোয়ালের উপর শুয়ে দিন। প্রথমে বেবির পায়ের ম্যাসেজ করতে হবে। আর এটা করতে হবে আপনার দুই হাত দিয়ে। প্রথমে বেবির পায়ের উপর থেকে [মানে রানের কাছ থেকে ]এক হাত দিয়ে টেনে নামিয়ে গোড়ালির কাছে থামতে হবে। এইবার অন্য হাত দিয়ে একইভাবে টেনে নামাতে হবে। এই মাসাজটি খুব গুরুত্বপূর্ন একটি মাসাজ। এই মাসাজটি শিশুর জড়তা কাটিয়ে তাড়াতাড়ি হাঁটতে সাহায্য করে এবং শিশুর হাড় মজবুত করে। তাই এই মাসাজটি সম্ভব হলে ৫ বার করবেন।
২. প্রথমে আপনার শিশুর পায়ে কয়েক ফোঁটা অয়েল ড্রপ করুন। এরপর আপনার বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে শিশুর পায়ের পাতায় গোড়ালি থেকে উপরের দিকে টেনে তুলুন এবং উপর থেকে টেনে নামান।
৩. এবার রানের কাছ থেকে মাসাজ করে নামিয়ে এসে পায়ের আঙুলের কাছে থামুন এবং বেবির পায়ের আঙুল গুলোকে একটা একটা করে আস্তে আস্তে টান দিন। এই মাসাজটি ৩ বার করুন।
২নং চিত্রঃ-
১. কাঁধের ওপরের অংশ থাকে মাসাজ শুরু করে বুকের মাঝামাঝিতে এসে শেষ করুন। হালকা চাপের সাথে এই মাসাজ করতে হবে। এই ভাবে আরো ৩/৪ বার করুন এবং শেষ বারও বুকের কাছে এসে হাত উঠাতে হবে।
২. কাঁধ থেকে মাসাজ করতে করতে হাতে এসে শেষ করুন। এরপর হাতে এসে, প্রথমে আপনার বৃদ্ধ আঙুলের সাহায্যে বেবির হাতের তালায় চাপ দিয়ে মাসাজ করুন এবং বেবির আঙুল গুলোকে একটা একটা করে আস্তে আস্তে টান দিতে হবে।
৩. পেটের নিচের ডানপাশ থেকে মাসাজ শুরু করে [ঘড়ির কাঁটার দিকে] পেটের বামপাশে এসে শেষ করুন। এতে করে আপনার শিশু সকল প্রকার পেটের সম্যসা থেকে মুক্তি পাবে। এই মাসাজটি ৩/৪ বার করুন।
৩নং চিত্রঃ-
১. কপালের মাঝখান থেকে তর্জনী বা মধ্যমা আঙুল দিয়ে মাসাজ শুরু করে গালে এসে শেষ করুন। এই মাসাজ করতে হবে আঙুল দিয়ে বৃত্তাকার করে।
২.এই বার আপনার শিশুর মাসাজ শেষের দিকে, তাই বেবিকে উপুড় করে শুয়ে দিন এবং রিল্যাক্স হতে দিন। এরপর শিশুর মেরুদন্ডে আপনার হাতের সাহায্য পিঠের উপর থেকে লম্বা ভাবে টেনে নামান এবং আপনার হাতের আঙুল দিয়ে শিশুর মেরুদন্ডে হাঁটুন। এইভাবে ৫ বার করুন।
3. যদি বেবি কোন ভাবে মাসাজে ব্যথা পায় বা কান্নাকাটি শুরু করে তাহলে সাথে সাথে বেবির মাসাজ বন্ধ করুন। পরের দিন আবার চেষ্টা করুন।
আপনার বেবির প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে মাসাজের জন্য কিছু সময় রাখুন। প্রথম দিকে বেবি মাসাজ উপভোগ নাও করতে পারে। আর একদিনেই সম্পূর্ন মাসাজ সম্ভব না তাই, একটু একটু করে মাসাজ বাড়ান। তাহলে দেখবেন বেবি এক সময় নিজেই মাসাজের জন্য প্রস্তত হবে এবং বেবির সাথে মধুর সময় কাটান।