বাড়ন্ত শিশুর ওজন বৃদ্ধি করতে কোন বয়সে কি কি খাওয়াবেন?

ন্তানের বয়স ও উচ্চতার সঙ্গে ওজনের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ওজন বেশি হলে যেমন শঙ্কা রয়েছে তেমনি ওজন খুব কম হলেও তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এমন অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই খুব দ্রুত ওজন স্বাভাবিক করাটা জরুরি।

আবার আরেকটি সমস্যা হল সভ্যসে বাচ্চাদের শোন্ খাবার দেওয়া যায়না। শিশু জন্মের পর থেকে ১ বছর পর্যন্ত যে যা খায়, তা আবার ১ বছরের পর থেকে খাওয়ানো যাবেনা। তখন খাবারের ধরণ পাল্টাতে হবে. তাই আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত ভাবে জানাবো শিশু ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠার সময় কোন বয়সে কি খাবার খাওয়ালে তার ওজন বৃদ্ধি হবে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

যা যা পড়বেন

  • ১. বাচ্চার ওজন বাড়াতে কি ধরণের খাবার বেছে নেবেন?
  • ২. শিশুর ওজন বাড়ানোর চেষ্টায় ভুল পদক্ষেপ
  • ৩. ০ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত ওজন বাড়ানোর খাবার
  • ৪. ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ওজন বাড়ানোর খাবার
  • ৫. সন্তানের ওজন বৃদ্ধির জন্যে স্কুলের টিফিন

১. বাচ্চার ওজন বাড়াতে কি ধরণের খাবার বেঁচে নেবেন?

বাচ্চাকে কোন বয়সে কি কি খাবার খাওয়াবেন সেটি জানার আগে আপনার জানা প্রয়োজন খাবারের বৈশিষ্ট্য কেমন হওয়া উচিত। খাবারের বৈশিষ্ট্য জানলে আপনার খাবার বেঁচে নিতে খুব সুবিধা হবে ও না জেনে শিশুকে কোনোরকম ভুল খাবারের থেকে আপনি রক্ষাও করতে পারবেন। দেখুন কি ধরণের খাবার শিশুর ওজন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে

ক্যালরি যুক্ত খাবার

বাচ্চার ওজন বাড়ানোর জন্য যেসব খাবারে বেশি ক্যালরি রয়েছে, সেসব খাবার খাওয়ায় মনোযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে মাছ, মাংস, বাদাম, চকলেট, বিভিন্ন বীজ, শুকনো ফল, পনির ও দুগ্ধজাত সামগ্রী ইত্যাদি।

পুষ্টিকর খাবার

যেসব খাবারে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে সেগুলো বেশি করে খাওয়ান বাচ্চাকে। এক্ষেত্রে শুধু প্রোটিনই নয় অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানযুক্ত খাবারও খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে বাচ্চার শরীর যেন পর্যাপ্ত উন্নতমানের কার্বহাইড্রেট পায় সে দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এর জন্য খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন বাদামি আটার রুটি, কলা, ঘি, নারিকেল তেলের খাবার, মুরগির মাংস, ডিম ও ডাল।

সঠিক খাবার

বাচ্চাকে সকালের জলখাবারে কি দিচ্ছেন সেটির দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া বিশেষভাবে দরকার। অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দিয়ে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খাওয়াতে গুরুত্ব দিন। এক্ষেত্রে কার্বহাইড্রেটযুক্ত খাবার হতে পারে একটি ভালো উপায়। এছাড়া খাবারে রাখতে পারেন প্রোটিনযুক্ত খাবার ও চীনাবাদাম।

অল্প খাবার

শিশুর ওজন যদি কম হয় তাহলে হয়ত একবারে বেশি খাবার সে খেতে পারবে না। আর এ কারণে শুধু প্রতি বেলার খাবার খাওয়ালেই হবে না, খাবারের মাঝখানে অল্প কিছু খাবার খাওয়াতে হবে বেশি করে।

শারীরিক অনুশীলন

বাচ্চাকে সবসময় খেলাধুলা ও নানা অনুশীলনের মধ্যে ব্যস্ত রাখবেন কারণ আলসেমি করে বসে থাকলে ভবিষ্যতে তার শারীরিক কার্যক্ষমতা কমে যাবে। আর এতে কমে যেতে পারে খাওয়ার রুচিও। তাই শারীরিক অনুশীলন প্রয়োজন।

বেশি প্রোটিন

বাচ্চার দেহের ওজন বাড়ানোর জন্য প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম। এক্ষেত্রে প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন দুটোই খাওয়াতে হবে। মাছ, মাংসে রয়েছে প্রাণীজ প্রোটিন। পাশাপাশি সয়াবিন, বাদাম, ডাল ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ।

২. শিশুর ওজন বাড়ানোর চেষ্টায় ভুল পদক্ষেপ

মায়েদের একটা বড় চিন্তা হচ্ছে যে তাঁদের বাচ্চার স্বাস্থ্য যথেষ্ট ভালো নয় এবং সে যথেষ্ট খাওয়াদাওয়া করছে না। সেই কারণে বাচ্চাদের যতটা বেশি পরিমাণে সম্ভব খাওয়ানোর চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু এটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক। শিশুদের স্বাস্থ্য আরও ভালো করার জন্য মায়েরা এমন কিছু কাজ করে থাকে যা করা উচিত নয়!

ঘি

অনেকের ধারণা ঘি খাওয়ালে সন্তানের ওজন সঠিক ভাবে বাড়বে। এক চামচ ঘি হজম করতে শিশুর অনেক সময় লাগে। আর বাচ্চার সব খাবারে ঘি থাকা মানে বাচ্চা সেই খাবার দ্রুত হজম করতে পারে না এবং এর ফলে ওর খিদেও কম পায়। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে আসে। অতএব ঘি যুক্ত খাবারদাবার বাচ্চাকে না দেওয়াই ভালো।

কার্বোহাইড্রেট

বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট আর স্টার্চ খাওয়ালে ওজন সহজে বৃদ্ধি পাবে ঠিকই কিন্তু অত্যধিক কার্বোহাইড্রেট আর স্টার্চ থেকে হতে পারে কন্সটিপেশন, পেট ফাঁপা এবং পেট ব্যথা। শিশুকে কোনো ধরণের খাবারই অপরিমিত ভাবে খাওয়ানো উচিৎ নয়। চীজ, মাখন, পাউরুটি, ভাত ইত্যাদি বাচ্চাকে খাওয়াতেই পারেন কিন্তু কম পরিমানে।

ভাজাভুজি

বাচ্চাকে ঘরে ভাজা খাবারদাবার খাওয়ানো মানেই তার ওজন বাড়বে, ফলে বাচ্চাদের সেদ্ধ বা রোস্টেড খাবারদাবারের বদলে সবকিছুই ভেজে খাওয়াতে চেষ্টা করেন যাতে বাচ্চার ওজন বাড়ে; কিন্তু এর ফলে শিশুর বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা এবং অস্বস্তি শুরু হতে থাকে।

জোর করে বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়ানো

মায়েরা অনেক সময় সন্তানদের বেশি করে খাওয়াতে চান বা জোর করে খাওয়াতে চান। ভাবেন শিশুরা নিজেদের খাবারের পরিমান বোঝে না, কিন্তু অসুবিধা হল জোর করে খাওয়ানোর ফলে বাচ্চারা নিজেদের শরীরের প্রয়োজন এবং খিদে নিজেরাই বুঝতে পারেন না। তাই খাবার গিলতে শুরু করে। জোর করে খাওয়ালে কোনো দিন ওজনও বাড়বে না।

৩. ০ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত ওজন বাড়ানোর খাবার 

স্তন্যপান (০ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত)

সদ্যজাত শিশুর জন্যে প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ হল সবথেকে পুষ্টিকর ও ওজন বৃদ্ধিকারক খাদ্য। এই সময় শিশু তার যাবতীয় পুষ্টি স্তন্যপান করেই নিয়ে থাকে; আর তাই এই সময় মায়ের প্রয়োজন অত্যন্ত্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ সম্মত খাদ্য গ্রহণ করা. মা এই সময় নিজের যতটা খেয়াল রাখবেন ততটাই শিশু ভালো থাকবে।

বিভিন্ন রকমের পিউরি (৬ থেকে ১১ মাস)

৬ মাস পেরোনোর পরে শিশুকে একেবারে স্তন্যপান করানো কখনোই বন্ধ করবেন না. স্তন্যপান করানোর পাশাপাশি আস্তে আস্তে শিশুকে নরম খাদ্য দিতে শুরু করুন। এই নরম খাদ্যকে বলে পিউরি যা বিভিন্ন রকমের ফল ও সবজি যেমন আলু, আপেল, কুমড়ো, ডাল, মিষ্টি আলু, কলা, ডিমের কুসুম ইত্যাদি ভালো করে অল্প জল দিয়ে চটকে তৈরী করতে হয়.

বিভিন্ন ধরণের পরিজ (১২ মাস থেকে ২ বছর)

যেই শিশু স্তন্যপান করতো, তার জন্যে সময় অনুযায়ী শক্ত খাদ্য গ্রহণ রূপান্তরিত করা একটি বিশাল বড় পরিবর্তন। এখন আপনাকে তার জন্যে র সেদ্ধ বা পিউরি তৈরী করতে হবেনা, না আপনাকে ভাত, গম বা ফল সবজি মেখে বা চটকে তাকে খাওয়াতে হবে। আপনি অনায়াসে এখন তাকে শক্ত খাদ্য অর্থাৎ না মেখে খাওয়াতে পারেন। যেহেতু আপনার শিশু ক্রমস বেড়ে উঠছে, তাদের পুষ্টির প্রয়োজন হয় যেগুলি একজন বয়স্ক মানুষ ও দৈনিক ভিত্তিতে খেয়ে থাকেন। আপনাকে তার সাথে সাথে এটাও হেয়ালি রাখতে হবে যে আপনি শিশুকে যেই খাদ্যি খাওয়ান না কেন, সেটি যেন শিশুর গলায় না আটকে যায়। আপনি আপনার বাচ্চার ৭ মাস বা তার পরের বয়স থেকে কঠিন খাদ্যগুলি শুরু করতে পারেন, তবে এটি আপনার সন্তানের খাদ্য প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতার উপর নির্ভর করে যে সে কতটা শক্ত খাদ্য ভালভাবে খেতে পারবে।

আপনার শিশুর খাবারের তালিকায় একটি কঠিন খাদ্য শুরু করা তার জন্যে সত্যিই খুব কঠিন হতে পারে এবং আপনার জন্যে অনেক অনিশ্চয়তা হয়ে যায়। কোনও এমন প্রশ্ন যা আপনার মনে দ্বিধা তৈরী করে, তার জন্যে প্রশ্নের আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। যদি আপনি দেখেন যে আপনার শিশু মুখ থেকে খাবার ছুঁড়ে ফেলেছে এবং নিখুঁত খাবার খাওয়া থেকে বিরত করছে, তাহলে তাদের বাধ্য করবেন না। আপনার সন্তানেকে তার মত করে সময় নিতে দিন। আপনার সন্তানকে দৃঢ় খাবারে জোর করলে সে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই ধীরগতির হয়ে যেতে পারে। যেই মুহূর্তে আপনি আপনার সন্তানের খাদ্য তালিকার মধ্যে কঠিন খাদ্য যোগ করছেন, আপনার উচ্চ সতর্কতা রাখা উচিত। এলার্জি প্রতিক্রিয়া বা কোন প্রকার ঘামাচি হতে পারে এরকম খাদ্য দেওয়ার আগে একটু যাচাই করে নিন। আপনার সন্তানের খাদ্যের মধ্যে কঠিন খাদ্য প্রবর্তন করার সময় নিশ্চিত করুন যে আপনি কোন নৃশংস ভুল করছেন না। যে খাবারটি ৪৮ ঘন্টার জন্য খোলা রাখা হয়েছে তা ছুঁড়ে ফেলুন। আপনার সন্তানেকে মাটিতে পড়ে গেছে এমন খাবার খেতে দেবেন না। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোন কথা আসেনা। আপনার শিশুর পেট অত্যন্ত ভঙ্গুর। তাদের অনাক্রম্যতা ব্যবস্থা এখনও তৈরি হচ্ছে, তাই অসুস্থতার সম্ভাবনা থাকে, ফলে কোনোরকম ঝুঁকি না।

যদি আপনি বাড়িতে এখনো সেদ্ধ খাবার তৈরী করছেন, তাহলে থামিয়ে দিন। গাজর, বীট বা সবুজ সবজির সেদ্ধতে নাইট্রোজেনের উচ্চ উপাদান রয়েছে যা আপনার শিশুর পেটকে মেরে দিতে পারে, ফলে সে আর পরে কঠিন খাদ্য খেতে পারবেনা। বোরন একই সবজি কঠিন অবস্থায় খাওয়ানো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। শক্ত খাদ্য যেমন বাদাম, বীজ, রেসিং, ক্যান্ডি, আঙ্গুর, কাঁচা সবজি, পপকর্ন, চিনাবাদাম মাখন এবং মাংসের অংশ এড়িয়ে চলুন। আপনার শিশুর গলায় আটকে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে এই কঠিন খাবারগুলি অবশ্যই খাওয়াতে পারবেন। হ্যাঁ, এই খাদ্যশস্যগুলি অত্যন্ত পুষ্টিকর, তবে এই পুষ্টিগুলির পরিপূরক বিকল্পগুলি সন্ধান করুন যতক্ষন না পর্যন্ত আপনার শিশুটি নির্দিষ্ট সময়ে পা দিচ্ছে। আপনার সন্তানের খাদ্যে মধু ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। এটির প্রক্রিয়া নেওয়ার মত তাদের পেটের অবস্থা সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মধু যোগ করা বিষাক্ত হতে পারে, কারণ এর ফলে ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয় যার থেকে বিষক্রিয়া ঘটে।

৪. ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ওজন বাড়ানোর খাবার 

ফল ও সবজি 

আপনি যদি বুকের দুধ খাওয়ানোর সাথে সাথে বন্ধ করে থাকেন তবে আমরা বুঝতে পারি যে আপনি এখন কোন অবস্থায় আছেন। এটি পুরোপুরি স্বাভাবিক এবং এটি অনুভব করা এবং স্বস্তি বোধ করা। এর পরের ধাপটি আপনার বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে ভাল কাজ করে তা জানতে হবে, তার পাচন প্রণালী এবং বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রেখে। আপনার একা এই প্রয়োজন নয়। নীচে তালিকাভুক্ত করা হলো কয়েকটি খাবারদাবার তৈরির প্রণালী যা অত্যন্ত সুস্থ এবং আপনার সন্তান উপভোগ করবে।

নীচে তাদের একটি উদাহরণ দেওয়া হলো।

  • মিষ্টি আলুর ভর্তা- আপনার চাই ১টি মিষ্টি আলু, মিষ্টি দই, সিরিয়াল এবং অল্প দারুচিনি গুঁড়ো। সব উত্পাদন গুলি একসাথে মিশিয়ে অল্প অল্প পরিমানে আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
  • কুমড়োর ভর্তা- কিছু পরিমান কুমড়ো সেদ্ধ করে হাত দিয়ে মেখে ভর্তা তৈরী করে নিন। এর মধ্যে অল্প দারুচিনি ও মিষ্টি দই মেশান। ভালোভাবে মিশিয়ে নিন আপনার পছন্দ মতো ঘনত্ব পাবার জন্য।
  • কলা মাখা- আপনার শিশু মাখা বা তরল কি ধরণের খেতে পছন্দ করে তেমন ভাবে তৈরী করুন। এই ধরণের খাবার আপনার শিশুর জন্য উপকারী ও তার খেতেও সুবিধা ।
  • গাজরের স্টু- চাল, ওটমিল এবং দইয়ের সাথে আপেল ও গাজর মেশান। আপেল ও গাজর সেদ্ধ করে নেবেন। মিশ্রণ একটি পেস্ট মত তৈরী করুন। অল্প অল্প পরিমানে আপনার শিশুকে এই অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ান।
  • পীচ- আপনার ছোট্ট শিশুর জন্য পীচ! আপনার শিশুর জন্য পিউরি এবং রান্না করা পিচ ভাল হয়। এবং পীচ আপনার শিশুর ভিটামিন এবং পুষ্টির একটি বড় উত্স।

আপনার শিশুর প্রতিটি ফলের এবং সবজি আলাদাভাবে দেখে নিন যে, তাদের মধ্যে কোনো এলার্জি আছে কিনা। এই সব খাবার পরীক্ষা করার পর, আপনি শিশুর জন্য সুস্বাদু খাবার তৈরি করতে পারেন। যদি তারা উপরের খাবারগুলির কোনও প্রতিক্রিয়া দেখেন, তবে সেটি তাকে দেবেন না এবং আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর অবিলম্বে পরামর্শ নিন।

পরিজ ছেড়ে অন্য রকমের খাদ্যের সাথে পরিচয় করান 

২ বছর বয়স থেকে শিশুকে আসতে আসতে পরিজ বা পিউরি থেকে সরিয়ে স্বাভাবিক খাদ্যের দিকে রুচি আনতে হবে, কারণ এখন ওজন বৃদ্ধি ও পুষ্টি শুধুমাত্র পিউরি বা পরিজ থেকে পাওয়া যাবেনা। আর তার ওপর শিশু এখন অন্য স্বাদ পেতেও বেশ পছন্দ করবে। তাছাড়া এই হল মোক্ষম সময় শিশুর মধ্যে খাওয়ায় রুচি তৈরী করার। তার আগে আপনাকে জানতে হবে কতটা পরিমান চিনি বা নুন তার খাবারে আপনি দেবেন। সাধারণত শিশুকে বাড়তি খাবার শুরু করানোর জন্য বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। মনে রাখতে হবে ছয় মাস থেকে এক বছরের পর্যন্ত শিশুর পুষ্টি তার পরবর্তী জীবনে সুস্বাস্থ্যের মূল ভিত্তি।তাই অনেক সতর্কতার সাথে এবং সঠিক নিয়ম মেনে বাড়তি খাবার শুরু করতে হবে। বাড়তি খাবারের মধ্যে সর্বপ্রথম শিশুটিকে চালের গুঁড়োর সুজি দেওয়া যেতে পারে। যদি তাতে শিশুটির কোনো অসুবিধা না হয় তবে ধীরে ধীরে সুজি থেকে খিচুড়ি শুরু করতে হবে।

শিশুর খিচুড়ি প্রথমে চাল, ডাল ও তেল দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে তাতে সবজি যোগ করতে হবে। ১ বছরের আগের শিশুকে গাজর, আলু , পেপে ইত্যাদি নরম সবজি দেওয়া যেতে পারে। খিচুড়িতে অভ্যস্ত শিশুকে ধীরে ধীরে মাছ, মাংস খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে। প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য সাধারণত নরম কাঁটা ছাড়া মাছ, মুরগির মাংস, মুরগির স্যুপ, ডালের জল ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বাড়তি খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধও চলবে। যা শিশুর প্রোটিনের সবচেয়ে বড় উৎস। ফলের মধ্যে সাধারণত নরম পাকা কলা, পাকা আম, সিদ্ধ আপেলের পিউরি ও কমলা লেবুর রস দেওয়া যেতে পারে। তবে একসঙ্গে সব ধরনের ফল খাওয়ানো শুরু করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে একটি ফলে অভ্যস্ত করে আরেকটি ফল খাওয়ানো শুরু করা ভালো।

লক্ষ রাখতে হবে, শিশুর খাবারে যেন কোনোভাবে বাড়তি চিনি দেওয়া না হয়। ঝাল, মসলা ও তেলের বিষয়ে যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে, শিশু খাবারে ক্ষেত্রে সময়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ৩ ঘণ্টা ব্যবধানে শিশুকে খাবার খেতে দিতে হবে। খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাটি,চামচ, ঝিনুক ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবে ফিডার ব্যবহার করা যাবে না। শিশুকে কখনই জোড় করে খাওয়ানো যাবে না। শিশুর খাবারের পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। একটি শিশুর পাকস্থলি অনেক ছোট হয়। সাধারণত প্রতিটি খাবারের পরিমাণ ১০০ থেকে ১২০ML মধ্যে রাখা যেতে পারে। অবশ্য এই বিষয়টি শিশুর বর্তমান ওজন ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। যেহেতু বাড়তি খাবার এই সময় শুরু করা হয়। তাই খাবারের পাশাপাশি জল খাওয়াতে হবে। শিশুর খাবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। বাসি পচা খাবার কখনই শিশুকে দেবেন না।

স্যুপ, প্যানকেক ও হালুয়া 

এই সময় বাচ্চা হয়তো সরাসরি সবজি বা ফল খেতে চাইবে না. তাই নানা রকমের সবজি দিয়ে আপনি ঘরেই বানিয়ে ফেলতে পারেন স্যুপ, প্যানকেক বা হালুয়া। ববিশেষ করে স্যুপের মধ্যে মুরগির মাংস বা ডিম্ দিলে তা ওজন ও শক্তি বাড়ানোর জন্যে আরো কার্যকরী হয়ে ওঠে. এই সময় থেকে আমিষ ও নিরামিষ সব রকম খাদ্যই শিশুকে দিতে ভুলবেন না

৫. সন্তানের ওজন বৃদ্ধির জন্যে স্কুলের টিফিন (৫ বছর বয়সের উর্ধে)

এই তো সেইদিন হাসপাতাল থেকে তোয়ালেতে মুড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসলাম ছোট্ট বাবুটিকে। আর আজকে সে কাঁধে ছোট্ট স্কুলব্যাগ নিয়ে হাঁটি হাঁটি পা করে প্রথমবার স্কুলে যাচ্ছে। এই ৫ বছরের ছোট্ট মানুষটির সামনে এখন নতুন এক রঙিন অধ্যায় অপেক্ষা করছে। প্রথমবার অপরিচিত পরিবেশে যাওয়া, একটু একটু করে নিত্যনতুন অনেককিছু শেখা, নতুন নতুন বন্ধু তৈরি হওয়া, এবং স্কুলে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সব বাচ্চারা একসাথে বসে টিফিন খাওয়া।

কী দেয়া যায় ছোট্ট শিশুর স্কুলের প্রথম দিকের টিফিনে? যেটা দেখতে সুন্দর হবে, খেতে মজাদার হবে, এবং সেই সাথে শিশু নিজের হাতে অন্যের সাহায্য ছাড়া খেতে পারবে? অনেক বাবা-মা অভিযোগ করেন যে তাদের আদরের সন্তান মতো ভরা টিফিনবক্সটি বাসায় ফেরত নিয়ে এসেছে। রোজকার কাহিনী! সকাল সকাল ঘুম থেকে চটজলদি তৈরি করে ফেলা যায় এমন মজাদার কিছু স্ন্যাক্স বা টিফিনের রেসিপি যারা তাদের বেবিকে সদ্য স্কুলে পাঠাচ্ছেন বা পাঠাবেন, তাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।

ফ্রেঞ্চ টোস্ট উইথ চিজি সসেজ টপিং

উপকরণ: ২ পিস পাউরুটি, ১টি ডিম, ১ চা চামচ গুঁড়ো দুধ, ১ স্লাইস চীজ, ১ পিস সসেজ (সেদ্ধ করে অল্প তেলে ভেজে ঠাণ্ডা করে চিকন করে স্লাইস করে নেয়া), ১ চিমটি লবন. ১ চিমটি সাদা গোলমরিচে, ভাজার জন্য তেল

প্রণালী:

একটি ডিম ভেঙে তাতে ১ চিমটি লবন, ১ চিমটি সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো আর ১ চা চামচ গুঁড়ো দুধ দিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। পাউরুটির দুই পিঠ ডিমে মাখিয়ে নিন। ওভেনে একদম কম আঁচে কড়াইয়ে অল্প তেল দিয়ে পাউরুটির পিস ছেড়ে দিয়ে উপরের পিঠে স্লাইস করা সসেজ গুলো ডিমের মিশ্রণের উপর ছড়িয়ে দিন, তার উপরে এক স্লাইস চীজ দিয়ে পাউরুটিটা উল্টে দিন। ৪০-৪৫ সেকেন্ড পর পাউরুটির স্লাইসটা নামিয়ে প্লেটে কিচেন টিস্যুতে রাখুন অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়ার জন্য। মাইক্রোওয়েভে তৈরি করতে চাইলে ওভেনপ্রুফ ছড়ানো বাটিতে তেল ব্রাশ করে উভয় পাশ ৪০ সেকেন্ড করে বেক করলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার ফ্রেঞ্চ টোস্ট উইথ চিজি সসেজ টপিং।

চিজি কলিফ্লাওয়ার বা ব্রকলি পপার্স

উপকরণ : ছোট একটি ফুলকপি/ব্রকলি, ৫০ গ্রাম চিজ, সামান্য লবন, ডিম ১টি, আধা কাপ তরল দুধ, আধা কাপ ময়দা, ১/৪ চা চামচ মরিচের গুঁড়ো, ভাজার জন্য তেল

প্রণালী:

ফুলকপি বা ব্রকলি ছোট বাইট সাইজের টুকরো করে অল্প জলে সামান্য লবন দিয়ে ঢেকে সিদ্ধ করুন। একটি পাত্রে ডিম, ময়দা, দুধ, মরিচ গুঁড়ো, চিজ ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এবার সিদ্ধ করা ফুলকপি বা ব্রকলির টুকরোগুলো ঐ মিশ্রণে ডুবিয়ে তুলে গরম গরম ডুবো তেলে লালচে সোনালি করে ভেজে নিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল ঝটপট মজাদার চিজি কলিফ্লাওয়ার/ব্রকলি পপার্স।

বোনলেস চিকেন ফ্রাই

উপকরণ : ৩০০ গ্রাম হাড়বিহীন মুরগির বুকের মাংস, ১টি ডিম, আধা কাপ ময়দা/চালের গুঁড়ো, লবন (স্বাদ অনুযায়ী), সামান্য সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো (ঐচ্ছিক), ব্রেড ক্রাম্ব/টোস্ট বিস্কিটের গুঁড়ো, আধা চা চামচ রসুন বাটা, আধা চা চামচ আদা বাটা, ভাজার জন্য তেল

প্রণালী :

আগের রাতেই মুরগির মাংস ভালো করে ধুয়ে বাচ্চা হাতে নিয়ে খেতে পারবে এমন সাইজে টুকরো করে কেটে নিন। একটি পাত্রে ৪ কাপ জলে সামান্য লবন, আধা চা চামচ আদা বাটা, আধা চা চামচ রসুন বাটা দিয়ে মুরগির টুকরোগুলো ঢেকে সিদ্ধ করে নিন। জলটা ফেলবেন না, এ জলটা হলো চিকেন স্টক যা পরে অন্যান্য রান্নায় ব্যবহার করতে পারবেন, একটি পাত্রে ডিম ফেটিয়ে তাতে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো, লবন ভালো করে মিক্স করে নিন। আরেকটি পাত্রে ময়দা/চালের গুঁড়ো রাখুন। আরেকটি পাত্রে ব্রেড ক্রাম্ব বা টোস্ট বিস্কিটের গুঁড়ো।এবার সেদ্ধ করা মুরগীর টুকরোগুলো এক এক করে প্রথমে ডিমের মিশ্রণে দিন, তুলে সাথে সাথে ময়দার মিশ্রণে দিন, তারপর আবার ডিমের মিশ্রণে, তারপর আবার ময়দার মিশ্রণে দিয়ে শেষে ব্রেড ক্রাম্ব মাখিয়ে ছড়ানো প্লেটে বোনলেস চিকেনের টুকরোগুলো পাশাপাশি রেখে ডীপ ফ্রিজে তুলে রাখুন।সকালে বেবিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার আগে গরম গরম ডুবো তেলে ওভেনের মাঝারি আঁচে দুই পাশ ভেজে বেবির টিফিন বক্সে দিয়ে দিন মজাদার বোনলেস চিকেন ফ্রাই যা বেবি নিজের হাতে খেতে পারবে মজা করে।

প্রণ ফ্রাই

উপকরণ: মাঝারি সাইজের চিংড়ি ১০টি, সয়াসস ১ চা চামচ, ওয়েস্টার সস ১ চা চামচ, ফিশ সস ১ চা চামচ, টমেটো সস ১ চা চামচ, ডিম ১টি, আধা কাপ ময়দা বা চালের গুঁড়ো, সামান্য সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো, ভাজার জন্য তেল

প্রণালী:

চিংড়ির মাথা ফেলে পুরো খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে সব রকম সস মাখিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। একটি পাত্রে ডিম ফেটিয়ে তাতে সামান্য লবণ আর গোলমরিচের গুঁড়ো মিক্স করে নিন। আরেকটি পাত্রে ময়দা বা চালের গুঁড়ো ঢেলে রাখুন। এবার চিংড়ি গুলো এক এক করে প্রথমে ডিমের মিশ্রণে দিন, তুলে সাথে সাথে ময়দার মিশ্রণে দিন, তারপর আবার ডিমের মিশ্রণে, তারপর আবার ময়দার মিশ্রণে দিয়ে ছড়ানো প্লেট পাশাপাশি রেখে ডীপ ফ্রিজে তুলে রাখুন।সকালে বেবিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার আগে গরম গরম ডুবো তেলে চুলার মাঝারি আঁচে দুই পাশ ভেজে বেবির টিফিন বক্সে দিয়ে দিন মজাদার প্রণ ফ্রাই।

চকো মিনি মাফিন

উপকরণ: ২টা পাকা ছোট কলা, ১টা ডিম, আধা কাপ ময়দা, দেড়-দুই চা চামচ কোকো পাউডার, এক চা চামচ বেকিং পাউডার, দুই চিমটি বেকিং সোডা, দুই চিমটি লবন, ৪ চা চামচ চিনি (কমবেশি করতে পারেন), ১/৩ কাপ দুধ, ২-৩ ফোঁটা ভ্যানিলা এসেন্স, ৩ টেবিল চামচ গলানো মাখন/ভেজিটেবল অয়েল

প্রণালী:

খুব ভাল ভাবে মিক্স করতে হবে, ইলেকট্রিক হ্যান্ড মিক্সার দিয়ে করতে পারলে ভালো, অথবা খুব দ্রুত গতিতে কাঁটা চামচ বা এগ বিটার নেড়ে হাতে ও করতে পারেন। ইলেকট্রিক ওভেন ৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৯০ ডিগ্রি কেলভিনে প্রিহিট করে নিন। মাফিন ট্রে-তে কাগজের তৈরি মাফিন কাপগুলো বসিয়ে তেল ব্রাশ করে কাপের ২/৩ অংশ তে মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে ২০ মিনিট বেক করুন।মাইক্রোওয়েভে করতে চাইলে ওভেনপ্রুফ বাটিতে তেল/ঘি ব্রাশ করে মিশ্রণ ঢেলে ৪ মিনিট বেক করুন। তৈরি হয়ে যাবে মজাদার বানানা চকো মিনি মাফিন। যেসব বাচ্চারা মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করে তাদের জন্য খুব মজার টিফিন এই ছোট্ট ছোট্ট মাফিন। শিশু জন্মানোর পর থেকে বাবা মায়েদের সব চেয়ে বড় চিন্তা হয় তার ওজন বৃদ্ধি নিয়ে কারণ এই সময় ওজন কম থাকা মানে রোগের বেশি পরিমানে শিকার হওয়া। কিন্তু ওজন বৃদ্ধি করতে গিয়ে মায়েরা অনেক সময় না জেনে বাচ্চাকে ভুল নিয়মে খাবার খাইয়ে দেন অথবা কোন বয়সে কোন খাবারটি খেতে হবে সেটা বুঝে উঠতে পারেন না. তাই আজকের পোস্টে আমরা শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে ৫ বছরের ওপর পর্যন্ত বয়স অবধি কি কি খাবার খেলে ওজন বাড়বে সেই সংক্রান্ত তথ্য দিলাম। (tinystep)

Sharing is caring!

Comments are closed.