শিশুর রুচি কমে যাওয়ার ৭টি প্রধান কারণ ও প্রতিকার

শিশুর রুচিহীনতা খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। বাবা-মা থেকে শুরু করে পরিবারের সবাই শিশুর রুচি নিয়ে চিন্তিত থাকেন। শিশুর রুচি কমে যাওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

চলুন, শিশুর রুচি কমে যাওয়ার প্রধান ৭টি কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেই-

১. শিশুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে সংবেদনশীল না হওয়া

শিশুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে বাবা-মায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাওয়ানোর সময় যথেষ্ট সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। কখন শিশুকে খাওয়ানো দরকার আর কখন শিশুর পেট ভরে গেছে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। খাওয়ার সময়টাকে শিশুর কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।

২. খাবারের ব্যাপারে জোরাজুরি করা

অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর খিদে নাই, তারপরও তাকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। এতে হিতে বিপরীত হয়। শিশুর রুচি কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এটি। গবেষণায় দেখা গেছে, জোর করার কারণে খাবারের প্রতি শিশুর মনে ভয় ও অনীহা জন্ম নেয়। তাই শিশুকে জোর করে খাওয়ানো উচিত নয়। তার বদলে শিশুর সাথে ঠিকমত যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। তার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী তাকে খাবার দিতে হবে এবং নিয়মমত খাওয়ার ব্যাপারে তাকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। যেসব মায়েরা শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে পরিচর্যা করেন তাদের শিশুদের রুচি ভালো থাকে।

৩. শিশুকে সময় কম দেয়া

আজকাল বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে বাবা-মায়ের পক্ষে শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া সম্ভব হয় না। এ বিষয়টি শিশুর বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে,

মায়ের কাছ থেকে যথাযথ সময় না পেলে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মা ঠিকমত সময় না দিলে এবং যত্ন-পরিচর্যা না করণে বাচ্চার রুচি কমে যায়। যেসব মায়েরা শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে পরিচর্যা করেন তাদের শিশুদের রুচি ভালো থাকে।

৪. অসুস্থতা

শারীরিক অসুস্থতা রুচি কমে যাওয়ার একটি সাধারণ কারণ। সাধারণত জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, কিংবা ডায়রিয়া হলে শিশুর খাবারের পরিমাণ কমে যায়। অসুখ ভালো হয়ে গেলে বেশিরভাগ শিশুরই রুচি ঠিক হয়ে যায়। শিশুর শারীরিক অসুস্থতা হলে খাওয়ানোর ব্যাপারে জোর করা যাবে না। এসময় শিশুকে অল্প-অল্প করে বারবার খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি দ্রুত সুস্থতার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

৫. কৃমির সংক্রমণ

কৃমির সংক্রমণ শিশুদের জন্য খুবই খারাপ একটি বিষয়। কৃমি শিশুর পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে সেখানে পরজীবি হিসাবে অবস্থান করে। এর ফলে শিশুর নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। রুচিও কমে যায়। কৃমির সংক্রমণ হলে শিশুকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।

৬. রক্তশূন্যতা

রক্তশূন্যতা রুচি কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। রক্তশূন্যতায় ভোগা শিশুরা অন্য শিশুদের তুলনায় দূর্বল ও ক্লান্ত থাকে। এরা বেশিরভাগ সময়ই বিরক্ত থাকে এবং প্রায়ই কান্নাকাটি করে। সময়মত রক্তশূন্যতার চিকিৎসা না করালে এসব শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

৭. মানসিক চাপ

কোন কারণে শিশুর উপর মানসিক চাপ থাকলে তার রুচি কমে যায়। শিশুর যদি রুচি কমে যায়, ঘুম কম হয় এবং শিশুকে সব সময় বিরক্ত মনে হয়, তবে বুঝতে হবে কোন কারণে শিশুটি মানসিক চাপে ভুগছে। এ সময় শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। তার মানসিক চাপ কমিয়ে হাসি-খুশি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত শিশুরা ভয় পেলে, একাকী থাকলে কিংবা বাবা-মায়ের কাছ থেকে কম সময় পেলে মানসিক চাপে ভুগে।
ডা. নুরুন নাহার নায়লা-রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর, আইসিডিডিআর,বি। (susastho24)

Sharing is caring!

Comments are closed.