মায়েদের শিশুকে কখন কতটুকু খাবার দেওয়া প্রয়োজন?

সদ্যোজাত মানেই বাবা-মার চিন্তা। আর সেটাই স্বাভাবিক। সবচেয়ে বড় চিন্তা, সন্তানকে কখন খাওয়াবেন, কতখানি খাওয়াবেন ? কখনও মনে হয়, বাচ্চার পেট ভরছে তো ? আবার কখনও মনে হতে পারে বেশি খাওয়ানো হয়ে গেছে। বাচ্চার খাওয়ার সময় ঠিক আছে তো ? এরকম হাজারও প্রশ্ন ঘুরতে থাকে মাথায়।

তবে সংশয় কাটাতে একটি সাধারণ সময় সূচি মেনে চলতে পারেন। অধিকাংশ পুষ্টিবিদরাও এমনই পরামর্শ দেন।

প্রথম মাস

জন্মের পর শিশুর জন্য প্রথম ও আদর্শ খাবার হল মায়ের বুকের দুধ। প্রথম ছয় মাস শিশুকে যার কোনও বিকল্প নেই। প্রথম এক-দুদিন মাত্র কয়েকবার খাওয়ানো হয় সদ্যোজাতকে। ধীরে ধীরে তার হার বাড়তে থাকে। এক সপ্তাহের শিশুর সারাদিনে অন্তত আটবার মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজন। যার পরিমাণ ৬০-১২০ মিলিলিটার। প্রথমবার ফিডিংয়ে শিশু ৪০ মিনিট সময় নেয়। এক মাসের মধ্যে এই সময়ের হার কমতে থাকে। তবে এই সময় সন্তান যতটা খেতে চাইবে, ততটা খাওয়ানো ভালো।

কীভাবে বুঝব, যে আমার সন্তানের খিদে পেয়েছে কি না ? ভাবেন অধিকাংশ মায়েরা। শিশুর কিছু লক্ষণ দেখে এর টের পেতে পারেন। যেমন, ঠোঁট চাটা, মাথা এপাশ-ওপাশ করা এবং বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে কান্না। তখনই বুঝতে হবে খিদে পেয়েছে। শিশু যত বেশি বুকের দুধ খাবে, মায়ের শরীরে দুধের উৎপাদন তত হারে বাড়বে। রাতেই শিশুর মধ্যে বেশি দুধ খাওয়ার প্রবণতা থাকে।

জন্মের পর শিশুর ওজন কিছুটা কমে। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবেই যে ওজন কমছে, এমনটা কিন্তু নয়। শুরুর দিকে শিশুর ওজন কম হওয়া স্বাভাবিক। যদিও কিছুদিন পর থেকেই আবার ওজন বাড়তে শুরু করে।

এক থেকে চার মাস

এই বয়সে বাচ্চাদের সাধারণত প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর দুধের প্রয়োজন হয়। ২৪ ঘণ্টায় ওদের প্রয়োজন ১২০-২১০ মিলিলিটার দুধ। যদি শিশু ফর্মুলা মিল্ক বা কৌটোর দুধ খায়, সেক্ষেত্রে এক থেকে তিন মাসের শিশুকে সারাদিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর ১২০ থেকে ১৫০ মিলিলিটার দুধ খাওয়াতে হবে। তিন থেকে চার মাসের শিশুকে সারাদিনে প্রতি আড়াই থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা অন্তর ১৫০-২১০ মিলিলিটার দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে এই সময় শক্ত খাবার খাওয়ানো বেশ বিপদের। কারণ এই বয়সে সদ্যোজাতের মুখ ও গলার পেশির সঠিক বিকাশ হয় না।

চার থেকে ছয় মাস

ছয় মাসের শিশু সারাদিনে এক লিটার পর্যন্ত দুধ খেতে পারে। ছয় মাসের পর থেকে অনেকেই শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেওয়া শুরু করেন। তবে মনে রাখবেন বাড়তি খাবার খাওয়াচ্ছেন বলে বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করবেন না। শুরুর দিকে সারাদিনে এক থেকে দু’বার নরম খাবার খাওয়ান। খাবারের পরিমাণ অবশ্যই নির্ভর করবে আপনার সন্তান কতটা খেতে চাইছে তার উপর। যদি শিশুর অল্পতেই পেট ভরে যায়, তাহলে দেখবেন সে খাবার মুখ থেকে খাবার বের করছে। মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। এই সময় প্রতি দুই থেকে চার ঘণ্টা অন্তর বুকের দুধ খাওয়ান।

ছয় থেকে আট মাস

এই বয়স শিশুর জন্য খুবই সংবেদশীল। তাই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি সারাদিনে অর্ধতরল খাবার দেওয়া হয়। শিশুকে দিনে দুই থেকে তিন বার ফল বা সবজি চটকে খাওয়াতে পারেন। এই খাবারের পরিমাণ অন্তত চার থেকে আট টেবিলচামচ হওয়া দরকার। পাশাপাশি শিশুকে প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টায় বুকের দুধ বা বোতলের দুধ খাওয়ান।

আট থেকে দশ মাস

এই বয়সে শিশুর খাদ্যতালিকায় রাখুন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। সারাদিনে তিনবার ভারি খাবার উপযুক্ত। আপনার ছোট্ট সোনাকে ততটাই খাওয়ান, যতটা সে খেতে চাইছে।

দশ থেকে বারো মাস

দিনে তিন বার ভারি খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস বজায় রাখুন। পাশাপাশি শিশুকে প্রতি চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় বুকের দুধ খাওয়ান।

মনে রাখুন

আপনার শিশু পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে, তা জানার জন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। সাধারণত প্রথম দুদিনে আপনাকে দুই থেকে তিনবার ন্যাপি পালটাতে হবে। কিছুদিন পর থেকে আপনার শিশুর দিনে অন্তত ছয় বার ডায়পার্স পালটাতে হবে। প্রস্রাব হবে ফ্যাকাশে ও দুর্গন্ধমুক্ত। পটি হবে গাঢ় হলুদ রংয়ের।

শিশু সঠিক পরিমাণে খাবার পাচ্ছে না, তা বোঝার জন্য কিছু বিষয়ে নজর রাখুন। দু সপ্তাহের মধ্যে যদি শিশুর ওজন না বাড়ে, তার অর্থ দুধের পরিমাণ কম হচ্ছে। যদি ছয় থেকে আটটি ডায়াপার্স না লাগে অথবা দুই থেকে তিন বারের কম পটি হয়, তবে বুঝতে হবে কোনও সমস্যা আছে। যদি বাচ্চার ঘুমঘুম ভাব হয়, সেটাও ইঙ্গিত দেয় যে শিশু পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে।

Source:tinystep

Sharing is caring!

Comments are closed.