ডিসপোজেবল নয়, ব্যবহার করুন কাপড়ের ডায়পার: এই ১০টি কারণে

আপনার ঘর আলো করে যখন ছোট্ট সোনাটি আসে, তখন তাকে নিয়ে কতই না চিন্তা আপনার। তার খাওয়াদাওয়া, পরিচর্যা, পরিচ্ছন্নতা কারণ এর কোনওতাতেই খামতি হয়ে গেলেই আপনার শিশুর সমস্যা হতে পারে। তা এই পরিচ্ছন্নতার কথা যখন উঠলই, তখন ডায়পারের কথায় আসা যাক। বাজারে গেলে হরেক ফ্যাশনের ডায়পার পাওয়া যাবে। আপনার শিশুর জন্যে ঠিক কোনটা জুতসই হবে, সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হয়তো বেশ বেগও পেতে হতে পারে কারণ কোন ডায়পার কী জিনিস দিয়ে তৈরী, তা আপনার শিশুর ত্বকের পক্ষে উপকারী হবে বা উপকারী, দামই বা কত, মাসে আপনার বাজেট ছাড়িয়ে যাবে কিনা, ইত্যাদি নানা বিষয় মাথায় রাখতে হয়। আমরা বলি কী, ওর একটাও কেনার দরকার নেই। না না, তাই বলে বলছি না আপনার সোনাকে ডায়পার না পরিয়েই রাখতে। আমরা বলছি সাধারণ কাপড়ের তৈরী ডায়পার কিনুন না বা বাড়িতেও কাপড় কেটে বানিয়ে ফেলতে পারেন। মানে বাংলায় যাকে বলে লেংটি। এর প্রচুর উপকারিতা রয়েছে যা বাইরের ওই ব্র্যান্ডের ডায়পারে পাবেন না। আসুন, দেখা যাক ১০টি এমন উপকারিতা:

#১ ত্বকের পক্ষে উপকারী

বাইরের যে ডিসপোজেবল ডায়পার কিনতে পাওয়া যায়, তাতে শিশুর কোমল ত্বকে ফুসকুড়ি বেরোতে পারে — গরমে, ঘষাঘষিতে। এই ডায়পারগুলি যেহেতু খোলা নয়, তাই ওগুলিতে হাওয়া ঢোকে কম আর তাই সমস্যা দেখা দেয়। এই ডায়পারগুলি বারবার প্রস্রাব শুষে নেওয়ার ফলে তা বেশিক্ষণ পরিয়ে রাখাও অনুচিত। নরম কাপড়ের ডায়পার সেদিক থেকে প্রস্রাবের সঙ্গে সঙ্গেই বদলে ফেলা যায়। এতে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনাও কম। সব মিলিয়ে ত্বক থাকে পরিচ্ছন্ন আর আপনার সোনাও থাকে মহা ফূর্তিতে।

#২ সুষ্ঠু মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস

কাপড়ের ডায়পারে যেহেতু একবার মলমূত্র ত্যাগ করলেই তা বদলানোর প্রয়োজন পড়ে, তাই শিশু তাড়াতাড়ি শিখে যায় কখন তার পোশাক বদলের সময় হয়েছে। একটু অভ্যেস হয়ে গেলেই অস্বস্তিতে সে জানিয়ে দেবে যে তার ডায়পার ভিজে গিয়েছে আর তাড়াতাড়ি বদলানোর ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যাবে। ডিসপোজেবল ডায়পার ব্যবহার করা শিশুর এই জ্ঞান আসতে বেশি সময় লাগবে। পৃথিবীতে না এসেই আমাদের মেরে ফেলতে পারে ভিনগ্রহীরা: বলছে স্টাডি! মন খুলে না হাসলে শরীরের কত ক্ষতি হয় জানা আছে? হিটলারের রমনীরা!

#৩ খরচ

সাধারণ কাপড়ের ডায়পার নিঃসন্দেহে আপনার অনেক খরচ বাঁচাবে। ডিসপোজেবল ডায়পার যেহেতু একবারের বেশি পরা যায় না, তাই তা অনেকটা করে কিনতে হয়। এছাড়া ব্র্যান্ডের দাম তো আছে। অবশ্য, ডিসপোজেবল ডায়পার যে একদমই হেলাফেলার তা নয়। যদি বাইরে কোথাও যান, তখন শিশুকে ডিসপোজেবল ডায়পার পরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ভালো। কারণ রাস্তাঘাটে ঘরোয়া নেংটি খোলা আর পরিষ্কার করার সমস্যা হতে পারে।

#৪ বার বার ব্যবহারযোগ্য

কাপড়ের ডায়পার বা ন্যাপি কয়েকটা কিনে রাখলে আপনার অনেকদিন চলে যাবে কারণ এগুলিকে ধুয়ে আবারও ব্যবহার করা যায়। ডিসপোজেবল ডায়পার একবারই পরাতে পারবেন আর ব্যবহার হয়ে গেলে ফেলে দিতে হবে। তবে কাপড়ের ডায়পার অবশ্যই ডেটল দিয়ে ধোবেন পুনরায় ব্যবহারের আগে যাতে কোনওরকম সংক্রমণ না হয় শিশুর। পরিচ্ছন্ন হওয়া ছাড়াও ডায়পার যেন শুকনো থাকে।

#৫ রাসায়নিক

ডিসপোজেবল ডায়পার যেহেতু ব্যবসায়িক পণ্য, তাই তাতে নানারকম এটা-সেটা রাসায়নিক ব্যবহার হয়ে থাকে যা শিশুর শরীরের পক্ষে মোটেই ভালো নয়। অন্যদিকে, কাপড়ের ডায়পারের সেরকম ক্ষতিকারক কোনও দিক নেই। অতএব, এটিই ভালো আপনার বাচ্চার পক্ষে।

#৬ হালকা , পরে আরাম

সুতি, তুলো, ফ্লানেল ইত্যাদি দিয়ে তৈরী কাপড়ের ন্যাপি দোকানের ডায়পারের থেকে হালকা হয় এবং শিশুরা পরে আরাম পায়।

#৭ দুর্গন্ধ

বদ্ধ হওয়ার ফলে এবং বারংবার প্রস্রাবের কারণে ডিসপোজেবল ডায়পারগুলির প্যাডের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি দুর্গন্ধ দেখা দেয় যা বাচ্চার শরীরের পক্ষে ভালো নয়। কাপড়ের ডায়পারে সেই সমস্যা নেই।

#৮ শারীরিক প্রভাব

ডিসপোজেবল ডায়পারের মধ্যে যে রাসায়নিক থাকে, তাতে শিশুদের শাসকষ্ট হতে পারে। তাই ওগুলি যত কম ব্যবহার করা যায় ততই ভালো।

#৯ পরিবেশ বান্ধব

যদি একটু বৃহত্তর অর্থে ভাবা যায়, ডিসপোজেবল ডায়পার মোটেও পরিবেশ বান্ধব নয়। এই যে এত এত ডায়পার রোজ ফেলা হচ্ছে, ভাবুন তো তাতে কত আবর্জনার সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া এই পণ্য তৈরী করার একটা বড় পরিবেশগত মূল্য রয়েছে। কাপড়ের ন্যাপি তো সেদিক থেকে বলা যায় অনেক ‘নির্দোষ’।

#১০ যৌনাঙ্গের সমস্যা

জার্মানিতে কয়েকজন বিজ্ঞানী সম্প্রতি জানিয়েছেন যে যে-সমস্ত ছেলেকে ছোটবেলায় অত্যাধিক ডিসপোজেবল ডায়পার পরিয়ে রাখা হয়, তাদের যৌনাঙ্গের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং বড় হলে তাদের বীর্য উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে। অবশ্য এব্যাপারে উপসংহার এখনও কিছু টানা হয়নি। আরও গবেষণা চলছে। সব মিলিয়ে, কাপড়ের ডায়পার যে-কোনওদিন ডিসপোজেবল ডায়াপারের থেকে অনেক বেশি ব্যবহারযোগ্য। আপনিও দেখুন ব্যবহার করে। আপনার সন্তানও হয়েছে সেটাই চাইছে।

Source:boldsky

Sharing is caring!

Comments are closed.