শীতে ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে শিশুকে বাঁচাতে কি করবেন?

ঠান্ডা পরা মানেই শুধু যে সর্দি-কাশির আক্রমণ তা তো নয়, সেই সঙ্গে হয় আরও সব বিদকুটে, অসহ্যকর রোগ, যার মধ্যে অন্যতম হল ডাস্ট অ্যালার্জি। তাই অ্যালার্জির মার থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় সাবধনতা অবলম্বন করে নেওয়া উচিত। আর এই কাজটি করবেন কিভাবে, সে সম্পর্কে কোনও ধরণা আছে কি? ডাস্ট অ্যালার্জির সঙ্গে লড়বেন কিভাবে?

ধুলো-বালি, শরীরে প্রবেশ করার পর ইমিউন সিস্টেমে যদি হাইপারসেনসিটিভ রিঅ্যাকশান হয়, তাহলেই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। আসলে এমন সময় আমাদের শরীরে উপস্থিত শ্বেত রক্ত কণিকা ইমিউনোগ্লোবিউলিন.ই নামক অ্যান্টিবডির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন মাত্রায় কাজ শুরু করে যে শরীরে বিশেষ অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হতে শুরু করে। তখনই নানাবিধ অ্যালার্জির লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রসঙ্গত, ডাস্ট অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে সাধারণত যে যে লক্ষণগুলি প্রকাশ পেয়ে থাকে, সেগুলি হল- বারে বারে হাঁচি, মাইগ্রেন পেন, নাক থেকে জল পরা, চোখ, কান এবং ঠোঁট চুলকানো, জ্বর, বমি বমি ভাব, ডায়ারিয়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এবং তলপেটে যন্ত্রণা হওয়ার মতো লক্ষণও দেখা যেতে পারে। এবার সময় এসেছে ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করার। এক্ষেত্রে যে যে নিয়মগুলি মানলে এমন ধরনের রোগ থেকে সহজেই দূরে থাকা সম্ভব হয়, সেই নিয়মগুলি হল…

১. প্রতিদিন যদি ঘর পরিষ্কার না রাখেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ধুলো জমতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে আপনার সঙ্গী হবে নানান ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, যারা সুযোগ বুঝে আক্রমণ চালালেই খেল খতম! সেই কারণেই তো ডাস্ট অ্যালার্জিতে আক্রান্তদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন, তা হল যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা ভুলেও ঘর ঝাঁট দেবেন না। পরিবর্তে প্রতিদিন ঘর মুছবেন। এমনটা করলে ধুলো-বালিও জমবে না, সেই সঙ্গে ঘর পরিষ্কারের সময় অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমবে।

২. আপনাদের জানা আছে কিনা জানা নেই। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সারা বাড়ির মধ্যে বিছানাতেই মনে হয় সবথেকে বেশি পরিমাণে অ্যালার্জেনদের বাস, তাই তো অ্যার্লার্জির প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিয়ম করে বিছানার চাদর, বালিশের কভার এবং গায়ে দেওয়ার চাদর পরিষ্কার করবেন। এমনটা করলে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারি উপাদানেরা আমাদের ধারে কাছে ঘেঁষারও সুযোগ পাবে না। ফলে রোগ ভোগের আশঙ্কা কমবে।

৩. বাড়ির বাইরে বেরনোর সময় মনে করে মাস্ক ব্যবহার করবেন। এমনটা করলে ধুলোবালি নাকের অন্দরে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে। প্রসঙ্গত, ঘর পরিষ্কারের সময়ও প্রয়োজন হলে মাস্ক ব্য়বহার করবেন। কারণ সেই সময়ও আমাদের চারপাশে ধূলোর পরিমাণ কিছু কম থাকে না।

৪. বাড়িতে থাকাকালীন এবং গাড়িতে যাতায়াতের সময় মনে করে এসি ব্যবহার করবেন। এমনটা করলে আশেপাশে ধুলোবালির পরিমাণ কমতে থাকবে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। তবে শীতকালে এসি ব্যবহার বেজায় কষ্টকর। তাই প্রয়োজন বোধ করলে এয়ার পিউরিফায়ারকেও কাজে লাগাতে পারেন।

৫. যারা ডাস্ট অ্যালার্জির শিকার, তারা যদি ঘন ঘন ধূমপান করেন, তাহলে অ্যালার্জির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই আগামী দিন-তিন মাস সুস্থ থাকতে ভুলেও ধূমপান করার কথা ভাববেন না যেন!

৬.সম্প্রতি হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় এমনটা দাবি করা হয়েছে যে কুকুরের কারণে সাধারণত কোনও অ্যালার্জি হয় না। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের ঝুঁকি নেওয়া কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই আসন্ন শীতকালে অ্যালার্জির মার থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব কুকুর-বিড়াল থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। আসলে কুকুর এবং বিড়ালের লোমে এমন কিছু অ্যালার্জেন থাকে, যাদের প্রভাবে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই প্রয়োজনীয় সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন রয়েছে।

tinystep

Sharing is caring!

Comments are closed.