সন্তান জন্ম দেবার বিভিন্ন উপায়

বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে সকল ধরণের ব্যব্স্থায় পরিবর্তন এসেছে। মানুষের প্রয়োজনের উপযোগী প্রায় সকল প্রানীর জন্ম প্রক্রিয়ায় মানুষের তৈরি বিকল্প ব্যবস্থা সংযোযিত হয়েছে। এমনকি মানুষের সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে অনেক ধরণের বিকল্প ব্যবস্থা। আর সেগুলোর সবকিছু নিশ্চয়ই মানুষের কল্যাণের জন্যই।পৃথিবীতে সন্তানের মা হওয়াই সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। এই আনন্দের সাথে তুলনা করা যায় এমন কিছু অনেকেই খুঁজে পাবেন না৷ এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি৷ তবে সেই সন্তান জন্ম দেয়ার বা মা হওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের কল্যানে যতগুলো বিকল্প ব্যবস্থা চালু হয়েছে চলুন সেগুলো জেনে নেই৷

১. ভেজাইনাল বা যোনি ডেলিভারি

প্রাকৃতির নিয়মে সবচেয়ে আদিম উপায় হচ্ছে ‘ভেজাইনাল ডেলিভারি’৷ এই উপায়ে সন্তান ‘বার্থ ক্যানেলের’ মাধ্যমে, মানে যোনিনালী দিয়ে মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে৷ অবশ্য ঠিক কখন প্রসব হবে, তা আগেভাবে সঠিকভাবে জানা যায় না৷ অধিকাংশ নারী এই প্রক্রিয়াতেই গর্ভধারণের ৩৮-৪১ সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসব করেন৷ এভাবে জন্ম নেয়া শিশুর রোগবালাই সংক্রমণের মাত্রা কম৷ তবে সন্তান প্রসবের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়৷

২. সিজারিয়ান সেকশন বা সি-সেকশন

বাস্তবতা হচ্ছে, সব শিশুর জন্ম ভেজাইনাল বার্থের মাধ্যমে হয় না৷ বিশেষ করে জন্মদানের সময় জটিলতা সৃষ্টি হলে ‘সি-সেকশন’, অর্থাৎ নারীর তলপেট এবং জরায়ুর চামড়া কেটে বাচ্চা বের করে আনতে হয়৷ কেউ কেউ প্রসববেদনা এড়াতে এবং যোনির প্রসারতা ঠেকাতেও সিজারিয়ান অপশন বেছে নেন৷ কারো কারো বিশ্বাস যে, যোনিপথে সন্তান জন্ম দিলে পরবর্তীতে যৌনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে৷

৩. সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ

অতীতে মনে করা হতো, একবার সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলে সেই নারী পরবর্তীতে আর প্রাকৃতিক উপায়ে, অর্থাৎ যোনিনালীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না৷ তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণায় পরিবর্তন এসেছে৷ সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ অবশ্যই সম্ভব৷ আর সিজারিয়ানে বাচ্চা জন্মদানের পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে নারীর নানারকম শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির নজিরও রয়েছে৷

৪. ভেক্যুয়াম এক্সট্রাকশন

ভেজাইনাল ডেলিভারির সময় কোনো কারণে নবজাতক বার্থ ক্যানেলে আটকে গেলে ভেক্যুয়াম পাম্পের মাধ্যমে তাকে বের করে আনা হয়৷ এই পদ্ধিততে একটি নরম, অনমনীয় কাপ শিশুর মাথায় আটকে দেয়া হয়৷ এরপর ভেক্যুয়ামের মাধ্যমে সেটি টেনে বের করে আনা হয়৷

৫. ফোরক্যাপস ডেলিভারি

এটাও ভেজাইনাল বা নর্মাল ডেলিভারির সময় জটিলতা তৈরি হলে ব্যবহার করা হয়৷ এই পন্থায় বড় দু’টো চামচের মতো দেখতে ফোরক্যাপস শিশুর মাথা আটকে বার্থ ক্যানেল থেকে তাকে সহজে বের করে আনা হয়৷ সাধারণত গর্ভধারিণী প্রসবের সময় পর্যাপ্ত চাপ দিতে না পারলে এই পন্থা কাজে লাগানো হয়৷

৬. ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)

অনেক নারীর জন্য গর্ভধারণই জটিল৷ এক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেয়ার একটি আধুনিক পন্থা হচ্ছে আইভিএফ৷ এ পন্থায় চিকিৎসক নারীর ডিম্বাণু সূচের মাধ্যমে বের করে আনেন এবং ল্যাবরেটরিতে তা শুক্রাণুর সঙ্গে মেলান৷ পরে ভ্রুণ সৃষ্টির পর সেটা ক্যাথিটার ব্যবহার করে নারীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরপর ভ্রুণটি নিজে থেকেই মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপিত হয়৷ দাতার ডিম্বাণু ও শুত্রাণুর মাধ্যমেও এভাবে মা হওয়া যায়৷

৭. সারোগেসি

যেসব নারী একেবারেই সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম বা সন্তান জন্ম দেয়া যাঁদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার, তাঁদের ক্ষেত্রে মা হওয়ার একটি উপায় হচ্ছে সারোগেসি বা অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া নেয়া৷ এক্ষেত্রে আইভিএফ পদ্ধতিতে গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীর জরায়ুতে ভ্রুণ বা শুক্রাণু প্রবেশ করানো হয়৷

আমাদের এই পোস্টটি পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

Source: tinystep

Sharing is caring!

Comments are closed.