নবজাতকের মায়ের খাবার

যে অপরিসীম কষ্ট স্বীকার করে একজন মা সন্তানের জন্ম দেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্তান   জন্মানের পরও তাদের কষ্ট আর ত্যাগ ফুরিয়ে যায় না। তাই প্রসবের পরেও মায়েদের সঠিক খাবার নিশ্চিত করতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও বুকের দুধ তৈরি করার জন্য মাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ সব ধরণের খাবার খেতে হবে। প্রসব-পরবর্তীতে মায়ের স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ৭৫০ ক্যালরি খাবার বেশি খাওয়া দরকার। নবজাতকের মায়ের নিজের দেহের ক্ষয়পূরণ ও বুকে দুধ উত্পাদনের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এসময় প্রায় ২৬ গ্রাম বেশি আমিষ প্রয়োজন হয়। এজন্য নবজাতকের  মাকে প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাবার যথা-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে। সাধারণত নবজাতকের  মায়ের বুকে দৈনিক ২০-৩০ আউন্স দুধ তৈরি হয়। ২ গ্রাম খাদ্য প্রোটিন থেকে ১ গ্রাম দুধের প্রোটিন তৈরি হয়। এটি তখনই সম্ভব মায়েরা যদি দৈনিক ১০০ গ্রাম প্রোটিনের মধ্যে অর্ধেক বা দু-তৃতীয়াংশ প্রাণিজ প্রোটিন যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি গ্রহণ করেন। প্রাণিজ প্রোটিন মায়ের দুধের উত্কৃষ্ট উপাদান।

একজন মা যিনি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, স্বাভাবিক খাবারের পর যেটুকু বেশি খাবারের প্রয়োজন তার তালিকা এখানে দেওয়া হলো। এই তালিকার সাথে ২ বেলা একটু বেশি নাস্তা খেলে অতিরিক্ত ৭৫০ কিলো ক্যালরি পাওয়া যাবে। নিম্নলিখিত খাদ্য উপাদানগুলোতে কি পরিমাণ ক্যালো-ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায় তা উল্লেখ করা হলো:ভাত ২ কাপ বা ২টি রুটিতে আছে ১৬২ কিলো ক্যালোরি/শক্তি, ডাল ১ কাপে আছে ১২০ কিলো ক্যালোরি/ শক্তি, সবজি ১ কাপ (হাফ করে দুই প্রকার) আছে ৩৫ কিলো ক্যালরি/ শক্তি, শাক ১/২ কাপে আছে ২০ কিলো ক্যালরি/শক্তি, তেল ১.৫ চামচ-এ আছে ৬৭ কিলো ক্যালরি/শক্তি, মাছ/মাংস/ডিম ২ টুকরা বা ১টা ডিমে আছে ৮৫ কিলো ক্যালরি/শক্তি, ৫টি মৌসুমি ফল বা কলা ১টা করে ১০০ কিলো ক্যালোরি/শক্তি পাওয়া যাবে।

সাধারণভাবে  আমরা বলি মা যা খেতেন তার চেয়ে এক মুঠো ভাত বেশি খাবেন। নবজাতকের মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাবার যেমন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি নবজাতকের মায়ের খাবার নিয়ে

কুসংস্কারও দূর করতে হবে। ঝাল খেলে বাচ্চার পেটের ভীষণ সমস্যা হয়, ঠান্ডা খেলে বাচ্চারও ঠান্ডা লাগে, বেগুন চিংড়ি খেলে বাচ্চার অ্যালার্জি হতে পারে আর টক তো খাওয়াই যাবে না, এতে যে  সন্তানের  বুদ্ধি কমে! প্রকৃতপক্ষে এসব বিধিনিষেধের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তবে হ্যাঁ, এমন কিছু খাবার আছে যা অবশ্যই মায়েদের এড়িয়ে চলা উচিত যেমন – অতিরিক্ত লবণ, ভাজাপোড়া,

কৃত্রিম রঙ, বাসি ও নষ্ট খাবার, অ্যালকোহল, ধূমপান ইত্যাদি। মায়েরা কাঁচা বা আধা সিদ্ধ মাংস খাবেন না। ছত্রাক পড়া পনির, অপাস্তুরিত দুধ,  কাঁচা বা আধা সিদ্ধ ডিম এড়িয়ে চলুন। আগে বাচ্চার এলার্জি হওয়ার ভয়ে মাকে বেগুন, চিংড়ি, চীনা বাদাম খেতে নিষেধ করা হতো কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, মায়ের এসব খাওয়ার সঙ্গে শিশুর এলার্জি হওয়ার কোনোই যোগসাজশ নেই। মা উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন খেলে  শিশুর অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বলে ক্যাফেইন খাওয়া সমপূর্ণ বন্ধ করতে হবে না, দৈনিক ২০০ মিলিগ্রামের বা এক কাপের   বেশি ক্যাফেইন না খেলেই হলো। ওষুধ অনেক ওষুধ বুকের দুধ কমিয়ে দেয়, আবার নবজাতকের ক্ষতি করতে পারে তাই মায়েদের   ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। বস্তুত পক্ষে নবজাতকের মায়েরা কিছু খাবার এড়িয়ে চলবেন তো অবশ্যই কিন্তু যেগুলো খেতে নিষেধ নেই সেগুলো বেশি করে খেতে হবে। মায়ের নিজের জন্য এবং শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির জন্যই এটা করতে হবে। এই জন্য পরিবারের সবার উচিত মায়ের একটু বেশি যত্ন নেয়া।

ডা. আবু সাঈদ শিমুল
রেজিস্ট্রার, শিশু বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Source:ittefaq

Sharing is caring!

Comments are closed.