সদ্যজাত শিশুদের মধ্যে এই ৭ ধরণের অসুখ কোনোভাবেই অবহেলা করবেন না
জন্ডিস
জন্মের পরেই শিশুরা যে’সব রোগে ভুগতে পারে, জন্ডিস সে’গুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে এ’তে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে যাওয়াই হচ্ছে নবজাতক শিশুর জন্ডিস হওয়ার মূল কারণ। বিলিরুবিন হচ্ছে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ (কেমিক্যাল) যা সাধারণত শরীরের ভিতরের রেড ব্লাড সেল ভেঙে তৈরি হয়। নবজাতক শিশুদের রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ সাধারণত বেশি থাকে কারণ তাদের রক্ত অতিরিক্ত রক্ত বহন করার জন্য থাকে প্রচুর পরিমাণে রেড ব্লাড সেল। নবজাতকদের ক্ষেত্রে যেহেতু যকৃৎ সম্পূর্ণ ভাবে পরিণত নয় সেহেতু তাদের রক্তের বাড়তি বিলিরুবিন সহজে নিষ্কাসিত করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ডাক্তারের কথা মত চললে নবজাতক শিশুদের জন্ডিস সারিয়ে তোলা খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়।
নিউমোনিয়া
নিউমোনিয়ার মত সংক্রমণ নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, এ’তে ফুসফুসে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে। নিউমোনিয়া হলে ফুসফুস ফুলে ওঠে এবং ফুসফুসের ভিতর তরল পদার্থ জমা হয় যার ফলে বাচ্চারা একটানা কাশিতে ভুগতে পারে, এমন কি শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়াও আশ্চর্য নয়। সাধারণত শীতকালে বাচ্চারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। অতএব শিশুর সর্দি কাশির দেখলেই যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করুন যা’তে সমস্যা আরও বেড়ে না যায়। আর যদি দেখেন যে অতিরিক্ত সর্দির ফলে শিশুর স্তন্যপান করতে বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ভাইরাল ইনফেকশন
আগেই বলা হয়েছে যে নবজাতক শিশুদের ইমিউনিটি বেশ কমজোরি এবং তারা সহজেই ভাইরাল জ্বর বা ফ্লুয়ের পাল্লায় পড়ে ভুগতে থাকে। যে’সব জীবাণুর কারণে শিশুর ভাইরাল জ্বর বা ফ্লু হতে পারে, সে’গুলোর উৎসও আমাদের আশপাশে থাকে; যে কোন সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকেই এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কাজেই ঘরে যদি কেউ সর্দিকাশি বা ভাইরাল জ্বরে ভোগেন, তবে শিশুকে তাঁর থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখাই ভালো। আর শিশুর মধ্যে ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ দেখতে পেলেই অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে ছোটা উচিৎ। আর আপনার শিশুর বয়স যদি ছ’মাস থেকে দু’বছরের মধ্যে হয়, তাহলে ফ্লুয়ের বিরুদ্ধে ওকে প্রস্তুত রাখতে অবশ্যই ওকে ফ্লু-প্রতিষেধক টিকা দেওয়াবেন।
ডায়রিয়া
ডায়রিয়ায় ভোগেনি এমন শিশু ভূভারতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শিশুদের ডায়রিয়ায় নাজেহাল হওয়াটা আদৌ কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। আর ডায়রিয়ার মূলে যে জীবাণু রয়েছে তার নাম হল রোটাভাইরাস। এই জীবাণু আক্রমণ করে ইন্টেস্টাইনে এবং এর ফলে হয় গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস। এ’তে ইন্টেসটাইনের ভিতরের পরত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজেই ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলেই চেষ্টা করা উচিৎ যাতে শিশুর শরীরে জলের অভাব (ডিহাইড্রেশন) না দেখা দেয়। শিশু যদি যথেষ্ট পরিমাণে স্তন্যপান বা ফর্মুলার দুধ খেতে পারে তাহলে চেষ্টা করুন নির্দিষ্ট সময় অন্তর ওকে এগুলো খাইয়ে যেতে।
পোলিও
আজকাল নবজাতকদের মধ্যে পোলিও বড় একটা দেখা যায় না কারণ সরকারের পোলিও বিরোধী অভিযান পোলিওর প্রাদুর্ভাবকে প্রায় অনেকটাই দূর করতে সক্ষম হয়েছে। পোলিওর আক্রমণ প্রথমেই প্রভাব ফেলে শিশুদের মগজ এবং মেরুদণ্ডে যার ফলে শিশুরা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে পারে। এই রোগ যে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির মল, থুতু বা কফের থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আপনার শিশুকে ওরাল পোলিও টিকা (ও পি ভি) আর ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া পোলিও টিকা (আই পি ভি); দু’টোই দেওয়াবেন ওর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে। সচেতন থাকুন, শিশুর পোলিও টিকা দেওয়াতে যেন কখনও কোনও ভুল না হয়।
হাম (মিসেলস)
হাম (মিসেলস) এক অত্যন্ত সংক্রামক রোগ আর এ’টা ছড়ায় যে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে। এ’তে শুরুর দিকে সর্দিকাশি আর জ্বর থাকে। দু’দিনের মাথায় দেখা দেয় অন্যান্য সমস্যা যেমন শ্বাসনালীর বন্ধ হয়ে আসা (ব্রঙ্কাইটিস), ফুসফুসে সংক্রমণ ( ব্রোঙ্কিওলাইটিস), কানের সংক্রমণ বা বাচ্চাদের গলা ফুলে যাওয়ার মত উপসর্গ।
চিকেন পক্স
চিকেন পক্স বাচ্চাদের মধ্যে আকছার দেখা যায়। এ’তে সারা গায়ে দেখা দেয় পক্সের দানা যে’গুলো বিশ্রী রকমের চুলকানির উৎস হয়ে দাঁড়ায়। পক্সের সময় হালকা ফ্লুয়ের লক্ষণও দেখা দেয়। তবে আশার কথা এই যে শিশুদের একবার চিকেন পক্স হয়ে গেলে ভবিষ্যতে ফের এই রোগের পাল্লায় পড়ার সম্ভাবনা বেশ কম।তবে উপরে উল্লেখ করা রোগগুলোর বাইরেও বাচ্চাদের ছোটখাটো অনেক রোগ এবং সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন পেটে ব্যথা, কানে সংক্রমণ, বমি ইত্যাদি। এই ধরণের সমস্যা শিশুদের ক্ষেত্রে আকছারই দেখা যায় এবং ওরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যাগুলো আপনা থেকেই কমে আসে। কারণ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
Source: tinystep