নবজাতককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করার ১০টি টিপস
নবজাতকের শরীরের সবটুকুই পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি তবে কয়েকটি বিশেষ অঙ্গের আলাদা যত্ন প্রয়োজন ৷ যেমন নাভি, দুপায়ের ফাঁক, চোখ, নাক ,কান ,নখ এবং জিহ্বা ইত্যাদি৷
বাচ্চা জন্মের পর থেকেই তাকে জীবাণু সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিচের ১২টি টিপস ফলো করে চলুন।
১। হাত ধুয়ে নিন
শিশুর সংস্পর্শে আসার আগে নিজের হাতটি সবসময় ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন ৷ ব্যবহার করতে পারেন জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ অথবা ইন্সট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
শিশুকে কেউ কোলে নেবার আগে তার হাত ধুয়ে নিতে বলুন ৷ এছাড়া শিশুকে পরিষ্কার করার আগে নিজের হাতটি ধুয়ে তবেই স্পর্শ করুন শিশুকে ৷
হাত ধুয়ে নিন শিশুর ডায়াপার বা প্রস্রাব-পায়খানা করা কাপড়-কাঁথা পাল্টাবার পরেও৷
২।Umbilical cord বা নাভি
শিশুর জন্মের পরপরই প্লাসেন্টা থেকে কাটা হয় ৷ নাভি কাটার পর ডাক্তাররা তা ক্ল্যাম্প করে বা পেঁচিয়ে ক্লিপের মত প্লাস্টিক বা মেটালের কর্ড ক্ল্যাম্প বা টেইপ লাগিয়ে দেন ৷ এতে নাভিতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয় আর ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমে আসে ৷
নাভি শুষ্ক রাখুন ৷ যত বেশি শুষ্ক রাখা যাবে তত দ্রুত নাভি শুকিয়ে ঝরে যাবে ৷ এজন্য নাভিকে তেল, সাবান, লোশন , পানি থেকে দূরে রাখুন । তবে কখনো কখনো ডাক্তাররা নাভিতে আলকোহল দিয়ে মুছে দিতে বলেন ৷ একটি তুলোর বলে বা কটন বাডে এলকোহল লাগিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে নাভি পরিষ্কার করুন ৷
হয়তো সঠিকভাবেই শুকাচ্ছে কিন্তু তারপরও কখনো কখনো নাভি থেকে বাচ্চার কাপড়ে হলদে দাগ পড়তে পারে ৷ বদলে দিন কাপড় আর ধুয়ে নিন। সাধারণত সাত থেকে চোদ্দ দিনের মধ্যে নাভি শুকিয়ে আপনাআপনি ঝরে যায় ৷
৩। নবজাতকের নখ
বাচ্চাদের নখ খুব দ্রুত বাড়ে ৷ ওর নখের আঘাতে ওর ত্বকে লাগতে পারে আঁচড় ৷ আঁচড় গভীর হলে ঘা হবার সম্ভাবনা থাকে ৷
সুন্দর করে কেটে দিন ছোট্ট নখগুলো ৷ শিশু ঘুমিয়ে গেলেই কাটুন তাহলে নড়াচড়ার বা কেটে যাবার ভয় থাকবে না ৷ আর জেগে থাকা অবস্থায় কাটতে চাইলে কারো সাহায্য নিন ৷তবে খুব বেশি চেপে ধরবেন না ৷ সাধারণ বেবি নেইলকাটার বা কাঁচির মত বেবি নেইলকাটার যেটাই ব্যবহার করুন না কেন ব্যবহারের আগে তা জীবাণুনাশক মেশানো পানিতে একবার ধুয়ে নিন ৷ বাচ্চাদের নখ সাধারণত নরমই থাকে তবে শক্ত মনে হলে গোসলের পর নখ কাটুন৷
৪। শিশুর চোখের যত্ন
বাচ্চার চোখের ময়লা পরিষ্কার করতে ভুলেও খালি হাতে খুটতে যাবেন না । কুসুম গরম পানিতে নরম কাপড়ের টুকরো চুবিয়ে নিন ৷ হালকা করে চেপে পানি ঝরিয়ে মুছে নিন বাচ্চার চোখ ৷
অনেক সময় অসাবধানে বাচ্চার চোখে বুকের দুধ যেতে পারে ৷ চোখে বুকের দুধ ঢুকে গেলে বাচ্চার চোখে প্রদাহ হতে পারে ৷ তাই সতর্ক থাকুন ৷
কিছু কিছু শিশুর চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে । নরম কাপড়ে বারবার মুছে নিন ।এ সমস্যা এক দুই মাস পর ঠিক হয়ে যায় । বেশি সমস্যা মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
৫। নবজাতকের জিহ্বা পরিস্কার রাখুন
দুধ খাবার কারনে শিশুর জিহ্বায় সাদা আস্তর পড়তে দেখা যায় ৷ পরিষ্কার নরম শুকনো কাপড় ব্যবহার করে মুছে দিন আপনার ছোট্ট সোনাবাবুর জিভ ৷
৬। বাচ্চার কান পরিষ্কার রাখা
কানের ভেতরে কটনবাডস দিয়ে পরিষ্কার করতে যাবেন না ৷ কানের পর্দায় আঘাত লাগতে পারে ৷এছাড়া কানের ভেতরে কিছু লোম থাকে যা বাইরের ময়লাকে ঠেলে দেয় ৷ কটনবাডের আঘাত থেকে এদের রক্ষা করা জরুরি ৷
পরিস্কার রাখুন কানের উপরিভাগ ৷ কটনবল বা নরম কাপড়ে মুছে দিন ৷
৭।নাকের যত্ন
কানের মত নাকেও কটনবাডস না দিয়ে নরম সুতি কাপড়ে কোনা পেঁচিয়ে পরিষ্কার করে নিন ৷ এতে শিশুর আঘাত পাবার সম্ভাবনা থাকবে না ৷ নাকে সর্দি বা ময়লা জমে বন্ধ হয়ে থাকলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয় এবং দুধ টানতে চায় না । সুতরাং খেয়াল রাখুন এবং পরিস্কার রাখুন ।
৮। নবজাতকের পোষাক
এ সময় শিশুর প্রজনন অংগ বা জেনিটাল অনেক বেশি নরম কোমল থাকে ৷ শিশুকে পোষাক পরানোর সময় এবং ডায়াপার বাছতে গিয়ে খেয়াল রাখুন তা আরামদায়ক এবং উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন কি না ৷
ছেলেশিশু ও মেয়েশিশুর জেনিটাল এর যত্ন ও পরিচ্ছন্নতায় পার্থক্য রয়েছে ৷
মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে তার যোনিপথের বাইরে ফোলা ফোলা ভাব ও লালচে থাকা স্বাভাবিক ৷ ভেজা নরম পরিষ্কার কাপড় দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করুন ৷সামান্য বেবি সোপ ব্যবহার করুন ৷মুছুন সামনে থেকে পেছনে( front to back)৷ প্রতিবার ডায়াপার পাল্টানোর পর বা পায়খানার পর এভাবে মুছে সামান্য বেবি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন ৷ মুছতে পারেন ওয়াইপস দিয়েও ৷ব্যবহৃত ওয়াইপস দ্রুত ফেলে দিন ৷
ছেলে শিশুর জননাঙ্গের ব্যাপারেও যত্নশীল হোন ৷ পেনিসের মাথায় চামড়ার নিচে ময়লা জমে যায় ৷ পরিষ্কার করুন ৷ ভেজা নরম কাপড়ে সামান্য বেবি সোপ লাগিয়ে মুছে নিয়ে পেট্রোলিয়াম জেলি বা বেবি অয়েল লাগিয়ে নিন ৷তাহলে ডায়াপার বা কাপড়ের ঘষায় ব্যথা পাবে না ৷এছাড়া আপনি ওয়াইপস (wipes) ব্যবহার করতে পারেন ৷
৯। ৷বাচ্চার জন্য সবসময়ই উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন ডায়াপার ব্যবহার করবেন।
১০। শিশুকে গোসল করানো
প্রথমবার শিশুর গোসল দেয়াটা অন্য এক অভিজ্ঞতা ৷ এত ছোট একটা শরীর যাকে ঠিকমত ধরাই মুশকিল ভাবছেন তাকে গোসল দেবেন কিভাবে?
নাভি না শুকানো পর্যন্ত ডাক্তাররা সাধারণত শিশুর গোসল দিতে বারণ করে থাকেন ৷ ততদিন পর্যন্ত আপনি বরং শিশুর গা মুছে দিন ৷ দেখে নিন যা যা লাগবে ৷
- তোয়ালে
- নরম কাপড় ( ভেজানোর জন্য)
- নরম কাপড়( গা মোছার জন্য)
- পরিষ্কার পোষাক
একটা সমতল জায়গায় তোয়ালে পেতে শিশুকে শোয়ান ৷ প্রথমে নরম কাপড় হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিয়ে শিশুর মাথা মুছে দিন ৷ সাথে সাথে আবার শুকনো কাপড় দিয়ে মাথা মুছে দিন ৷ মাথা ভেজা থাকলে ঠান্ডা লেগে যেত পারে ৷ এরপর গলা বুক ও হাত মুছুন ৷
পরিশিষ্টঃ
আপনার নবজাতককে এইসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ভেতরে সুরক্ষিত রাখতে পারলে সর্দি, ডায়রিয়া , নাভির ইনফেকশন বা অন্যান্য ইনফেকশনের হাত থেকে আগলে রাখতে পারবেন ৷ যত্নে রাখুন আপনার শিশু ভালবাসায় আর পরিচ্ছন্নতায় ৷
cl-supermom