নবজাতকদের সুস্থ রাখতে হেল্থ গাইড!

শিশু মাত্রই সে স্পর্শকাতর। বিশেষত শিশুদের ত্বক নরম হওয়ায় খুব সহজেই তাঁরা নানারকম সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পরে। বিশেষ করে জন্মের পরের কয়েক মাস বেশিরভাগ শিশুই নানাবিধ ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই তো মা-বাবাদের সেদিকে সব সময় নজর রাখা উচিত। তবে কোনও কোনও সময় বেশ কিছু ত্বকের সমস্যা এতটাই বেড়ে যায় যে চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। সেই কারণেই তো মা-বাবাদের তাদের শিশুদের ত্বকের সমস্যা সম্পর্কে সাধারণ কিছু ধারণা থাকা একান্ত প্রয়োজন, যাতে আক্রান্ত শিশু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেতে পারে। কচিকাঁচাদের এমনই কিছু ত্বকের সমস্যা নিয়ে আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদন।

ত্বক হল শরীরের একটি অন্যতম অঙ্গ, যা নানা রকমের জীবাণুকে শরীরে ঢুকতে বাধা দেয়। তবে ত্বকের বেশীরভাগ অংশই যেহেতু উন্মুক্ত থাকে, তাই অনেকক্ষেত্রেই মারাত্মক ধরণের কিছু জীবাণুকে আটকানো স্কিনের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন ত্বক নানা রকম সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পরে। আর এমনটা যদি শিশুদের সঙ্গে হয়, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। প্রসঙ্গত, যে যে স্কিনের রোগে নবজাতকেরা বেশি মাত্রায়

আক্রান্ত হয়ে থাকে, সেগুলি হল…

ব্রণ বা ফুসকুড়ি: ব্রণর সমস্যা শুধুই যে বড়দের হয়, এমন নয়। এই ধরনের ত্বকের রোগ শিশুদেরও হতে দেখা যায়। অনেক সময় নতুন পরিবেশ, কখনও আবার মায়ের হরমোনের সমস্যা দেখা দিলেও তা শিশুর ত্বকে আক্রমণ করে বসে। কারণ শিশুরা মায়ের দুধের ওপরই বেশীরভাগ সময় নির্ভরশীল থাকে। এছাড়াও জন্মের সময়ই অনেক শিশুর ত্বকে অ্যাকনে বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এই ধরণের সমস্যা জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও দেখা যেতে পারে। শিশুদের গাল, পিঠ এবং কপালেই প্রধানত অ্যাকনে দেখা যায়। অ্যাকনে হওয়ার নানা কারণও আছে। যেমন, মায়ের দুধ পান করার থেকে হতে পারে, আবার খুব শক্ত এবং খসখসে কাপড় ব্যবহার করলেও হতে পারে। এমনকি খুব ক্ষার জাতীয় ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে শিশুদের জামাকাপড় ধুলেও তার থেকে এই ধরণের ত্বকের সমস্যা হতে পারে।

চিকেন পক্স: শিশুদের ক্ষেত্রে চিকেন পক্স হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। মাথা যন্ত্রণা, জ্বর, খিদের অভাব, বমি বমি ভাব এবং গায়ে ব্যাথা ইত্যাদি উপসর্গ দিয়েই শুরু হয় চিকেন পক্স। শিশুরা তাদের কষ্ট বলে বোঝাতে পারে না বলে তাদের এই ধরণের সমস্যাগুলি বোঝা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে শিশুদের শরীর লক্ষ্য করে দেখতে হয় যে, কোনও জল ভরা ফুসকুড়ির মতো হয়েছে কিনা। এটি সাধারণত আকারে ছোট এবং লালচে হয়। এই ফুসকুড়িগুলো যন্ত্রণাদায়ক হয় না ঠিকই, কিন্তু চিকেন পক্স সেরে ওঠার সময় এগুলো চুলকানির সৃষ্টি করে। প্রসঙ্গত, চিকেন পক্স মূলত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। যদিও কয়েকদিনের মধ্যে সেরেও যায়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই ধরণের সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া একান্ত জরুরি। এছাড়াও গায়ের চুলকানি ভাব কমাতে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে এই সময় শিশুকে সঠিক আহার এবং যত্নের মধ্যে রাখতে হয়।

ক্র্যাডেল ক্যাপ: ক্র্যাডেল ক্যাপ শিশুদের একটি খুব সাধারণ সমস্যা। এটি শিশুদের মাথাতেই হয়ে থাকে। ক্র্যাডেল ক্যাপ দেখতে একদম খুশকির মতো হয়। ক্র্যাডেল ক্যাপের ক্ষেত্রে মাথার ত্বক প্রথমে লালচে হয়ে যায়। তারপর হলদে বর্ণ ধারণ করে। এরপর সেটি শুষ্ক এবং শক্ত হয়ে প্রায় গুঁড়োতে পরিণত হয়। এই সময় প্রচুর মাত্রায় চুল ঝরে যায়। মাথা ছাড়াও মুখ, নাক, গলা, পশ্চাৎদেশ এবং বগলেও এমন রোগ দেখা দিতে পারে। প্রসঙ্গত, এই ধরণের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন মাথা এবং চুল পরিষ্কার করতে হবে। সেই সঙ্গে নরম চিরুনির দ্বারা ধীরে ধীরে খুব সহজে ক্র্যাডেল ক্যাপ পরিষ্কার করতে হবে।

একজিমা: শিশুদের ত্বকের আরও একটি সমস্যা হল একজিমা। শরীরের যে কোনও অংশে, বিশেষত হাত, ভুরু, গলা, মুখ এবং হাঁটুর পিছনের দিকে এই ধরনের চর্ম রোগ হয়ে থাকে। একজিমা মূলত লালচে রঙের, শুষ্ক গোলাকার আকৃতি বিশিষ্ট হয়। বেশিরভাগ সময় চুলকানি দেখা যায় এক্সিমার ক্ষেত্রে। কিছুদিন পরে এগুলি থেকে পুঁজ বেরোতে থাকে, কখনও কখনও রক্তও বেরোয়। যদিও শিশুরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপনা আপনি এই ধরণের সমস্যা ঠিক হতে শুরু করে।

হাম: ছোটবেলায় হাম হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। শিশুদের যে ধরণের ত্বকের সমস্যায় বেশি ভুগতে দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হল হাম। এই রোগের সূত্রপাত ঘটে খুব সাধারণ ভাবেই। যেমন, নাক দিয়ে জল পড়া, জ্বর, চোখ ফুলে যাওয়া এবং চোখের চারপাশে কালশিটে পড়া, সর্দি এবং মুখের ভেতরে সাদা রঙের ফুসকুড়ি হওয়া ইত্যাদি। এর কিছুদিন পরেই শরীরের বেশ কিছু অংশ, যেমন মুখ, গলা, কানের পিছনে লালচে দাগ বিশিষ্ট ছোট ছোট অসংখ্য অ্যাকনের মতো দেখা দেয়। ৫-৬ দিন থাকার পর এগুলি ধীরে ধীরে ঠিক হতে শুরু করে। যদিও এই সময় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই দরকার।

মিলিয়া: সদ্যজাতরা এই রোগে খুব ভুগে থাকে। এটিও বাকি ত্বকের সমস্যার মতোই হঠাৎ করে শুরু হয়। এক্ষেত্রে শিশুদের মুখমণ্ডলে সাদা রঙের অ্যাকনের মতো দেখতে মিলিয়া গাল, কপাল, থুতনি, নাক এবং চোখের চারপাশে দেখা যায়। কিছু কিছু সময় এই অ্যাকনে গুলি আকারে বড় হতে শুরু করে এবং ভীষণই নরম হয়। তবে শিশুদের এই ধরণের ত্বকের সমস্যায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ ৬ সপ্তাহের মধ্যে অ্যাকনেগুলি মিলিয়া যেতে শুরু করে।

ন্যাপি র‍্যাশ: এই ধরনের ত্বকের রোগ সাধারণত শিশুদের শরীরের নিম্নভাগে দেখা যায়। অর্থাৎ ন্যাপি দ্বারা শরীরের যে অংশ ঢাকা থাকে, সেখানেই মূলত ন্যাপি র‍্যাশ হয়। ন্যাপি র‍্যাশের উপসর্গ হল, নিতম্ব এবং জননেন্দ্রিয়ের পাশে লালচে ব্রণর মতো হয়ে থাকে। কোনও কোনও সময় এগুলি শুষ্ক অথবা জলীয় পদার্থে ভরা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। সদ্যোজাত থেকে এক বছর বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে ন্যাপি র‍্যাশের সমস্যা সবথেকে বেশী দেখা যায়। ন্যাপি র‍্যাশ হওয়ার প্রধান কারণই হল ডায়াপার। ভেজা ডায়াপার পরিয়ে রাখলে শিশুদের এই ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই খেয়াল করে ভেজা ডায়াপার বদলে ফেলে শিশুর ত্বক প্রতিনিয়ত শুকনো রাখাই উচিত।

Sourch:boldsky

Sharing is caring!

Comments are closed.