কুয়াশার কারণে মারাত্মক ক্ষতি পারে বাচ্চার! তাই সাবধান!

ধীরে ধীরে তাপমাত্রা যত নিম্নমুখি হচ্ছে, তত কুয়াশার দেওয়াল যেন পুরু হতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় ভাবী মা এবং বাচ্চাদের সাবধান রাখতে হবে! না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ। সম্প্রতি আমাদের দেশের প্রথম সারির চিকিৎসকেরা এক যোগে একটি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তাতে দেখা গেছে কুয়াশার শরীরে থাকা একাধিক ক্ষতিকারক গ্যাস যে শুধু প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষতি করছে তা নয়, সেই সঙ্গে বাচ্চাদের শরীরের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

ফলে গত কয়েক বছরে বায়ু দূষণের কারণে নবজাতকদের মৃত্যুহার বেড়েছে চোখে পরার মতো। প্রসঙ্গত, সরকারি রিপোর্ট অনুসারে প্রতি চার জন বাচ্চার মধ্যে এক জনে করে বাচ্চা এদেশে মৃত্য়ুর কবলে পরছে বিষাক্ত ধোঁয়া এবং কুয়াশার কারণে। তাই এমন পরিস্থিতিতে মা এবং বাচ্চাকে অতিরিক্ত সাবধান হতে হবে। না হলে যে ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটে যেতে পারে সে বিষয়ে কানও সন্দেহ নেই।

এখন প্রশ্ন হল কুয়াশার হাত থেকে কিভাবে বাঁচানো সম্ভব নব জাতকদের? বিশেষজ্ঞদের মতে এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি বিষয় থুড়ি নিয়ম মাথায় রাখাটা জরুরি। কারণ এমন বিষ বাষ্পের ছোবল থেকে বাচ্চা এবং ভাবী মায়েদের বাঁচাতে কেবল এই নিয়মগুলিই সাহায্য় করতে পারে। তাই তো এই প্রবন্ধে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল…

ভাবী মায়েরা খেয়াল রাখুন: কুয়াশার মধ্যে থাকা ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র পার্টিকাল শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মায়েদের শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে শুরু করে। সেই সঙ্গে প্লাসেন্টার উপরও বিরুপ প্রভাব ফেলে। ফলে প্রিম্যাচিওর ডেলিভার সহ একাধিক জটিলতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, মায়ের শরীরে প্রবেশ করা এই বিষাক্ত টক্সিকগুলি বাচ্চার শরীরের এতটা মাত্রায় ক্ষতি করে যে জন্ম নেওয়ার পরেও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রেগন্যান্সির সময় খুব সাবধান থাকতে হবে মায়েদের। এই সময় যতটা সম্ভব বাড়ির বাইরে যাওয়াই শ্রেয়। আর যদি একান্ত বেরতেই হয়, তাহলে মাস্ক ব্যবহার মাস্ট!

মায়ের পেটে থাকা বাচ্চার খেয়ার রাখা যায় কিভাবে? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বায়ু দূষণ এবং কুয়াশার কারণে মায়ের পেটে থাকা বাচ্চার লাং এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে জন্ম নেওয়ার পর অ্যাস্থেমার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। তাই প্রথমেই মাকে সাবধান হতে হবে। তবেই বাচ্চাকে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে। তাই তো ভুলেও ভাবী মায়েরা খুব সকালে বাড়ির বাইরে বেরবেন না। প্রয়োজন ঘরের অন্দরের বাতাসকে বিষ মুক্ত করতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার শুরু করতে পারে

জন্ম নেওয়া পরের গল্প: গর্ভাবস্থায় মা এবং বাচ্চার খেয়ার রাখাটা যেমন জরুরি, তেমন জন্ম নেওয়ার পর নবজাকতককে সুস্থ রাখতে বেশি সাবধনতা অবলম্বন করার প্রয়োজনও রয়েছে। কারণ সেই সময় বাচ্চার ইমিউন পাওয়ার এতটা শক্তিশালী হয় না। ফলে সহজে রোগগ্রস্থ হয়ে পরার আশঙ্কা থাকে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি যে প্রাপ্ত বয়স্করা যে হারে শ্বাস নিয়ে থাকে, তার থেকে অনেক বেশি মাত্রায় শ্বাস নেয় বাচ্চারা। কারণ তাদের শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বেশি থাকে। তাই বিষ বাষ্প বেশি করে নবজাতকদের শরীরে প্রবেশ করার আশঙ্কা থাকে। তাই তো এই সময় বাচ্চাদের মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। কারণ মাতৃদুগ্ধে থাকা একাদিক উপাকারি উপাদান বাচ্চার শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে সহজে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

কেমিকাল ব্যবহারের মাত্রা কমান: একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য আমরা এমন অনেক প্রোডাক্ট কিনে থাকি, যাতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক থাকে। একদিকে বিষাক্ত কুয়াশা এবং ঘরেরে অন্দরে এই সব কেমিকাল ব্যবহারের কারণে মা এবং বাচ্চা, উভয়ের শরীরের উপরই মারাত্মক খারাপ প্রভাব পরে। তাই ঘরদোর পরিষ্কারের জন্য যতটা সম্ভব কেমিকাল ফ্রি প্রডাক্ট, বিশেষত প্রকৃতিক উপাদান দিয়ে বানানো জিনিস ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। এমনটা করলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমবে।

জানলা-দরজা বন্ধ রাখবেন: ঘরের অন্দরে যাতে বিষ বাষ্প প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য় যতটা সম্ভব জনলা-দরজা বন্ধ রাখার চেষ্টা করবেন। বিশেষত যে ঘরে বাচ্চাকে রাখবেন, সেখানকার জানলা দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখতে ভুলবেন না। এমনটা করলে বিপদ যে একেবারে কমে যাবে, তা নয়। তবে কিছুটা হলেও সুরক্ষা প্রদান করা সম্ভব হবে নবজাতককে।

ঘরের ভিতর ধূমপান একেবারে নয়: কথায় আছে গোদের উপর বিষ ফোঁড়া গোছের পরিস্থিত যদি তৈরি করতে না চান, তাহলে ভুলেও ঘরের ভিতর ধূমপান করবেন না। কারণ এমনটা না করলে পরিবেশে উপস্থিত গ্রিন হাউজ গ্যাসের সঙ্গে সিগারেরটের ধোঁয়া মিশে গিয়ে চারিপাশের পরিবেশকে এতটাই বিষাক্ত করে তুলবে যে তা বাচ্চা এবং মায়ের জন্য একেবারেই ভাল হবে না। তাই আগামী প্রজন্মকে সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দিতে আজ থেকেই এই কুঅভ্যাসকে ছাড়তে হবে। না হলে কিন্তু সবার জন্য বিপদ!

Source:boldsky

Sharing is caring!

Comments are closed.