শীতে শিশুর শ্বাসকষ্ট
শীত এসে গেছে। তবে এখনও জেঁকে বসেনি। অসুখ-বিসুখ এরই মধ্যে জেঁকে বসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে শিশুদের। শীতে শিশুদের সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট সহ দেখা দেয় নানা অসুখ।
এর মধ্যে শীতে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় শিশুরা একটু বেশিই কষ্ট পায়। তবে বাবা-মায়ের একটু সতর্কতা আর যতেœ এ সময় আদরের সোনমণি থাকতে পারবে অনেকটাই সুস্থ। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি বলেন, শীতে শিশুর যেমন শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তেমনি অ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধিও পায়।
এর প্রধান কারণ ভাইরাস হলেও শীতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব এনজাইম রয়েছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রায় কম কার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে শীতে শিশুদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। শীতে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়। যা শ্বাসনালির স্বাভাবিক কার্যকে বিঘিœত করে ভাইরাসের আক্রমণকে সহজ করে দেয়। ফলে এ সময় শিশুর শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ধুলাবালি বৃদ্ধি, কুয়াশাসহ নানা কারণে শীতে শিশুর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
বড়দের শ্বাসকষ্ট হলে তা সহজেই তারা বোঝাতে পারে। কিন্তু শিশুর ক্ষেত্রে অভিভাবকেই বিষয়টি খোয়ার রাখতে হয়।তাই আপনার শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা তা বোঝার জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।
- * প্রতিবার শ্বাস নেয়ার সময় বুকের চামড়া পাঁজরের হাড়ের ভেতর ঢুকে যায় কিনা।
- *নিঃশ্বাস নেয়ার সময় নাকের দু’পাশ ফুলে ওঠে কিনা।
- * শ্বাসের সময় বাঁশির মতো শব্দ হয় কিনা।
- * শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। যেমন- দুই মাসের কম বয়সী শিশু প্রতি মিনিটে ৬০ বা তার বেশি বার শ্বাস নেয়। দুই থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৫০ বা তার বেশি হয়। এক বছরের বেশি বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে ৪০ বা তার বেশি বার হয়।একটু সতর্ক হলেই শিশুকে শ্বাসকষ্ট সমস্যা থেকে দূরে রাখা সম্ভব হয়। অবশ্য তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
- * শিশুর যেন ঠাণ্ডা না লাগে এবং শীতকালে শিশুকে সব সময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে।
- *অপরিষ্কার থাকলে ফুসফুসের সংক্রমণ বেশি হয়। তাই শিশুকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে।
- * একই পাত্রে ভাগাভাগি করে শিশুর খাবার এবং একই গ্লাসে পানি পান করার অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে।
- * বাইরে বের হলে শিশুকে মাস্ক ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে হবে।
- * শীতে হালকা কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে এবং গোসলেও হাল্কা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।
- * শিশুকে আমিষ জাতীয় খাবার বেশি দিতে হবে। টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল বিশেষ করেপালং শাক, গাজর, লেবু, আনারস, জাম্বুরা, মাল্টা, কমলা এবং বেশি বেশি পানিখাওয়াতে হবে। এগুলো শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ছয় মাসের কমবয়সী শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না।
সূত্র – যুগান্তর কম