কীভাবে বুঝবেন শিশুর মৃগীরোগ? ডা. আনিসা জাহান-মডার্ন হাসপাতাল

প্রশ্ন: এপিলেপসি বিষয়টি কী?
উত্তর : মৃগীরোগকে ইংরেজিতে এপিলেপসি বলা হয়।

প্রশ্ন : শিশুদের ক্ষেত্রে এপিলেপসি বা মৃগীরোগ কেন হয়?
উত্তর : বড়দের মতো শিশুদেরও মৃগীরোগ হয়। এর অনেক কারণ রয়েছে। আমাদের দেশ অনুযায়ী যদি বলি, জন্মের সময় যদি কোনো অসুবিধা হয়, পরে তাদের মস্তিস্কে সমস্যা হতে পারে। আমাদের দেশে অনেক এপিলেপসি রোগী রয়েছে।

এ ছাড়া যাদের পারিবারিকভাবে এপিলেপসি আছে তাদেরও কিন্তু শিশু অবস্থায় সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া যাদের জ্বরের সাথে খিঁচুনি হয়, তাদের একটি ভাগ পরবর্তীকালে মৃগী রোগের ভেতরে চলে যেতে পারে। এমনিতে যদি মস্তিস্কের কোনো পরীক্ষা করেন, সেভাবে কোনো কারণ খুঁজে পাবেন না। কিন্তু তাদেরও হয়তো সূক্ষ্ম অনেক কারণ রয়েছে। এগুলোর কারণেও কিন্তু মৃগীরোগ হতে পারে। একই রকম মৃগীরোগ কিন্তু সব বয়সের বাচ্চাদের হয় না। ছোটোবেলায় যে মৃগীরোগ হয়, একটু বয়সে সেটি পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন : একটি শিশু মৃগীরোগে আক্রান্ত হলে, সেটি বোঝার  উপায় কী?

উত্তর : সাধারণ মানুষরা যেটা বোঝে, আমি হয়তো অজ্ঞান হয়ে গেলাম। তারপর আমার হাত পা ঝাঁকুনি দিল, খিঁচুনি হলো- সেটাকেই সাধারণত মৃগীরোগ বলে। তবে এর বাইরেও অনেক রকম রয়েছে।

যেমন : আমি চুপচাপ থাকতে পারি। আমি চুপচাপ হয়ে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য। এটিও কিন্তু এক ধরনের মৃগীরোগ। এটাকে আমরা এবসেন্স সিজার বলি।

আবার কেউ হয়তো শুধু ঢোক গিলছে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি হচ্ছে। আবার হতে পারে কারো হয়তো হঠাৎ করে মেজাজ বিগড়ে গেল। চিৎকার করল অথবা দৌঁড়াদৌঁড়ি করল বা মেজাজ খারাপ করল।

কিছুক্ষণ পর একদম সে স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ আছে ভিন্ন ধরনের ঘ্রাণ পায়। কেউ কেউ কানের ভেতর ফিসফিস কথা শুনতে পারে। অনেকে দেখবেন বলে যে আমি ভূত দেখেছি-সেগুলোও কিন্তু এক ধরনের এপিলেপসি।

তবে ছোট বাচ্চাদের যে এপিলেপসি হয়, একে একদম এপিলেপসি হিসেবে বলব না। কিন্তু আমরা জানি কোন বাচ্চাগুলো পরে মৃগীর মধ্যে যেতে পারে। আবার অনেক সময় গ্লুকোজ কমে খিঁচুনি হয়, সেটি এপিলেপসির মধ্যে পড়বে না। খিঁচুনি মানেই যে এপিলেপসি সেটি নয়। তবে এপিলেসির মধ্যে খিঁচুনি হয়।

একটি ছোট বাচ্চা, যার জন্মের পর খিঁচুনি হয়, তাদের মধ্যে অনেকের কিন্তু শরীর কাঁপে, চোখ উল্টে যায়। উপরের দিকে তাকায়। কেউ হয়তো একটা ঝাঁকুনি দেয়। ঝাঁকুনিটা কিন্তু বেশির ভাগ সময় মায়েরা বুঝতে পারে না। এই ঝাঁকুনি এমন একটি বিষয়, যার চিকিৎসা না হলে পরবর্তীকালে এই বাচ্চাগুলোর অনেক সমস্যা হতে পারে।

প্রশ্ন : এই ঝাঁকুনিটা কতবার হলে মা-বাবারা বুঝবেন?

উত্তর : সাধারণত দেখা যায়, বেশির ভাগ চিকিৎসকই এর চিকিৎসা জানেন না। এমনকি যারা শিশুবিশেষজ্ঞ তাঁরাও কিন্তু এর চিকিৎসা জানেন না। কয়েকজন নিউরোলজিস্ট যাঁরা এই বিষয়ে কাজ করেন, তাঁরা হয়তো এর বিষয়ে পারদর্শী।

এটি একটি নির্দিষ্ট ধরনের খিঁচুনি, যাকে আমরা ইনফেনটাইল স্পাজম বলি। হঠাৎ করে হাত-পা শক্ত হয়ে আসবে। কিছুক্ষণ পর সে ছেড়ে দিবে। একই সাথে সে অনেক সময় ৫০, ৬০, ১০০ বার করতে পারে। আবার কেউ কেউ হয়তো দুই তিনটি দিয়ে চলে যাবে। ওই সময় কেউ চিৎকার করে, কেউ হাসে, বেশির ভাগ মায়েরা বিষয়টি বুঝতে পারেন না। যখন বেশি জোড়ে হয়, তখন তাঁরা বলেন যে তাঁর শিশুটি চমকে যায়। আর যখন হালকা করে হয় তখন তো বুঝতেই পারেন না। এটা যে শুধু আপনার সামনেই হবে, সেটি নয়, পিছনেও হতে পারে।

প্রশ্ন : তাহলে করণীয় কী?

উত্তর : বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে এখন শিশু বিভাগ ও নিউরোলজি বিভাগ রয়েছে। সেখানে কিন্তু তারা পরামর্শের জন্য যেতে পারে। এই ঝাঁকুনিটা একটি সতর্ক সংকেত। ভবিষতে এটি মৃগীরোগ বা এপিলেপসির দিকে মোড় নেবে।

কারণ, একটি বাচ্চার যখন মৃগীরোগ হয়, তার বুদ্ধিমত্তা, তার আচার-আচরণ, তার কথা-বার্তা, তার হাঁটা-চলা সব জিনিসই এর সাথে জড়িত হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন : আপনাদের কাছে রোগী এলে প্রাথমিকভাবে কীভাবে পরীক্ষা করেন?

উত্তর : প্রথম কথা হলো, দেখতে হবে বাচ্চাদের কী রকমের খিঁচুনি হচ্ছে। ইজি বলে মস্তিস্কের একটি পরীক্ষা করি। যেমন : হার্টের জন্য তার দিয়ে আপনি ইসিজি করেন। মস্তিস্কেও তার লাগিয়ে পরীক্ষা করা হয়। দেখি, মস্তিস্কে কী ধরনের খিঁচুনি হচ্ছে। যে ওষুধটি ব্যবহার করবেন চিকিৎসক, সেটি কিন্তু অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। এক ধরনের ওষুধ সব খিঁচুনিতে কাজ করবে না। কোনো কোনো ওষুধ কিন্তু একে বাড়িয়েও দিতে পারে। আর যদি বেশি খারাপ হয়, সেই ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান, এমআরআই করা হয়। এটা সাধারণত আমরা একটু পরে করি। আর যেহেতু আমাদের দরিদ্র দেশ, অনেক সময় কিছু না করেও চিকিৎসা করে দেই। তারপর যদি সে ভালো হয়ে যায়, তখন কোনো কিছু লাগে না। আর যদি মনে হয় তাতেও হচ্ছে না, তখন রক্তের পরীক্ষা করতে হতে পারে।

প্রশ্ন : অনেক মা-বাবা হয়তো না বুঝে অপচিকিৎসকের কাছে চলে যান। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

উত্তর : এটি তো আমাদের দেশে অনেক হয়। অনেকেই অপচিকিৎসকের কাছে যায়, এতে সমস্যা বেড়ে যায়। শুধু খিঁচুনিটাই বিষয় নয়, তার সঙ্গে অনেক আনুষঙ্গিক বিষয় দেখতে হবে। তবে মৃগী হলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। একটি চিকিৎসা রয়েছে। ৬০ থেকে ৭০ ভাগ এপিলেপসি ভালো হয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ খেয়ে যেতে হয় দীর্ঘদিন। অনেক ক্ষেত্রে আবারএই রোগ ভালোই হয় না। ওষুধ নিয়মিত খেলে যদি রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে।

collect:ntv health every day program

Sharing is caring!

Comments are closed.