শিশুর কাশি হলে কী করবেন?

কিছুদিন ধরে হয়তো আপনার শিশুর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল শুকনো, ঘন ঘন কাশি। তখন থেকে কাশি তার লেগেই আছে। বাড়ির কেউই ঘুমোতে পারেনি কাশির শব্দে। তবে অনেক চেষ্টার পরও কাশি থামছে না।

শিশুর রাত্রিকালীন কাশির সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। আর এ ধরনের অসুস্থতা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা যাবে না। যেহেতু কাশি ফুসফুস দুটোকে পরিষ্কার রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, তাই আপনি এটা পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইতে পারেন না।

যদি আপনার শিশুর ভাইরাসজনিত অসুস্থতা থাকে, তার প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাময়িকভাবে বিকল হয়। কাশি ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অস্বস্তিকর বস্তুকে বের করে দিয়ে ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যদি আপনি কাশিকে পুরোপুরি দমিয়ে রাখেন, আপনি তাহলে একটা মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, যেমন—নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করলেন।

যদিও অনেক ক্ষেত্রে রাত্রিকালীন কাশিকে না ঘাঁটানোই ভালো, তবে প্রয়োজন দেখা দিলে আপনি কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন। এতে আপনার শিশু বেশ আরাম পাবে। সমস্যা গুরুতর মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রচুর পরিমাণ তরল খেতে দিন

আপনার শিশুর কাশি থাকলে তাকে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করানো ভালো। বিভিন্ন তরল, যেমন—ফলের রস, পানি কিংবা স্বচ্ছ ঝোল কফ বের করে দেওয়ার চমৎকার সহায়ক বস্তু হিসেবে কাজ করে।

বিভিন্ন তরল খাবার শুষ্ক, শক্ত কফকে আলগা করতে পারে এবং কাশির মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে। আর ঠান্ডার ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতো এগুলোর কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

বিশেষ করে গরম পানীয়, আপনার শিশুর কাশি থাকলে বেশ আরাম দিতে পারে। অবশ্য যেকোনো ধরনের পানীয় কাশিতে আরাম দেবে।

যখন শিশুর কফ বোঝাই থাকে, সে মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে চায়। এতে তার গলা শুকিয়ে যায় এবং কফও শুকাতে শুরু করে। মুখ ও গলা শুধু ভেজা রাখলে কফ কমে যায়।

থার্মোস্ট্যাট কমিয়ে দিন

যদি শীতকালে আপনার শিশুর কাশির আক্রমণ হয়, আপনার ঘর যদি তখন গরম করেন, আপনি অবশ্যই রাতের বেলা থার্মোস্ট্যাট বা তাপ নিয়ামক কমিয়ে দেবেন, বাড়াবেন না। গরম, শুষ্ক বাতাস কাশিকে উত্তেজিত করে তোলে। কিন্তু যদি আপনি থার্মোস্ট্যাট কমিয়ে দেন, তাহলে ঠান্ডা বাতাস কিছু আর্দ্রতা সংরক্ষণ করে রাখবে।

বাষ্পীভূত করার জন্য ব্যস্ত হবেন না

যদিও মনে হতে পারে, ভেপোরাইজার দিয়ে কিছুটা আর্দ্রতা তৈরি করা বিচক্ষণ কাজ, কিন্তু সব সময় এ ধারণা ঠিক নয়। ভেপোরাইজার পরিষ্কার রাখা কঠিন কাজ। এটা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রজনন ভূমি। ঠিকমতো পরিষ্কার করা না হলে এখানে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জন্মে। যদি আপনার শিশুর ছত্রাকে অ্যালার্জি থাকে অথবা অ্যাজমা থাকে, তাহলে ভেপোরাইজার আপনার শিশুর কাশিকে আরো খারাপ করে তুলবে।

বুকে মালিশ করা বাদ দিন

পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলো বুকে গরম অনুভূতির সৃষ্টি করে, এগুলো কাশি উপশমে কিছুই করতে পারে না। আর যদি শিশু নিশ্বাসের সঙ্গে এগুলো টেনে নেয় কিংবা গিলে ফেলে, তাহলে তার নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অ্যান্টিহিস্টামিন দিতে চেষ্টা করুন

যদি আপনার জানা থাকে যে আপনার শিশুর কাশির কারণ অ্যালার্জি, তাহলে তাকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় অ্যান্টিহিস্টামিন খেতে দিন, এতে সে কিছুটা ঘুমোতে পারবে। অ্যালার্জিজনিত কাশিতে অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ বেশ উপকারী। প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার শিশুর বয়স অনুপাতে তাকে সঠিক মাত্রায় ওষুধটি দিতে হবে। সঠিক মাত্রার জন্য অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা ভালো করে পড়ে নেবেন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

সঠিক কাশির ওষুধ বেছে নিন

যদি আপনার শিশু কয়েক রাত বেশ বাজে কাশি নিয়ে কাটাতে থাকে, তাহলে আপনি ডেক্সট্রোমেথরফ্যান এবং গুয়েফেনেসিন সমৃদ্ধ কাশির ওষুধ দিয়ে চেষ্টা করতে পারেন। মূলত এ দুটো উপাদানের যেকোনো সিরাপ কাজ করবে। এ ধরনের ওষুধ একটু করে মিউকাস আলগা করে এবং খুব মৃদু কাশি উপসম করে। ডেক্সট্রোমেথরফ্যান শতভাগ কার্যকর নয়, কিন্তু সেটা সত্যিকার অর্থে ভালো। কারণ, কাশি পুরোপুরি দমন করার চেষ্টা করা উচিত নয়।

সতর্কতা : শিশুর বয়স এক বছরের কম হলে তাকে শক্তিশালী কাশির ওষুধ দেবেন না। কাশির প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কের নিচের অংশে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই যদি আপনি আপনার ছোট শিশুকে কাশি দমনকারী কোনো ওষুধ দেন, তাহলে তার শ্বাস দমন করা হবে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

আপনার শিশুর কাশি হলে তাকে চিকিৎসক দেখিয়ে কাশির কারণ নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ। রাত্রিকালীন কাশি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন : ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, অ্যাজমা, শিশু কিছু গিলে ফেলার কারণে শ্বাসপথে আংশিক অবরুদ্ধ অবস্থা, অস্বস্তিকর ধোঁয়া ইত্যাদি। কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুখ, যেমন—সিস্টিক ফাইব্রোসিসের কারণে কাশি হতে পারে।

আপনার শিশুকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন যদি শিশুর নিচের উপসর্গগুলো থাকে :

  • সারা রাত একটানা কাশি থাকলে।
  • কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা বের হলে।
  • জ্বর থাকলে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হলে।
  • কাশি ১০ দিনের বেশি স্থায়ী থাকলে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

sourch-ntv

Sharing is caring!

Comments are closed.