ত্রিশের পরে মা হতে চাইলে কি কি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা অতীব জরুরী?

ত্রিশের পরে মা হতে চাইলে কি কি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা অতীব জরুরী?

সাধারণভাবে ২৫ থেকে ৩০ বছর হলো প্রথম মা হওয়ার উপযুক্ত সময়। তবে বিয়ের পরে নানা কারণে  যেমনঃ চাকরি, সংসার ও নানা জটিলতার কারণে সময় কখন পেরিয়ে যায় তা হয়তো বুঝতেও পারা যায়না। যখন ভাববেন, তখন কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। বয়স  ৩০ পেরিয়ে ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ পেরিয়েছে। তাই বলে কি মা হওয়া সম্ভব নয়?

হ্যা, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মাধ্যমে সেটিও সম্ভব। তবে দেরিতে প্রথমবারের মতো মা হলে কিছু জটিলতা থাকে। সে জন্য আগেই যদি স্বামী-স্ত্রী নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা করে রাখেন, তাহলে পরে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এই যেমন: আপনি যদি পরিকল্পনা করেন, ৩৪ বছরের পরে গর্ভধারণ করবেন, তাহলে এর আগে সব পরীক্ষা করে রাখবেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কারও কোনো জটিলতা থাকলে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া সম্ভব।

সাধারণত ৩৪ বছর বয়সের পরে মা হলে সেটিকে বেশি বয়সের মাতৃত্ব বলা হয়।

৩৪ বছরের পরে গর্ভ ধারনের সম্ভাব্য জটিলতাগুলোঃ

  • প্রথম সন্তান ধারণ করলে প্রথম তিন মাসে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ছয় মাসের পরে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
  • আবার সন্তান প্রসবের সময়ও জটিলতা থাকে। দেখা যায়, ৩৪ বছর বয়সের পরে পেশির সংকোচন-প্রসারণ কমে যায়, নমনীয়তা কম হয়। পেশি শক্ত হয়ে যায়। তাই সাধারণভাবে সন্তান প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) কম হয়। এ কারণে অস্ত্রোপচারই করতে হয়, যা সিজারিয়ান নামে পরিচিত।
  • এ ছাড়া এ সময়ে জরায়ুতে টিউমার হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
  • সাধারণত গর্ভধারণের ছয় মাস পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। অনেক সময় খিঁচুনিও হয়। আসলে যত বয়স হতে থাকে, শরীরে রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
  • বেশি বয়সের মায়েরা অনেক সময় সন্তান বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা করেন। আসলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এ জন্য সাধারণ কিছু পরীক্ষা যেমন অ্যালফা ফেটো প্রোটিন-এএফপি, এইচসিজি হরমোন কী পরিমাণ আছে, তা পরীক্ষা করা যেতে পারে। এসব হরমোন গর্ভে থাকা বাচ্চা থেকে তৈরি হয়, এগুলো যদি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তখন আমরা ধারণা করি, বাচ্চার সমস্যা থাকতে পারে। তবে আরও নির্দিষ্টভাবে বোঝার জন্য অ্যামনিয়োসিনথেসিস ও কোরিওনিক ভিলি পরীক্ষা করা যেতে পারে। সমস্যা বুঝলে আগেই চিকিৎসা শুরু করা যায়।
  • ৭০০ থেকে ৮০০টির মধ্যে একটি অস্বাভাবিক শিশু জন্মায়। এ ঘটনা যেকোনো বয়সের মায়ের ক্ষেত্রে হতে পারে। বেশি বয়সের মায়েদের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের দিকে ঝুকি  থাকে বেশি। তাঁরা কোনো রকমের ঝুঁকি নিতে চান না।
  • বেশি বয়স হলে বাচ্চা একটু উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বা আড়াআড়ি হয়ে থাকে। এমন সমস্যা হলে সাধারণভাবে বাচ্চা হতে সমস্যা হয়। এমন সমস্যা হলে অবশ্যই প্রসব ব্যথা শুরু হলেই ক্লিনিক বা হস্পিটালে কোন মহিলা ও শিশু বিশেষজ্ঞের চিকিতসাধীন থাকতে হবে এবং সিজারীয়ান অপারেশনের জন্য মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
  • মনে রাখতে হবে, সন্তান জন্মের পর সন্তানের যেমন বাড়তি যত্ন নিতে হবে, মায়েরও তেমনই। পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য খেতে দিতে হবে।

এবার দেখা যাক অনেক সমস্যা/জটিলতা থাকা সত্ত্বও ৩০ শের পরে মা হবার ইতিবাচক দিকগুলো কি কি আছেঃ

  • বেশি বয়সে মা হওয়ার ইতিবাচক দিক হলো, এই মায়েরা নিজে ও সন্তানের বিষয়ে অনেক সচেতন থাকেন।
  • তাঁরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা জানেন। সাধারণত আর্থিক সচ্ছলতা থাকে তাঁদের।
  • স্বামী ও পরিবারের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়াও তৈরি হয়। পেশাজীবনেও এই মায়েরা কিছুটা এগিয়ে থাকেন। তাঁদের একজন শিক্ষানবিশের মতো পরিশ্রম করতে হয় না। ফলে সন্তানের সুরক্ষায় তাঁরা সচেষ্ট থাকেন।
  • বর্তমান বিশ্বে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে বেশি বয়সে মা হওয়া তাই কোনো সমস্যা নয় এখন।

তবে সবার মনে রাখা উচিৎ যে উপযুক্ত সময়ে (২৫-৩০ বসর) প্রথমবারের মতো মা হলে কিছু কিছু জটিলতা এড়ানো যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক যুগে জ্ঞান বিজ্ঞানের আশাতীত প্রসারের ফলে ৩০শের পরে মা হওয়া যাবেনা এমনটা বলার কোন অবকাশ নেই।

তথ্য সূত্রঃ বেশতো

Sharing is caring!

Comments are closed.