কলিক বেবি? শিশুর অস্বাভাবিক কান্না!
কলিক কি এবং কিভাবে বুঝবেন?
কলিক বিষয়টা অনেকটা আপনার সহ্য করার ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত। আপনার বাচ্চার কান্না কি স্বাভাবিক নাকি অতিরিক্ত সেটা নির্ভর করে আপনি কতক্ষন তা সহ্য করতে পারছেন তার উপর। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে আপনার বাচ্চা যদি সাধারানত দিনে তিন ঘণ্টা বা তার বেশী, সপ্তাহে তিন বা চার দিনের বেশী এবং একটানা তিন চার সপ্তাহের বেশী কান্না করতে থাকে এবং তার যদি কোন ব্যাখ্যা না থাকে, ধরে নিতে পারেন বাচ্চা হয়ত colicky।
Colic এর কারনে বাচ্চা যে কোন সময় কান্না করতে পারে। তবে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কান্না বেশী থাকে। এতে ভয় এর কোন কারণ নেই কারণ ৬০ ভাগ বাচ্চার ক্ষেত্রে তা ৩ মাসের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। ৯০ ভাগ বাচ্চা ৪ মাস এর মদ্ধে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠে।
colic কি কারনে হয় তা এখন জানা যায়নি। তবে হজমের সমস্যা, reflux, বা পরিবেশগত কারনে colic হতে পারে মনে করা হয়। “কলিক” আপনার শিশুর কোন অসুস্থতার লক্ষন নয়। সে যে ভঙ্গিতে কান্না করতে থাকে তা দেখে মনে হতে পারে তার পেট ব্যাথা করছে কিন্তু এটা তার পেট ব্যাথার লক্ষন ও নয়। ধারণা করা হয় পেটে এ গ্যাস এর কারণে বাচ্চা কলিক হতে পারে। কিন্তু গবেষকরা এখন মনে করছেন বাচ্চার কান্নার কারনেই পেটে গ্যাস এর সৃষ্টি হয়। কারণ বাচ্চা যতক্ষণ কান্না করতে থাকে ততক্ষন ই সে বাতাস গিলতে থাকে। একটা উপায় এ আপনি বুঝতে পারবেন আপনার বাচ্চা “কলিক” এর কারণে কান্না করছে কিনা। তা হোল, যখন এ সে কান্না করবে আপনি তাকে কোলে নিয়ে দুলিয়ে বা অন্য উপায়ে ভোলানোর চেষ্টা করুন। বাচ্চার কান্নার কারণ যদি অন্য কিছু হয় তবে সে কিছুক্ষন পর শান্ত হয়ে যাবে।
কিছু বাচ্চা “কলিক” কেন হয়?
কলিক কেন হয় বা সব শিশুর ক্ষেত্রে এটা কেন হয়না তা আজ ও অনাবিষ্কৃত। বিশেষজ্ঞদের কাছে এটা এখনও একটা রহস্য। তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন “কলিক” বাচ্চারা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তাদের ইন্দ্রিয় এর উপর আর চাপ (যেমন কিছু দেখা, শোনা বা অনুভব করা) সহ্য করতে পারেনা। ফলে তারা বিরক্ত হয়ে উঠে এবং কান্না জুড়ে দেয়।
অনেকে মনে করেন শিশুর অন্ত্রে সুস্থ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার কারণেও “কলিক” হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে কলিক শিশুদের অন্ত্রে অন্য শিশুদের চাইতে অন্যরকম মাইক্রোফ্লোরা থাকে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাবারে এলারজির কারণে কলিক হতে পারে। ফর্মুলা খাওয়া বাচ্চারা ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্ট হলে বা বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মায়ের খাদ্যাভ্যাসের কারণে কলিক হতে পারে।
এছারাও অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় বা পরে স্মোক করেন তাদের বাচ্চারা সাধারণত কলিক হয়। বাচ্চার আশেপাশে ধূমপান করলেও তা হতে পারে। তাই কারোর এ উচিৎ নয় বাচ্চার আশেপাশে ধূমপান করা।
বাচ্চাকে শান্ত করার কিছু পরামর্শঃ
কলিক বাচ্চার ক্ষেত্রে নিজে শান্ত থাকাটা সবচাইতে জরুরী। যদি তা বলার চাইতে করাটা অনেক বেশী কঠিন। নিচের টিপস গুলো বাচ্চাকে হয়তো বা কিছুটা শান্ত করতে পারবে কিন্তু খেয়াল রাখবেন সবগুলো উপায় একটা একটা করে চেষ্টা করুন কিন্তু সবগুলো একসাথে করবেন না। এতে বাচ্চা আরও বিরক্ত হয়ে আরও বেশী কান্না জুড়ে দিতে পারে।
- বাচ্চা কান্না শুরু করলেই সাড়া দিন। গবেষণায় দেখা গেছে বাচ্চার কান্নায় সাড়া দিলে পরবর্তীতে তা বাচ্চার কান্না কমাতে সাহায্য করে।
- বাচ্চা যদি কোন কিছুতে বিরক্ত হয় তবে তা থেকে তাকে দূরে রাখুন। বিশেষ করে বিকেলে এবং সন্ধ্যার দিকে। বেশী মানুষজন এ সময় বাচ্চার কাছে না আসায় ভালো। খেয়াল করুন বাচ্চা কিসে বিরক্ত হচ্ছে এবং তা থেকে যথাসম্ভব তাকে দূরে রাখুন।
- বাচ্চার চার পাশের পরিবেশ শান্ত রাখুন। আলো কমিয়ে দিন, যথাসম্ভব মৃদু স্বরে কথা বলুন বা একবারেই কথা বলবেন না। অন্য শব্দ যতটুকু সম্ভব কম করুন।
- অনেক কলিক বাচ্চা পেটে সামান্য চাপ দিলে আরাম অনুভব করে। বাচ্চাকে আপনার কোলে উপুড় করে শুইয়ে বা সোজা করে কোলে নিয়ে (যাতে বাচ্চার পেট আপনার কাঁধের উপর থাকে), অথবা বাচ্চাকে আপনার হাতের উপর উপুড় করে শুইয়ে আস্তে আস্তে তার পিঠে ঘষে বা চাপরে দিতে পারেন। এতে সে কিছুটা আরাম বোধ করবে।
- যেহেতু শিশু দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ই কাঁদে, তাই ওই সময়ের ৩০ মিনিট আগে চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টি কলিক সিরাপ খাওয়ালে কান্না অনেকটুকুই কমে যেতে পারে (যদিও তা প্রমানিত নয়) তবে তা কখনোই চিকিৎসককে না জানিয়ে করবেন না।
- আপনার বাচ্চা যদি বুকের দুধ খায় তবে চিকিৎসক এর সাথে পরামর্শ করে এলারজি বা গ্যাস উদ্রেককারী কিছু কিছু খাবার খাওয়া বাদ দিতে পারেন।
- বাচ্চা ফর্মুলা খেলে চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ফর্মুলা পরিবর্তন করে দেখতে পারেন।
- বাচ্চাকে প্যাসিফাইয়ার দিয়ে দেখতে পারেন। অনেক সময় চুসনি মুখে থাকলে বাচ্চার কান্না বন্ধ থাকে। অনেক সময় যখন কোন কিছুই কাজ করেনা একমাত্র চুসনি বাচ্চা কে শান্ত করতে পারে। American Academy of Pediatrics এর গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমানোর সময় চুষনির ব্যাবহার SIDS এর আশঙ্কা কম করে।
- মাঝে মাঝে বাচ্চাকে নিয়ে ঘরের বাইরে ঘুরে আসতে পারেন। বাইরের পরিবেশ বাচ্চার মন শান্ত করতে পারে।
মা-বাবার করনীয়ঃ
যদিও বলা যায় যে ঘণ্টার ঘণ্টার পর ঘণ্টা কান্না এ সময় বাচ্চার তেমন একটা ক্ষতি করেনা কিন্তু তা বাবা মায়ের উপর শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অনেক প্রভাব ফেলে। তাই বাবা মা ভাগ করে বাচ্চার যত্নের কাজটি পালন করুন। কখনই দুজনে একসাথে ক্লান্ত হয়ে পরবেন না। এ সময় দুজনের ই বিশ্রামের প্রয়োজন।
নবজাতকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানই বাবা-মায়ের প্রধান কাজ। বিষয়টি মায়েরদের জন্য একটু ক্লান্তিকর হয়ে যায় অনেক সময়, তাই যথাসম্ভব পরিবারের অন্যদের সাহায্য নিতে কেউ কার্পণ্য করবেন না। এসময় মায়ের নিজের শারীরিক এবং মানসিকভাবে উজ্জিবত এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করা প্রয়োজন।
বাচ্চার সমস্যার ব্যাপারে অন্যদের সাথে আলাপ করুন। প্রয়োজনে অন্যদের সাহায্য নিন। সবসময় মনে রাখবেন এটা একসময় কেটে যাবে।
চিকিৎসক এর পরামর্শঃ
বাচ্চার কলিক এর সময় চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে পারেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখবেন বাচ্চার আর কোন সমস্যা আছে কিনা। কান্না ছাড়া আর কোন অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন।
সবার বাচ্চা সুস্থ থাকুক, সবার জন্য শুভকামনা।
source: fairyland