শিশুর ডায়াপার র্যাশে কী করবেন?
ডায়াপার র্যাশ কেন হয়?
শিশুর কোমল সংবেদনশীল ত্বক যখন বেশ কিছু সময় ধরে অথবা বারবার প্রস্রাব ও পায়খানার সংস্পর্শে আসে, তখন আর্দ্রতার কারণে ত্বকের তৈলাক্ত প্রাকৃতিক স্তরের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। এতে ত্বকে লালাভ চাকার মতো হয়ে ফুলে ওঠে, অর্থাৎ ত্বকে ফুসকুড়ির মতো দেখা যায়।
সৌভাগ্যক্রমে ডায়াপার র্যাশ বা নিচের পোশাকজনিত ত্বকের ফুসকুড়ি থেকে তেমন জটিলতার সৃষ্টি হয় না। কিন্তু তারপরও শিশুর স্বস্তির কথা ভেবে শিশুর প্রতি একটু বাড়তি দৃষ্টি নিতে হয়।
ডায়াপার র্যাশজনিত সমস্যাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে এবার সেই প্রসঙ্গে আসা যাক :
প্রয়োজনে বারবার পোশাক বদলে দিন
টিস্যু পেপার কিংবা কাপড়ের ডায়াপার উভয়ই সমানভাবে ভালো। তবে কোনোটাই বেশিক্ষণ ভেজা অবস্থায় রাখা ঠিক নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডায়াপার বদলে নিতে হবে। ঘরে বসে বারবার এই বদলে দেওয়াটা সহজ। তবে ভ্রমণের সময় এই কাজটি করার জন্য সঙ্গে অতিরিক্ত ডায়াপার রাখুন।
প্লাস্টিক প্যান্ট বাদ দিন
শিশুর দেহে যদি কাপড়ের ডায়াপার পরানো থাকে, তাহলে তাকে আর ডায়াপারের ওপর প্লাস্টিকজাতীয় প্যান্ট পরানো ঠিক হবে না। কারণ, প্লাস্টিক আবরণ আর্দ্রতাকে ভেতরে আটকে রাখবে। এটি ডায়াপার র্যাশকে আরো তীব্র করবে। প্লাস্টিকের প্যান্ট বা আবরণ ব্যবহারের পরিবর্তে মোটা কাপড়ের ডায়াপার ব্যবহার করা ভালো। কারণ, এতে ত্বকের ঘাম নির্গমন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় না।
প্রাকৃতিক উপায়ই ভালো
যদি ছোট্ট সোনামণির ডায়াপার বারবার পরিবর্তন করা হয়, তখন আর ডায়াপার অঞ্চলের পাউডার ব্যবহারের দরকার নেই। যদি পাউডার ব্যবহার করতেই হয়, তবে ‘প্লেইন কনস্টার্চ’ উপাদানের পাউডার ব্যবহারই ভালো। অনেকেরই ধারণা, ডায়াপার খোলার পর ছোট্ট শিশুকে বেবি লোশন এবং পাউডার লাগাতে হবে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো লাগিয়ে ডায়াপারের র্যাশ প্রতিরোধ করা যায় না; বরং এতে ক্ষতি হয়। যেহেতু লোশন ও পাউডারের সুগন্ধি বস্তু ও অন্যান্য পদার্থযুক্ত থাকে, তাই এগুলোর কারণেও ত্বকে র্যাশ উঠতে পারে।
ডায়াপার বদলানোর পর যা করতে হবে
ডায়াপার বদলানোর পর পৃথিবীজুড়ে স্বীকৃত আদর্শ করণীয় হচ্ছে, শিশুর শ্রেণিদেশ বা তলপেট কোমল সাবানের পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এভাবে প্রতিটি ডায়াপার বদলে দেওয়ার পর শিশুর ডায়াপার অঞ্চল চলমান পানি ধুয়ে দিতে হবে। তবে অনেক মা-বাবাই এখানে কৃত্রিম এমন কিছু ব্যবহার করেন (সুগন্ধি টিস্যু পেপার ও পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ তৈরি উপকরণ), যার কিছুটা শিশুর ত্বকের রয়ে যায়। এ ধরনের জিনিস ত্বকের জন্য উত্তেজক হতে পারে, বিশেষ করে ততক্ষণে শিশুর যদি ডায়াপার র্যাশ থেকে থাকে।
ডায়াপার র্যাশ দ্রুত সেরে উঠবে যদি র্যাশ আক্রান্ত স্থানে খোলা বাতাস লাগতে দেওয়া যায়। এ জন্য ডায়াপার বদলে স্থানটি পরিষ্কার করার পর অন্তত ১০-১৫ মিনিট ডায়াপারহীন অবস্থায় রাখুন।
হালকা গরম পানিতে বসান
যখন ডায়াপার র্যাশ অস্বস্তির উদ্রেক করবে, তখন ‘সিজবাথ’ ত্বকের আর্দ্রতা সঞ্চয়ের সাহায্য করবে। এতে র্যাশ দ্রুত সেরে উঠবে। সিজবাথ হচ্ছে একটি বড় গামলা বা টাবে কয়েক ইঞ্চি সহ্যকর হালকা গরম পানির মধ্যে নিতম্ব ডুবিয়ে বসিয়ে রাখা। শিশুকে এভাবে খেলনা দিয়ে সিজবাথে বসিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি সিজবাথের সময় ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। এতে কিছুটা উপকার অবশ্যই হবে।
মলম লাগাতে পারেন
র্যাশের স্থানগুলোতে অ্যান্টিসেপটিক অয়েনমেন্ট, যেমন—জেনটামাইসিস (জেনটিন/জেনটোসেপ) অয়েনমেন্ট লাগাতে পারেন। লাগাতে পারেন সাধারণত ভ্যাসলিন বা ভিটামিন ই ক্রিম।
ডায়াপার যেন আঁটসাঁট না হয়
ডায়াপার খুব টাইট হলে দুই ঊরুর কাছে ইলাস্টিক কেটে দিতে পারেন। এতে ডায়াপার ঢিলে হবে। ডায়াপার ঢিলে হলে ভেতরে বাতাস থাকে। এটি র্যাশ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
ডায়াপার র্যাশের কারণে ত্বকে সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা দেখা দিলেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে :
- ডায়াপার র্যাশ পেকে যেতে থাকলে কিংবা পুঁজ হলে
- ডায়াপার র্যাশ হয়ে ত্বক ছুলে গেলে
- ত্বক প্রচণ্ডভাবে লালাভ হয়ে ফুলে উঠলে
- ডায়াপার র্যাশ থেকে কষ ঝরলে
- ডায়াপার র্যাশের সঙ্গে অন্য কোনো চর্মরোগের সংক্রমণ ঘটেছে মনে করলে
- র্যাশগুলো প্রচণ্ড চুলকালে। কারণ, চুলকানোর কারণে ত্বকে ঘা হয়ে যেতে পারে।
cl-ntv