প্রতিবছর কয়েক লাখ শিশু মারা যাচ্ছে নিউমোনিয়ায়! নিউমোনিয়ার লক্ষণ কী? চিকিৎসায় কী করবেন?
প্রশ্ন : একটি শিশুর নিউমোনিয়া হলে কোন কোন ধরনের উপসর্গ বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়?
উত্তর : মায়েরা শিশুদের নিয়ে আসে। নিয়ে এসে বলে, ‘স্যার, আমার বাচ্চার তো জ্বর হয়েছে, ঠান্ডা হয়েছে, কাশি হয়েছে।’ তখন প্রথমেই শিশু চিকিৎসক দেখবেন বাচ্চা কি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, নাকি এটি কোনো সাধারণ সর্দি-জ্বর বা সাধারণ ঠান্ডা। কারণ, সাধারণ সর্দি-জ্বর বা সাধারণ ঠান্ডা এটা বয়স্কদের মধ্যে যেমন হয়, তেমনি বাচ্চাদেরও অহরহ লেগে থাকতে পারে। তবে এটি মারাত্মক কোনো রোগ নয়। বাংলাদেশে যে প্রায় দুই কোটি শিশু রয়েছে, এর মধ্যে প্রতিবছর কয়েক লাখ শিশু মারা যাচ্ছে নিউমোনিয়ায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া।
নিউমোনিয়ার প্রধান উপসর্গ হলো হঠাৎ করে বাচ্চাটা জ্বরে আক্রান্ত হবে, হঠাৎ করে বাচ্চাটা রাত-দিন সব সময় কাশি থাকবে, এর পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট থাকবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাচ্চাটার খাবার খেতে কষ্ট হবে, খাওয়া ছেড়ে দেবে। এমনকি কিছু খেতে গেলেই বমি করবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাচ্চাটা নির্জীব হয়ে যায়, দুর্বল হয়ে পড়ে, ঠিকমতো তাকাতে চায় না, ঠিকমতো চলাফেরা করতে চায় না, ঠিকমতো খেলাধুলা করতে চায় না।
প্রশ্ন : নিউমোনিয়াজনিত শ্বাসকষ্ট বোঝার উপায় কী?
উত্তর : হঠাৎ করে যদি কোনো বাচ্চা আক্রান্ত হয়, জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট এ তিনটি লক্ষণ যদি একত্রে কোনো বাচ্চার থাকে, ডাক্তারকে অবশ্যই শিশুটাকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। শুধু লক্ষণ দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখবেন, শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের হার কত? একটি সুস্থ বাচ্চা প্রতি মিনিটে হয়তো ৪০ বারের কম শ্বাস-প্রশ্বাস নেবে। তবে যখন নিউমোনিয়া হবে, তখন শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যাবে। প্রতি মিনিটে হয়তো ৫০/৬০/৭০ বা তার চেয়ে বেশি হতে পারে। এটি নিউমোনিয়ার একটি লক্ষণ। চিকিৎসক পরীক্ষা করলে এটি ধরতে পারবেন। এ ছাড়া অনেক সময় বাচ্চার হৃদস্পন্দনও দ্রুত হয়ে যেতে পারে জ্বরের কারণে বা শ্বাসকষ্টের কারণে।
বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রধান ওষুধ। এর পাশাপাশি আরো ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮০২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ সুলতান উদ্দীন।
প্রশ্ন : এরপর আপনারা কী করেন?
উত্তর : সব ক্ষেত্রে হয়তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব হয় না। পরীক্ষা-নিরীক্ষারলা ফল আসার আগেই চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। কারণ, বাচ্চাদের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এটি কম হওয়ার কারণে যেকোনো সময় নিউমোনিয়া থেকে অন্য কোনো ধরনের জটিলতা, যেমন হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।
চিকিৎসক কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেবেন। তবে সেই প্রতিবেদন হাতে আসার আগেই, লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে, দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে। নিউমোনিয়ার চিকিৎসার প্রধান বিষয় হলো অ্যান্টিবায়োটিক। এটি বাচ্চাকে মুখে খাওয়ার জন্যও দেওয়া যেতে পারে, যদি নিউমোনিয়া সাধারণ পর্যায়ে হয়। আর নিউমোনিয়াকে আমরা দুভাগে ভাগ করতে পারি। একটি মারাত্মক পর্যায়, আরেকটি হলো সাধারণ পর্যায়। যদি মারাত্মক পর্যায়ের হয়, তাহলে বাচ্চাকে মুখে ওষুধ দিলে বাচ্চা হয়তো খেতে পারবে না বা বাচ্চা মুখে খেলেও পেটে রাখতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা বাচ্চাদের হাসপাতালে ভর্তি করে ইনজেকশন, অ্যান্টিবায়োটিক, অক্সিজেন, এসব চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।
প্রশ্ন : সাধারণত নিউমোনিয়ার চিকিৎসা কত দিন ধরে চলতে থাকে?
উত্তর : সাধারণ নিউমোনিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত এক সপ্তাহ ধরে দিতে হয়। নিউমোনিয়া আক্রান্ত বাচ্চার সাধারণত জ্বর থাকে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি কাশি থাকে, সে জন্য জ্বরের নিরাময় হিসেবে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য তুলসী পাতার রস, একটু মধু এগুলো খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। তাহলে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর কাশি, শ্বাসকষ্ট দ্রুত কমে যাবে।
প্রশ্ন : সাধারণ নিউমোনিয়ার চিকিৎসা না করা হলে সেটি মারাত্মক পর্যায়ে যাবে?
উত্তর : হ্যাঁ। অনেক ক্ষেত্রে সব রোগজীবাণুর রোগ তৈরি করার ক্ষমতাও সমান হয় না। যেমন স্টেফার কক্কাস ওরিয়াস একটি জীবাণু আছে, যেগুলো বাচ্চাদের আক্রান্ত করলেই নিউমোনিয়া খুব মারাত্মক পর্যায়ে পড়ে যায়। এটি একটি কারণ থাকে। আর বাচ্চার পুষ্টির অবস্থার ওপরও নিউমোনিয়া নির্ভর করে। একটি বাচ্চার পুষ্টি যদি ভালো থাকে, তাহলে নিউমোনিয়া হলেও মারাত্মক পর্যায়ে যায় না। আর একটি বাচ্চা যদি অপুষ্টিতে ভোগে, তাহলে সাধারণ রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হলেও কিন্তু বাচ্চার নিউমোনিয়া মারাত্মক পর্যায়ে যেতে পারে।
ডা. মুহাম্মদ সুলতান উদ্দীন। বর্তমানে তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।