সন্তানের জন্য বাসাকে নিরাপদ এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধী করে তুলুন
শৈশবে বিভিন্ন অঙ্গে জখম হওয়া এবং শিশুদের মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর মধ্যে বিশ্বজুড়ে বাড়ির অভ্যন্তরীণ দুর্ঘটনাগুলো অন্যতম। বাড়িকে চাইল্ডপ্রুফিং করা হলে এসবের ঝুঁকি অনেক পরিমাণে হ্রাস করা সম্ভব। ঘরের মধ্যে দুর্ঘটনার মধ্যে রয়েছে আগুনে পোড়া, পরে যাওয়া, বিদ্যুৎপাত, ডুবে যাওয়া, বিষক্রিয়া, দম বন্ধ হওয়া, এবং মাথায় আঘাত পাওয়া।
কিছু সচেতনামূলক পদক্ষেপ আপনি মেনে চললে এসব এড়ানো সম্ভব। পোড়া জখম এর ক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেনঃ
– শিখার মোমবাতিগুলি ব্যবহার বন্ধ দিয়ে ব্যাটারিচালিত বাতি ব্যবহার করতে পারেন।
– চুলার উপর গিঁট কভার ব্যবহার করুন আর হ্যান্ডলগুলি আপনার হাঁড়ির উপর রাখুন এবং প্যানগুলি চুলার পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দিন যাতে করে আপনার শিশু এই গরম প্যানটি নীচে টেনে তার উপরে না নিয়ে আসে।
– গরম জলে পোড়া প্রতিরোধ করতে আপনার বাথরুম এবং রান্নাঘরে চাইল্ডপ্রুফ কল এবং ঝরনা স্পাউট কভারগুলি ইনস্টল করুন। আপনার শিশু যদি কাছাকাছি থাকো তখন পানি গরম করার ক্ষেত্রে উত্তাপের তাপমাত্রা কম করে রাখুন।
– সর্বদা ম্যাচ এবং লাইটার বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখুন।
– বাচ্চাদের আশেপাশে সিগারেট জ্বালিয়ে রাখবেন না।
– ধোঁয়া ডিটেক্টর ইনস্টল করুন এবং নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে যে খাবার গুলো খাওয়া জরুরি
পরে যাওয়ার সম্ভাবনাঃ
– সিঁড়ির আশেপাশে শিশুদের জন্যে গেট এর ব্যবস্থা করুন। প্রত্যেক রুমে প্রবেশ করার দরজায় গেট রাখুন।আর যে কক্ষগুলো শিশুদের জন্যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে সেগুলো সর্বদা বন্ধ রাখুন। কক্ষগুলির মধ্যে রয়েছে রান্নাঘর, বাথরুম, গ্যারেজ, লন্ড্রি রুম।
– প্রায় বাচ্চারা বারান্দা অথবা সিড়ি থেকে পরে যায় সেজন্যে আপনার ঘরের দরজায় অতিরিক্ত কভার সংযুক্ত করতে পারেন যেন বাচ্চারা সহজেই ঘরের বাইরে না যেতে পারে।
– বাধা জাল দিয়ে সুরক্ষামূলক জানালা তৈরী করতে পারেন। আর জানালায় জাল লাগানোর সময় জানালা থেকে সর্বোচ্চ ৪ ইঞ্চি বাহিরে লাগাবেন।
– জানালার গ্রীল অথবা লোহা অনেক শক্ত করে লাগানো হয়। সেজন্যে জানালায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা রাখা উচিত যেন আগুন লাগলে সহজেই সুরক্ষিত স্থানে পৌছানো যায়। বারান্দার চারপাশে জাল বাঁধা ব্যবহার করতে পারেন।
– সকল ধরনের ভারী আসবাবপত্র রুমের দেয়ালের বিপরীত দিকে রাখবেন, এতে করে বাচ্চারা আসবাবপত্রের নিচে যেতে পারবেনা আর ভারী আসবাবপত্রের নিচে পরে কোনো বাচ্চা দুর্ঘটনার স্বীকার ও হবেনা।
বিষাক্তকরণ: রান্নাঘর, লকার, বাক্স অথবা ড্রয়ারেই ঘরের বিষজাতীয় উপকরণগুলো থাকে। এসকল উপকরণের মধ্যে পরিষ্কার করার উপকরণ , ওষুধ, লন্ড্রি ডিটারজেন্ট এবং ডিশওয়াশার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এগুলো অবশ্যই আরো সুরক্ষিত জায়গায় সংরক্ষন করে রাখবেন।
ডুবে যাওয়ার মতো যেসব সম্ভাবনা:
– বাথ টব, শিশু পুল থেকে ব্যবহারের পরে জল বের করে রাখবেন। আপনার টয়লেটে একটি চাইল্ডপ্রুফ লক ইনস্টল করুন। তারপর আপনার ঘরের বাহিরের যত পানি সরবরাহের উপকরণ থাকবে সব জায়গায় ড্রেনের ব্যবস্থা করুন।
– বাথরুমের দিকে যাওয়ার দরজাগুলিতে সুরক্ষার জন্যে অতিরুক্ত কভারের ব্যবস্থা করুন।
– আপনার শিশু এবং আশেপাশের বাচ্চাদের সুরক্ষার জন্য খেলার স্থান নির্ধারণ করে ৪-৫ ফুট জুড়ে বাধ তৈরী করুন আর গেটটি লক করে দিন।
– বাইরের দিকে যাওয়ার দরজা একটি সুরক্ষিত লক যুক্ত করে দিন। স্লাইডিং গ্লাসের দরজাগুলিতে অতিরিক্ত লকার ব্যবহার করুন যেন প্রাপ্তবয়স্ক ছাড়া সহজেই কেও খুলে দিতে না পারে।
– হট টবে একটি ভাসমান পুল অ্যালার্ম ব্যবহার করে নিতে পারেন। তাহলে যখন কেউ জলে নামবে তখন এই ডিভাইসটি একটি সতর্কতা শব্দ দিবে।
দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা:
– ছোট বাচ্চাদের খেলনা, কয়েন, পোশাক, বোতাম এবং অন্যান্য দমবন্ধ হওয়ার ঝুঁকি আছে এমন খেলনা বা উপকরনাদি আপনার বাচ্চা বা ছোট বাচ্চা থেকে দূরে রাখুন।
পুড়ে যাওয়া: শিশুরা মোমবাতি, জ্বালানো সিগারেট , গরম চুলা, এবং আগুন থেকে হালকা এবং মারাত্মক পোড়া উভয়ভাবেই আহত হতে পারে। তাই যতটুকু সম্ভব আপনি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রাখাই উত্তম।
পরে যাওয়াঃ সিঁড়ি থেকে নীচে পড়ে যাওয়া বা বারান্দা বা উইন্ডো থেকে পরে হাড় ভেঙ্গে যাওয়া অথবা মারাত্মক ভাবে মাথায় জখম হতে পারে। তাই অবশ্যই দরজা, জানালা, বারান্দা প্রত্যেকটি স্থানের জন্য অতিরিক্ত কভার ব্যবহার করবেন।
বিষক্রিয়া: লন্ড্রি এবং ডিশ ওয়াশারের জন্য ব্যবহৃত রঙিন পানীয় সহ অনেকগুলি বিষ শিশুদের আক্রান্ত করতে পারে বলে মনে হয়। রঙিন ওষুধ শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় দেখায়। তাছাড়া কার্বন মনোক্সাইড গন্ধহীন এবং অদৃশ্য হয় যে কারণে ঝুকি বেশি থাকে। তাই যতটুকু সম্ভব এগুলো থেকে অবশ্য অবশ্যই বাচ্চাদের দূরে রাখবেন আর এগুলো অবশ্যই লকারের মধ্যে রাখবেন।
ডুবে যাওয়া: একটি শিশু 2 ইঞ্চি জলে ডুবে যেতে পারে। আপনার শিশুদের খেলার পাশাপাশি রান্নাঘরের ডোবা, বাথটাব বা টয়লেটের কাছাকাছি থাকলে ঝুকি বেশি থাকে। তাই এগুলোর পাশে শিশুকে ছেড়ে দিবেন না।
দম বন্ধ: ছোট বাচ্চারা খাওয়ার সময় বা মুখে খাবার ছাড়াও কোনও জিনিস রাখার সময় দম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। যদি দেখেন আপনার শিশু দম বন্ধ করে দিচ্ছে কিন্তু আপনি তার কাশি শুনতে পাচ্ছেন না। তখন আপনি খেয়াল করবেন আপনার শিশু কথা বলতে বা শব্দ করতে পারবেনা, তখন সে উচ্চস্বরে আওয়াজ বা দম নিতে পারে তখন যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হবেন এবং প্রাথমিক কোনো চিকিৎসা এর ব্যবস্থা থাকলে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।
শ্বাসরোধ ও শ্বাসরুদ্ধকরন: আবর্জনা বা শুকনো পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যাগ সহ অনেকগুলি আইটেম আছে যা দম বন্ধ করতে পারে। বাচ্চারা খেলনা বাক্সে বা আনপ্লাগড ফ্রিজার বা রেফ্রিজারেটরে আরোহণ করলেও শ্বাসরোধ হতে পারে। তাই যথাসম্ভব বাচ্চাদের সাবধানে রাখবেন আর নিজেরাও সাবধানে থাকবেন।
CLTD: Womenscorner