আপনার শিশুটি কি অতি চঞ্চল?

চঞ্চলতা শিশুর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু কেউ কেউ দুষ্টুমি আর চঞ্চলতায় অতিষ্ঠ। স্কুল, প্রতিবেশীর কাছ থেকে নিত্য অভিযোগ আসে। লজ্জায় মুখ দেখানোর জো নেই মা-বাবার। তার মানে কি শিশুটি অসুস্থ?

শিশুর অতি চঞ্চলতা আর অমনোযোগিতা তার দৈনন্দিন কাজকে যখন বাধাগ্রস্ত করে, লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটায়, তখন এই প্রবণতাকে বলা হয় এটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি)। এটি শিশুর একধরনের আচরণজনিত সমস্যা।

বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষক সবার আগে এ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারেন। যেমন কোনো কিছুর প্রতি বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, সারাক্ষণ ছোটাছুটি করা, চিন্তাভাবনা না করে হঠাৎ কিছু করে ফেলা, স্থির বসে থাকতে না পারা, বই-কলম প্রায়ই হারিয়ে ফেলা, লাফিয়ে উঁচুতে উঠে যাওয়া, প্রশ্ন শোনার আগেই জবাব দেওয়া, পড়ালেখা এমনকি খেলাধুলাতেও মনঃসংযোগ রাখতে না পারা। বড়দের কাজ বা কথার মাঝে ক্রমাগত বাধা দিতে থাকে। একসঙ্গে অনেক কিছু করার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনোটাই শেষ করে না।

তবে শিশুর সাধারণ চঞ্চলতাকে যেন ‘এডিএইচডি’ মনে করা না হয়। শিশুমাত্রই কিছুটা দুষ্টুমি করবে, বড়দের মতো মনঃসংযোগ ও ধৈর্য শিশুদের মধ্যে আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু অতি চঞ্চলতার এই লক্ষণগুলো যদি একটি সাত বছরের কম বয়সী শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ছয় মাস ধরে দেখা যায় এবং এ কারণে তার পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হতে থাকে, তখনই সেটাকে এডিএইচডি বলা হয়।

কোনো আত্মীয় বা প্রতিবেশীর কথায় নিজের শিশুকে অযথা রোগী ভাববেন না। যদি শিশুর মধ্যে এসব লক্ষণ থাকে তবে একজন মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিন। এ ধরনের শিশুর বাবা-মায়েদের কিছু নির্দেশনা মেনে চলা উচিত:

* শিশুর জন্য একটা রুটিন তৈরি করুন। বাড়ির সবাই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলুন। যেমন ঠিক সময়ে ঘুমানো, খাবার সময় হলে টেবিলে বসা, খেলার সময় খেলা ইত্যাদি।

* শিশুকে কোনো নির্দেশ দিলে তা বুঝিয়ে বলবেন। রূঢ় আচরণ করবেন না। বকাবকি, মারধর সমস্যার সমাধান নয়।

* শিশুর ভালো কাজকে প্রশংসা করুন, কখনো পুরস্কার দিন।

* শিশুর খাদ্যতালিকায় কৃত্রিম রং আর মিষ্টির পরিমাণ কমিয়ে তাজা ফলমূল যুক্ত করুন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা

Sharing is caring!

Comments are closed.