শিশুর আকিকা করার নিয়ম
সন্তানের আকিকা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
তাই এ নিয়ে অবহেলা করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে তা সম্পাদন করেছেন, করতে বলেছেন, আমাদেরও সেভাবে তা করতে হবে।
ইসলামের পরিভাষায় সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর আল্লাহর শুকরিয়া ও আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যে পশু জবাই করা হয়, তাকে আকিকা বলা হয়। অধিকাংশ আলেমের মতে, সন্তানের আকিকা করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি তার সন্তানের আকিকা করতে চায়, সে যেন তা পালন করে।’ (আবু দাউদ)। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘প্রতিটি সন্তানই আকিকার বিনিময়ে আটক থাকে।’ (আহমাদ, তিরমিজি)। আকিকার বিনিময়ে সন্তান আটক থাকার ব্যাপারে আলেমদের কয়েক ধরনের বক্তব্য রয়েছে। এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের কথাটি সবচেয়ে সুন্দর ও বিশুদ্ধ।
তিনি বলেন, কথাটি শাফায়াতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ, আকিকা দেয়া হয়নি এমন শিশু সন্তান যদি মারা যায়, কেয়ামতের দিন পিতা-মাতা সে শিশুর শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হবে। আর হাদিসে একথা প্রমাণিত। মুসলমানদের যেসব শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করবে, তারা তাদের মুসলিম পিতা-মাতার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে।
কখন আকিকা : আকিকার উত্তম সময় হলো সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিবস। সপ্তম দিনে আকিকা দিতে না পারলে ১৪তম দিনে, তা করতে না পারলে ২১তম দিনে আকিকা দেবেন। সপ্তম দিনে আকিকা করার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের সুন্দর নাম রাখা, মাথার চুল কামানো এবং চুলের সমপরিমাণ ওজনের রৌপ্য সদকা করাও মুস্তাহাব। (তিরমিজি)।
বিনা কারণে আকিকায় বিলম্ব করা সুন্নতের পরিপন্থী। দারিদ্র্য বা অন্য কোনো কারণে যদি উল্লিখিত সময়ের মধ্যে আকিকা না করে, তবে সন্তান ছোট থাকা অবস্থায় যখনই অভাব দূর হবে, তখনই আকিকা করা যাবে। অভাবের কারণে যদি কোনো লোক তার শিশু ছেলেমেয়েদের আকিকা করতে না পারে, তাহলে সন্তান বড় হওয়ার পর যদি তার আর্থিক অবস্থা ভালো হয়,
তখন আকিকা করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং পিতা-মাতা সওয়াব পাবে, ইনশাআল্লাহ। এমনকি কারও পিতা-মাতা যদি আকিকা না করে, সে ব্যক্তি বড় হয়ে নিজের আকিকা নিজে করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) নবুওয়ত পাওয়ার পর নিজের আকিকা নিজে করেছেন।’ (বায়হাকি)।
আকিকার ক্ষেত্রে সুন্নত হলো, ছেলে সন্তান হলে দুটি দুম্বা বা ছাগল আর মেয়ে সন্তান হলে একটি দুম্বা বা ছাগল দিয়ে আকিকা করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দুটি সমবয়সের ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দিয়ে আকিকা দিতে হবে।’ (তিরমিজি)।
আকিকার পশু কেমন হবে : যে ধরনের ও বয়সের ছাগল বা দুম্বা কোরবানির ক্ষেত্রে বৈধ, তা দিয়ে আকিকা করতে হবে। অর্থাৎ কোরবানির পশুর যেসব দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া শর্ত, আকিকার ছাগল-খাসি বা দুম্বাও সেসব দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে যদি ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল দিয়ে আকিকা দিতে না পারে, তবে একটি দিয়ে আকিকা দিলেও চলবে। কেননা রাসূল (সা.) থেকে ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি করে দুম্বা দিয়ে আকিকা করার কথাও প্রমাণিত আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) হাসান এবং হোসাইনের পক্ষ থেকে একটি করে দুম্বা আকিকা করেছেন। (আবু দাউদ)। তবে সামর্থ্যবান ব্যক্তির পক্ষে একটি ছাগল দিয়ে ছেলে সন্তানের আকিকা করা উচিত নয়। মোট কথা, ছেলে সন্তানের আকিকার জন্য দুটি ছাগল বা দুম্বা হওয়া জরুরি নয়; বরং মুস্তাহাব।
আকিকার গোশত : আকিকার গোশত কোরবানির গোশতের মতোই। তা নিজে খাবে, আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়াবে এবং গরিব-মিসকিনকে সদকা করবে। কোরবানির গোশত যেমন তিন ভাগ করে একভাগ নিজে খাওয়া, একভাগ সদকা করা এবং এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া হিসেবে দান করা জরুরি নয়, ঠিক তেমনি আকিকার গোশতও ওই নিয়মে তিন ভাগ করা জরুরি নয়। আকিকার গোশত যদি সম্পূর্ণটাই রান্না করে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এবং অন্য মুসলমানদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায়, তাতেও যথেষ্ট হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, কোনো ক্রমেই যাতে হাদিয়া বা উপহারের আশায় শুধু ধনী ও সম্মানী লোকদের দাওয়াত দিয়ে দরিদ্র ও অভাবী ব্যক্তিদের প্রত্যাখ্যান না করা হয়। যা আমাদের দেশে অনেক সমাজেই বিয়ে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে।