গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতার কারণ, করণীয়

রক্তে স্বাভাবিকের তুলনায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে তাকে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা বলে। রক্তস্বল্পতা বিশ্বব্যাপী খুব সাধারণ একটি সমস্যা। বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে নানাবিধ কারণে রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়ায় ভুগে থাকে।

বিভিন্ন কারণে রক্তস্বল্পতা হয়। গর্ভাবস্থায়ও রক্তস্বল্পতা হতে পারে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীদের গর্ভাবস্থা জনিত রক্তস্বল্পতার হার ৪০ থেকে ৮০ ভাগ। গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতার কারণটি মূলত শরীরবৃত্তীয়। গর্ভ ধারনের পর নারীর শরীরজুড়ে চলতে থাকে নানা রকম হরমোন ও হরমোন জাতীয় উপাদানের উত্থান-পতন। সঙ্গে রয়েছে গর্ভস্থ শিশুর বাড়তি চাহিদা। এতে শরীরের লোহিত কণিকা উৎপাদনের হার বেড়ে যায় শতকরা ২৫ ভাগ। আর লোহিত কণিকা তৈরির কাঁচামাল হলো আয়রন। এতে তখন কাঁচামালে টান পড়ে এবং বাড়তি আয়রনের জোগান দিতে না পারলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। অপরদিকে রক্ত রসের পরিমাণ বাড়ে প্রায় ৪৫ ভাগ। এটাও সমস্যা। লোহিত রক্ত কণিকার তুলনায় রক্ত রসের উৎপাদন বেড়ে গেলে রক্তে এক ধরনের তরলায়ন হয়। এতে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা হয়। এ ছাড়া বিশেষ কিছু অসুখ যেমন কৃমি, পাইলস, আলসার, পাইলস, থ্যালাসেমিয়া প্রভৃতি – এরাও গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতার কারণ হিসেবে যুক্ত হয়।

লক্ষণ

শারীরিক দুর্বলতা , অল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট, বুক ধরফর, মাথা ধরা, মাথা ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, ফ্যাকাশে বা সাদাটে হয়ে যাওয়া, চুলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়া ইত্যাদি। তবে এসব লক্ষণের কিছু কিছু গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে এমনিতেও দেখা দিতে পারে। আবার কোনো লক্ষণ ছাড়াও রক্ত স্বল্পতা হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় শুরু থেকেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়মিত পরামর্শ নিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা ও অ্যান্টিনেটাল চেক আপ করতে হবে।

পরীক্ষা নিরীক্ষা

  • · রক্তের রুটিন পরীক্ষা ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা
  • · আয়রনের মাত্রা
  • · প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা,
  • · পায়খানার অকাল্ট ব্লাড পরীক্ষা
  • · আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা।
  • এ ছাড়া অন্যান্য রোগ থাকলে সে অনুযায়ী পরীক্ষা করতে হবে।

জটিলতা

গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা থাকলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এ ছাড়া প্রি একলাম্পসিয়া, প্রি-ম্যাচুর ডেলিভারি, প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ, প্রস্রাবের সংক্রমণ, ফুসফুসের সংক্রমণ, প্রসব পরবর্তী জরায়ুর সংক্রমণ, জরায়ু সংকুচিত না হওয়া প্রভৃতি ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। এমনকি গর্ভাবস্থায় রক্ত স্বল্পতা অনেক সময় মাতৃমুত্যুর কারণও হতে পারে। শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ে।

চিকিৎসা

যথাযথ আয়রন চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার অনেকখানিই নিরাময় সম্ভব। অন্যান্য রোগ থাকলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। প্রয়োজনে রক্ত পরিসঞ্চালনও করতে হতে পারে।

প্রতিরোধ

এ ক্ষেত্রে সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়িমিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। গর্ভবতী নারী স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণে একটু বেশি খাবেন। গর্ভাবস্থায় শুরু থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়মিত তত্ত্বাবধায়নে থাকলে সমস্যা শুরুতেই চিহ্নিত করা সম্ভব। তাই নিয়মিত অ্যান্টিন্যাটাল চেকআপ খুব জরুরি। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন –পালংশাক, কচু শাক, কাঁচা কলা, মুরগি ও গরু- খাসির কলিজা, মাংস, দুধ, ডিম প্রভৃতি খেতে হবে। প্রয়োজনে আয়রন সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। এভাবে সচেতন হলে রক্তস্বল্পতা জনিত শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

লেখক : রেসিডেন্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়   — NTV

Sharing is caring!

Comments are closed.