শিশুর শীতের যত্নে যা করবেন

শীতে প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন আসে তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিশুর একটু কষ্টই হয়। এ ক্ষেত্রে তাই সতর্ক হতে হবে। শীতে জ্বর, সর্দি,  কিংবা কাশি সাধারণ ঘটনা। এসব জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ, নাকে পানি পড়ার জন্য হিসটাসিন বা অ্যালাট্রল এবং কাশির জন্য সালবুটামল  সিরাপ বয়স অনুযায়ী খাওয়ালে ভালো হয়ে যায়। অনেকের আবার তাও লাগে না। লবণ-পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার এবং বুকের দুধ ও পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়ালেই ভালো হয়ে যায়। বাসক পাতার রস এবং মধুও ভালো কাজে দেয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা জানান, শীতে শিশুর সর্দি-কাশির বেশির ভাগই ভাইরাসজনিত। এগুলোয় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো দরকার পড়ে না। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। তবে এ কথাও সত্যি যে ঘরোয়া চিকিৎসাতেই অধিকাংশ সর্দিজ্বর ভালো হয়।

কখন ডাক্তার দেখাবেন  
•    শিশু দ্রুত শ্বাস নিলে, (নবজাতকের জন্য মিনিটে  ৬০, ১ বছর পর্যন্ত ৫০ এবং এরপর মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস নিলে)

•    বুক নিচের দিকে দেবে গেলে

•    টানা কয়েকদিন বেশি  জ্বর থাকলে

•    খুব দুর্বল হয়ে গেলে এবং অতিরিক্ত কান্না করলে

বিপদচিহ্ন 
•    শিশু অচেতন হয়ে গেলে

•     খিঁচুনি হলে

•     কিছুই খাওয়ানো না গেলে বা সবকিছুই বমি করে ফেলে দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে

শিশুর ত্বক ও শ্বাসতন্ত্র নাজুক এবং অপরিণত। তাই শিশু তাপ ধরে রাখতে পারে না, সহজে ঠান্ডা হয়ে যায়। এ সময় তাই তাকে পর্যাপ্ত শীতের কাপড় পরাতে হবে। তবে এর মানে এই নয় যে, শিশুকে নাক-মুখ বন্ধ করে, শক্ত করে মুড়িয়ে দিতে হবে। শীতের কাপড় যেন আরামদায়ক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি রোগ বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান জানান, ‘শীতে ঘাম কম হওয়ার কারণে শিশুর প্রস্রাব বেশি হয়। এ জন্য নবজাতকের কাঁথা ভিজে যাচ্ছে কি না বা একটু বড় শিশুর প্যান্ট ভিজছে কি না তা সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে বেশি প্রস্রাব করছে দেখে শিশুকে বুকের দুধ ও তরল খাবার কমিয়ে দেন। এটি খুবই মারাত্মক একটি পদক্ষেপ, যা কখনোই করা উচিত নয়। এতে কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।’

শীতে শিশুদের কোমল ত্বকের যত্নে অবশ্যই ভালো মানের লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। শুধু মুখে নয়, সারা শরীরে মাখতে হবে। শিশুকে পর্যাপ্ত সময় রোদে রাখতেও ভুলবেন না। শীতে গোসল করতে কিন্তু বাধা নেই। কুসুম গরম পানি দিয়ে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে পারেন। অনেকে গোসলের আগে সর্ষের তেল মাখিয়ে দেন। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, অবশ্য ক্ষতিও নেই। তবে গোসল করানোর সময় কানে যাতে পানি না ঢোকে, সেদিকে কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে। আর শরীর ভালোভাবে মুছতে ভুলবেন না। শিশুকে নিয়ে বেশি ভয় থেকে কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠদের পরামর্শে শীতে অনেক মা খাওয়া-দাওয়া ও জীবনাচরণে খুবই কঠোরতা অবলম্বন করেন। বিশেষ করে নবজাতকের মায়েরা এসব বেশি করেন। অনেকে নিজের সর্দি-কাশি হলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন। গ্রামাঞ্চলের মতো শহরেও এসব ঘটনা বিরল নয়। এসবে শিশুর তো লাভ হয়ই না বরং ক্ষতি হতে পারে। আসলে বিভিন্ন ঋতুর মতো শীতেও শিশুর নানা রোগ হতে পারে, এটা আলাদা বিশেষ কোনো ব্যাপার নয়। এ জন্য দুশ্চিন্তারও কারণ নেই। খুব বেশি  প্রয়োজন হলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যান।

 লেখক : রেজিস্ট্রার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

Sharing is caring!

Comments are closed.