শিশুর জন্য ফল না ফলের জুস?

ফলের জুস নিয়ে আলোচনা করার আগে মায়েদের জানা দরকার যে বর্তমানে ফরমালিনের বিষ তো আছেই কিন্তু তার চেয়ে চিন্তার কারণ হলো ফলের পুষ্টিগুন কমে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে আমেরিকান কলেজ অব নিউট্রিশন এর জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে যায় যে, দাদা ১৯৫৩ সালে একটি কমলা খেয়ে যে পরিমান ভিটামিন এ পেত ২০০৯ সালে সে পরিমান ভিটামিন এ এর জন্য নাতিকে ৮টি কমলা খেতে হবে। পুষ্টিগুণ কমেছে কমলাও, কলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমেছে ২৪ শতাংশ আর আয়রনের ৫০%। টমেটোর ভিটামিন এ এর পরিমাণ কমেছে প্রায় শতভাগ। আর ভিটামিন সি ৫৮%। সুতরাং আমাদের বাচ্চারা এসব ফল থেকে আসলে কত ভিটামিন পাচ্ছে তা ভেবে দেখা দরকার আছে।

দাদা ১৯৫৩ সালে একটি কমলা খেয়ে যে পরিমাণ ভিটামিন পেত ২০০৯ সালে সে পরিমাণ ভিটামিন এ এর জন্য নাতি কে ৮টি কমলা খেতে হবে। এবার আসা যাক জুসের প্রসঙ্গে মায়েদের কাছে ফলের জুসের সমাদর অনেক। তারা মনে করে এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি। কিন্তু একটি কথা মনে রাখা দরকার, ফল কখনো ভাত বা সবজি মাছ বা এসব দিয়ে তৈরি খিচুড়ির বিকল্প হতে পারে না।

বাচ্চাকে পরিমিত ভাত বা খিচুড়ি খাওয়ানোর পরই কিন্তু ফল খাওয়াবেন। অনেক মা মনে করেন ফলের জুস খাওয়ানই বোধহয় ভালো। এতে সময় কম লাগে, ঝুঁকিও কম অনেকে আবার বাচ্চাকে ফল নাকি জুস খাওয়াবেন সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। যারা ফল ও ফলের জুস নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন তারা জেনে নিন ফল ও ফলের জুস এর মাঝে পুষ্টিগত পার্থক্য গুলো

ফলের খোসা

আপেল, স্ট্রবেরী, আঙ্গু্‌র, কমলার কোয়া ইত্যাদি রঙিন ফলগুলোর খোসায় থাকে প্রচুর ভিটামিন। ফল ত্বক হলো সেই স্থান যেখানে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এসে নানান রং তৈরি হয়। তাই ফলের খোসায় প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন ও ফ্ল্যাভনয়েড থাকে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ফল খাওয়ার সময় আমরা এগুলোর খোসাসহ খাই। কিন্তু জুস তৈরি করলে খোসা ছাড়িয়ে নেয়া হয় কিংবা ছেকে নেওয়া বলে ফলের খোসায় এসব উপাদান থাকে না। তাই ফল না খেয়ে ফলের জুস খেলে ফলের খোসার পুষ্টি তা পায় না শরীর।

ফলের পাল্প

তাজা ফলের জুস বানিয়ে খাবার সময় আমরা সাধারণত ফলের রস টা ছেঁকে নিয়ে নেই আর পাল্পটাকে ফেলে দেই। কিন্তু ফলের পাল্প এ আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। যেমন কমলার জুস বানানোর সময় আমরাযেই সাদা পাল্পটাকে ফেলে দেই তাতে আছে প্রচুর ফাইবার ও ফ্ল্যাভনয়েড যা শরীরের জন্য খুবই জরুরী।ফল খেলে আমরা পাল্পটাকে খাই বলে শরীরে এসব পুষ্টি উপাদান প্রবেশ করে।

অতিরিক্ত চিনি

ফলে এমনিতেই প্রাকৃতিক চিনির উপস্থিতি থাকে। জুস তৈরি করার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছু চিনি দেয়া হয়। তাই শরীরে প্রবেশ করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর

সহজেই জীবাণুর আক্রমণ

ফলের চাইতে ফলের জুসে তাড়াতাড়ি জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। একটি ফল তার খোসার ভেতরে থাকলে বেশ কিছু দিন পর্যন্ত জীবাণুমুক্ত থাকে। কিন্তু ফলের জুস তৈরি করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জীবাণুর আক্রমণ ঘটে এবং সেটা খেলে শরীরের ক্ষতি হয়।

দেশীয় জুসে ফলই নেই

আমাদের দেশে বিভিন্ন কোম্পানি যে ফলের জুস বা বোতলজাত ড্রিংক বিক্রি করে তার কোনোটাতেই কোন ফল থাকে না। আমের জুসে থাকে মিষ্টি কুমড়া! আমের রসে হয়তো সামান্য আম দেয় তবে বাকিটা অস্বাস্থ্যকর উপাদান। এগুলো কিডনি লিভার ইত্যাদি ক্ষতি করে। অনেকবার এদেরকে জরিমানা করার পরও কিছুই হয়নি। এদের ক্ষমতা অনেক। মিডিয়াতে বিজ্ঞাপনের পর বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের কেউ করছে বিভ্রান্ত। সচেতন মা-বাবাদের উচিত সন্তানকে এসব জুস না দেয়া। এখানে জুস নিয়ে যে আলোচনা করেছি তাতে বাসায় তৈরি বা বিদেশি জুস এর কথাই বলা হয়েছে।দেশীও অস্বাস্থ্যকর ওইসব জুসের কথা বলাই হয়নি।

শিশুদের ফলের জুস খাওয়ানোর ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা

  • ৬ মাসের নিচের শিশুদের ফলের জুস দেয়া ঠিক নয়।
  • ৬ মাসের বেশি বয়সের বাচ্চাদের জন্য আস্ত ফলের জুসের চেয়ে আস্ত ফল দেয়া ভালো।
  • ১ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ফলের জুসের উর্ধ্বসীমা ৪ থেকে ৬ আঙ্গুল প্রতিদিন সীমাবদ্ধ করা উচিত। ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এই সীমা ৮ থেকে ১২আউন্স ( প্রতিদিন দুইবার খাব)

বোতলে ফলের জুস দেয়া যাবে। না গ্লাসে দিন। মায়েরা চামচ দিয়ে খাওয়াবেন।

  • স্বচ্ছ বোতলে ফলের জুস রাখবেন না। টেবিলের উপর সহজলভ্য স্থানে ফলের জুস রাখবেন না। যেন শিশু নিজে থেকে সহজেই জুস খেতে না পারে।
  • ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতা দূর করতে ফলের জুস খাওয়া ঠিক নয়
  • বেশি জুস খেলে  পুষ্টিহীনতা  হতে পারে।
  • বেশি জুস খেলে বাচ্চাদের ডায়রিয়া,পেট ফাপা, পেটে ব্যথা করা, দাতের মাড়ি ক্ষয় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

ডাঃ আবু সাঈদ শিমুল।

Sharing is caring!

Comments are closed.