শিশুর শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে করনীয়!
তিনবছরে পা দেওয়া রাফিদকে আজ বেশ চুপচাপ দেখাচ্ছে। প্রতিদিনের দুষ্টুমি ভুলে আজ একমনে শুয়ে আছে। সংসারের নানা কাজের ফাঁকে হঠাত বিষয়টা চোখে পড়ল নবনীতার। কাছে এসে কপালে হাত ছুঁইয়ে দেখলো তাপে শরীর পুড়ে যাচ্ছে ছেলের। এমতাবস্থায় নবনীতা ঘাবড়ে গেলনা। কারণ বাচ্চার জ্বরে কি করণীয় তা সে জানে।
আসুন আমরাও ছোট্ট পরিসরে জেনে নেই শিহুর জ্বরের আদ্যোপান্ত-
তাপমাত্রা পরিমাপ:
সঠিক সময়ে তাপমাত্রা মাপুন শরীরের তাপমাত্রা সারাদিন ওঠা-নামা করে৷ তাপমাত্রা সাধারণভাবে শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার শুরুতে সবচেয়ে বেশি থাকে, আর সবচেয়ে কম থাকে সকাল বেলা৷ কিন্তু বিভিন্ন অসুখে জ্বরের ওঠা-নামা বিভিন্ন রকম৷বাচ্চা গরম দুধ বা পানীয় পান করে থাকলে তার ৩০ মিনিট পর তাপমাত্রা পরিমাপ করবেন। তাপমাত্রা পরিমাপের পদ্ধতি – শিশুর তাপমাত্রা সবচেয়ে ঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় পায়ুপথের থার্মোমিটারের (রেক্টাল থার্মোমিটার) সাহায্যে ৷ এটা মুখের থার্মোমিটারের (ওরাল থার্মোমিটার) চেয়ে ছোট এবং এর বাল্ক বেশি পুরু৷
প্রথমে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে এটাকে পিচ্ছিল করে নেবেন, তারপর থার্মোমিটারটা ধীরে ধীরে পায়ুপথে ঢোকাবেন, লক্ষ রাখবেন দেড় ইঞ্চির বেশি যেন না ঢোকে৷ আর এটা আস্তে করে কমপক্ষে তিন মিনিট ধরে রাখবেন। ৪-৫ বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে মুখের থার্মোমিটারের (ওরাল থার্মোমিটার) ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে বাচ্চার জিভের নিচে ওরাল থার্মোমিটারটি কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে রাখতে হবে। ডিজিটাল থার্মোমিটারগুলোতে দ্রুত ও ঠিকভাবে তাপমাত্রা মাপা যায় এবং এগুলো কাচপারদ থার্মোমিটারের চেয়ে নিরাপদ। এছাড়া শিশুর তাপমাত্রা বগলের নিচেও মাপা যায়৷ এক্ষেত্রে বগলের নিচে থার্মোমিটারটি কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে রাখতে হবে৷ পরিমাপ যাচাই করুন- ঌ৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রাকে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরা হয়৷ যদি আপনার শিশুর তাপমাত্রা পায়ুপথে ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, বগলে ঌঌ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, অথবা মুখে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয় তখনই বলা যাবে তার জ্বর হয়েছে।
জ্বর কমাতে স্পঞ্জ বাথঃ
পরিষ্কার তোয়ালে, গামছা বা সুতি বড় ওড়না কুসুম গরম বা ট্যাপের স্বাভাবিক পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে পানি চিপে/নিংড়ে নিয়ে ভেজা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে প্রথমে এক হাত পরে অন্য হাত, তারপর শরীর, দু’পা বিশেষ করে বগল ও কুচকি ভালো করে মুছে দিতে হবে।পানি শরীর থেকে বাষ্পীভূত হয়ে যাবার সময় শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে যার ফলে জ্বর কমে যায়। ভেজা কাপড় দিয়ে মোছার পরপরই শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে, যেন শরীর বেশিক্ষণ ভেজা না থাকে। কখনও বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করবেন না কারণ এতে শিশুর কাঁপুনি উঠতে পারে যা শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। এভাবে জ্বর না কমা পর্যন্ত (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট না হওয়া পর্যন্ত) বারবার সমস্ত শরীর মুছে দিতে হবে। শিশুকে পছন্দমত খেতে দিনঃ জ্বর হলে শিশুরা খেতে চায় না৷ যদি শিশু জ্বরের সময় খেতে না চায়, তাকে খাবার জন্য বেশি জোরাজুরি করবেন না৷ যদি আপনার শিশু নির্দিষ্ট কোন খাবার খেতে চায়, তাকে সেই খাবার খেতে দেবেন। তবে প্রচুর তরল খাবার, স্যুপ আর পুষ্টিকর খাবারের প্রতি মনযোগ দিন। মনে রাখতে হবে শিশুদের ক্ষেত্রে ভাল শিশু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না।
Dr. Shahabuddin Mahmud, Assistant Professor, MBBS, MD, Paediatrics/Child Specialist