শিশুদের ক্যান্সারের কয়েকটি লক্ষণ, যা আপনি অবহেলা করছেন!
আমাদের সন্তানদের কোনও রোগ বা উপসর্গকে অবহেলা করা উচিত না। বিশেষতঃ যদি সেগুলো ক্যান্সারের সুপ্ত লক্ষণ হয় প্রথমে ধরা পড়লে শিশুটির জীবন রক্ষা পেতে পারে। তবে এজন্য আপনাকে জানতে হবে মরণব্যাধি ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলো কি। এখানে শিশুদের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেওয়া হল, যেগুলো অবহেলা করা উচিত নয় :
নাক থেকে ঘন ঘন রক্তপাত : শিশুদের নাকের সম্মুখভাগের সুক্ষ্ম রক্তনালিকা থাকার কারণে নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে আসে। কিন্তু যদি কোনও শিশুর মাসে চার পাঁচ বার ঘন ঘন নাক থেকে রক্তপাত হয়, তাহলে তা ক্যান্সারের বিপদচিহ্ন হতে পারে। সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মতে, স্থায়ীভাবে ঘন ঘন নাসাভঙ্গ অ্যাকিউট লিম্ফব্লাস্টিক লিউক্যামিয়ার (এ এল এল) লক্ষণ যা শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হয়।
ক্ষত না সারা : বাচ্চারা সদা সক্রিয় থাকে যার ফলে খেলাধুলা বা কিছু উদ্ভট কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় কেটে ছড়ে যায়। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে এই ক্ষতগুলো তাড়াতাড়ি না শুকিয়ে প্রলম্বিত হচ্ছে কি না। এই ক্ষত শরীরের যে কোনও জায়গায় হতে পারে যেমন, চামড়া, লিঙ্গ, যোনি অথবা মুখের ভেতর। এগুলো অবজ্ঞা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করানো উচিত।
লিম্ফ নোড শরীরের উপরিভাগে : যেমন ঘাড়ের পেশীগুলিতে, কুঁচকিতে, বগলে বা কলার বোনের উপরে সহজেই দেখতে পাওয়া যায় আর চামড়ার নিচে এক দলা মাংসপিন্ডের মতো অনুভব করা যায়।
অভাবিত ভাবে ওজন কমে যাওয়া : কোনও রকম চেষ্টা না করেও বা খাদ্য ও ব্যায়ামে কোনও পরিবর্তন না করেই যদি কোনও শিশুর ওজন হ্রাস পেতে থাকে, তাহলে বাবা-মাকে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা উচিত। যথেষ্ট ক্যালোরি গ্রহণ না করলে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্যালোরি পোড়ালে, তবেই কোনও শিশুর ওজন কমতে পারে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, যখন খুব কম সময়ের মধ্যে তাদের ওজন দ্রুত কমতে থাকে, এটি একটি অন্তর্নিহিত অসুস্থতা, যা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
লঘু শ্বাস প্রশ্বাস : ছোট ছোট নিঃশ্বাস বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা হ’ল শিশুদের মধ্যে একটি গুরুতর লক্ষণ যাতে অবিলম্বে ডাক্তারের চেম্বারে বা হাসপাতালের ইমারজেন্সীতে নিয়ে যাওয়া উচিত।
অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর একটি হতে পারে যা আপনার একদমই উপেক্ষা করা উচিত নয়। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের মতে, শ্বাসকষ্টের সমস্যাটি শৈশবে লিউকেমিয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে, যা সব রকম শৈশব ক্যান্সারের প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ।
ব্যাখ্যাতীত জ্বর : কে কে উইমেন্স অ্যান্ড চিলড্রেন হাসপাতালের (কে কে এইচ) মতে, যদি আপনার বাচ্চার ক্রমাগত অকারণে জ্বর আসে তাহলে তা ক্যান্সারের, বা সুনির্দিষ্টভাবে লিউকেমিয়ার লক্ষণ হতে পারে। লিউকেমিয়া হল শিশুদের মধ্যে সর্বাধিক দেখা যায় এমন একটি ক্যান্সার যাতে শিশুটির মজ্জা প্রয়োজনের চাইতে বেশী অপরিণত শ্বেত রক্ত কোষ উৎপাদন করতে থাকে।
মাংসপিন্ড : ক্যান্সারের আরেকটি লক্ষণ হল সাধারণত পেটের যে কোনও জায়গায় একটি মাংসপিন্ডের উপস্থিতি। কে কে উইমেনস অ্যান্ড চিলড্রেনস হাসপাতালের বক্তব্য, উদরের কোনও স্থান ফুলে যাওয়া উইল্মস টিউমার বা কিডনির ক্যান্সারের ইঙ্গিতবাহী হতে পারে যা খুব অল্প বয়স্ক শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
স্বভাবে অভাবনীয় পরিবর্তন : আপনার বাচ্চার ব্যবহার অস্বাভাবিক মনে হলে তার প্রতি মনোযোগ দিন কারণ এটি একটি লক্ষণ হতে পারে যে কিছু একটা ঠিক নেই। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের চিলড্রেন মেডিকেল ইনস্টিটিউটের মতে, স্বভাবে এবং স্কুলে দক্ষতায় পরিবর্তন ক্যান্সারের চিহ্ন হতে পারে।
মাথাব্যথা : ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার সিঙ্গাপুর (এনসিসিএস) এর মতে, স্থায়ী মাথাব্যথাও মস্তিষ্কে টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। যেহেতু মাথার খুলির হাড় প্রসারিত হতে পারে না, সেহেতু মস্তিষ্কে কোনও টিউমার হলে যে চাপ পড়ে তার জন্য মাথা ব্যথা হতে পারে।
বমি করা : একটি শিশু বিভিন্ন কারণে বমি করতে পারে, যেমন খাদ্য বিষক্রিয়া, তীব্র সর্দিকাশি বা পেটের অসুখ। এনসিসিএস এর মতে, মস্তিষ্ক প্রভাবিত হয় এমন ক্যান্সারের কারণে বমিভাব হতে পারে। যদি আপনার শিশুর ঘন ঘন বমি ভাব হয় আর খাবার বা জল খেতে সমস্যা হয়, তবে এটি সাধারণ পেটের অসুখের চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে এবং অবিলম্বে তা ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত।
চোখে দেখতে অসুবিধা : এনসিসিএস এর মতে, অস্পষ্ট দেখা, দুটো করে দেখা বা দেখতে না পাওয়ার মতো দৃষ্টিজনিত অসুবিধে মস্তিষ্কে টিউমারের সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে। যদি আপনার শিশুর দৃষ্টিশক্তিতে কোনও রকম সমস্যা হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে এটি ক্যান্সারের সম্ভাবনা কি না সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
ফিট বা অচেতন হওয়া : পার্কওয়ে ক্যান্সার সেন্টারের মতে, শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর তালিকায় রয়েছে খুব বেশী জ্বর না থাকা সত্বেও যখন কোন শিশু ফিট বা অচেতন হয়ে পড়ে। এটিও ব্রেন টিউমারের উপসর্গ হতে পারে। বেশি জ্বরে, অক্সিজেনেরে অভাবে, মাথায় চোট পেলে বা অন্যান্য অসুস্থতার কারণেও শিশুরা ফিট বা অচেতন হতে পারে, তাই ডাক্তারের মতামত নিয়ে সঠিক কারণটি জেনে নেওয়াই হচ্ছে সর্বোত্তম উপায়।
হাড়ে ব্যথা : ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, সিঙ্গাপুর হাড়ে ব্যাথা, এমনকি খোঁড়ানোকেও শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর তালিকাভুক্ত করেছে। আরও সঠিকভাবে বললে, এটি নিউরোব্লাস্টোমা নামে এক ধরণের ক্যান্সারীয় টিউমার এর লক্ষণ যা সাধারণত অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডে হয়ে থাকে। এটি অত্যন্ত মারাত্মক কঠিন টিউমার যা ফুলে গিয়ে প্রচন্ড ব্যাথা দেয় এবং এর উপসর্গগুলো টিউমারের অবস্থানের উপর নির্ভর করে আর পরিবর্তিত হতে পারে।
দুর্বলতা : হেল্থ প্রোমোশন বোর্ড উল্লেখ করেছে যে ক্রমাগত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে ক্যান্সার সমূহের মধ্যে লিম্ফোমা নামক ক্যান্সারের একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি নির্ণয় করার জন্য যেসব পরীক্ষা প্রয়োজনীয় তা হল : শারীরিক পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, ফুলে যাওয়া স্থানের বায়োপসি, অস্থি মজ্জার কার্যকারিতা, এক্স-রে, সিটি বা এমআরআই স্ক্যান
রক্তক্ষরণ : উইল্মস টিউমার একজাতীয় ক্যান্সার যা কিডনিতে হয় এবং এর ফলে শিশুদের প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসে। কে কে এইচ এর মতে, এই বিরল গোত্রের ক্যান্সার প্রধানত শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং এটি সাধারণত একটি কিডনিতে দেখা যায় যদিও কদাচিৎ দুটি কিডনিও আক্রান্ত হয়।
সূত্র : theindusparent