শিশু ও বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির জন্য ১২টি খাবারের তালিকা
শিশুদের ওজন বৃদ্ধি বেশিরভাগ ভারতীয় মায়ের কাছে প্রাথমিক উদ্বেগের বিষয় হলেও, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনার লক্ষ্য একটি সুষম খাবার নিশ্চিত করা, যা আপনার সন্তানের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি সরবরাহ করে । এটি শিশুকে সুস্থ ওজন বৃদ্ধি করতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাহায্য করবে । আপনার সন্তানকে দিনে তিনবার সুস্থ, সুষম খাবার এবং মাঝে মাঝে স্বাস্থ্য-বান্ধব জলখাবার দিন । একটি বৈচিত্রময় খাবার অভ্যাসও নিশ্চিত করে যে, তারা যথেষ্ট পুষ্টি, নানা ভিটামিন এবং সমস্থ খনিজ পদার্থ পায়, যেগুলি তাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরের সার্বিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ।
কীভাবে শিশুদের ওজন বাড়ানো যায়?
কিছু বাচ্চার ওজন কিছুতেই বাড়তে চায় না, এবং এর পিছনে বহু কারণ থাকতে পারে, যেমন- বাবা-মায়ের জন্মগত গঠনপ্রকৃতি । । যদি বাবা এবং মা উভয়েই রোগা হন, তাহলে শিশুও একই রকম শারীরিক বৈশিষ্ট্য পেতে পারে । মেটাবলিজম বা বিপাকপ্রক্রিয়াও শিশুর ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । আপনার শিশু যদি সক্রিয় এবং স্বাস্থ্যবান হয়, ওজনের মাইলফলক ঠিকই ছুঁয়ে ফেলবে । আপনার শিশুর জন্য একটি খাবার ডায়রি রাখতে পারেন, যেখানে আপনি পছন্দ, অপছন্দ, বেছে নেওয়া খাবার ও অ্যালার্জিগুলি নোট করতে পারেন, এবং মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য খাবার সময়ে মজা ও ঝামেলা-মুক্ত করতে সাপ্তাহিক মেনু তৈরি করুন । আপনার শিশুরজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য এখানে কিছু টিপস রইল ।
• আপনারসন্তানযেনযথেষ্টব্যায়ামএবংশারীরিকক্রিয়াকলাপকরে, যাতেতারক্ষিদেস্বাস্থ্যকরহয়, তানিশ্চিতকরুন।
• সুস্থ, সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার ব্যাপারে মনোযোগ দিন এবং ওজন বৃদ্ধির উপর বেশি মনোনিবেশ করবেন না ।
• শিশু যখন বড় হয়, তাদের সাঁতার, সাইক্লিং প্রভৃতি খেলাধূলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন । এটি আপনার শিশুর ক্ষিদের উপর কাজ করতে সাহায্য করবে এবং তার শারীরিক বিকাশও ঘটাবে ।
আপনার শিশুর স্বাস্থ্যকর খাওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জীবনের প্রাথমিক বছরগুলিতে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ । আপনি আপনার শিশুকে তার প্রাথমিক পর্যায়ে যখন স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস করান, তখন এটা সম্ভাবনা থাকে যে, সেটি তার সারাজীবনের সঙ্গী হবে । এটি তাদের বড় হওয়ার পর খাবার সময়ের মারামারি ও বিরক্তিকর মুখ করাও নিশ্চিতভাবে কমিয়ে দেয় । এর ফলে বাইরে খেতে গেলে বা কোথাও বেড়াতে গেলে আপনার ক্ষেত্রে সহজ হবে । সে জাঙ্কফুড না ফল ও স্যালাড, কিসের প্রতি আসক্ত হবে, এই পর্যায়ে আপনিই তা নির্ধারণ করবেন । স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি, আপনার বাচ্চা যেন সক্রিয় থাকে এবং খেলা ও সূর্যের আলোয় বেরুনোর মতো যথেষ্ট সময় পায়, তা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে । এটা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে এবং ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন কিছুটা কোন করে ।
বয়স অনুযায়ী আপনার বাচ্চাদের ওজনের ভাগ
শিশুর বয়স ভারতীয় শিশুদের গড় বৃদ্ধির তালিকা । শিশুর ওজনের তালিকা
ছেলে (কেজি) মেয়ে (কেজি) ছেলে (পাউন্ড) মেয়ে (পাউন্ড)
জন্মের সময় ৩.৩ ৩.২ ৭.৩ ৭.১
৩ মাস ৬.০ ৫.৪ ১৩.২ ১১.৯
৬ মাস ৭.৮ ৭.২ ১৭.২ ১৫.৯
৯ মাস ৯.২ ৮.৬ ২০.৩ ১৯.০
১ বছর ১০.২ ৯.৫ ২২.৫ ২০.৯
২ বছর ১২.৩ ১১.৮ ২৭.১ ২৬.০
৩ বছর ১৪.৬ ১৪.১ ৩২.২ ৩১.১
৪ বছর ১৬.৭ ১৬.০ ৩৬.৮ ৩৫.৩
৫ বছর ১৮.৭ ১৭.৭ ৪১.২ ৩৯.০
৬ বছর ২০.৭ ১৯.৫ ৪৫.৬ ৪৩.০
৭ বছর ২২.৯ ২১.৮ ৫০.৫ ৪৮.১
৮ বছর ২৫.৩ ২৪.৮ ৫৫.৮ ৫৪.৭
৯ বছর ২৮.১ ২৮.৫ ৬১.৯ ৬২.৮
১০ বছর ৩১.৪ ৩২.৫ ৬৯.২ ৭১.১
১১ বছর ৩২.২ ৩৩.৭ ৭১.০ ৭৪.৩
ওজন বৃদ্ধির ধাঁচ বিভিন্ন শিশুর ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়, এবং তুলনা করার কোন নির্দিষ্ট উপায় নেই । ভারতীয় শিশুদের গড় ওজনের ভিত্তিতে তৈরি করা ওজনের তালিকা ডাক্তাররা ব্যবহার করেন । আপনার শিশুর এই ধাঁচ অনুসরন করা উচিত এবং তালিকায় নির্দিষ্ট করা পরিসীমার মধ্যেই থাকা উচিত । বাবা-মায়েদের এই তালিকাটিকে একটি সাধারণ নির্দেশিকা হিসাবে নিতে বলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । মনে রাখবেন, আপনার শিশুর বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শই সর্বোত্তম ।
১) শিশু- ০ থেকে ১৩ মাস
আপনার শিশু তার শৈশবের প্রথম কয়েক মাসে দ্রুত বৃদ্ধি পায় । প্রতি মাসেই আপনার শিশু ওজন অর্জন করে এবং লম্বায় বৃদ্ধি পায় । আপনাকে খুব ঘন ঘন জামাকাপড় কেনাকাটি করতে হবে । আপনার শিশু যেন যথেষ্ট ঘুম এবং ভালো খাবার পায়, সময়সূচী অনুযায়ী টিকা দেওয়া হয় এবং নিয়মিত চেক-আপ করা হয়, তা নিশ্চিত করুন । প্রথম ৬ মাসে শিশুকে বিশেষভাবে বুকের দুধ এবং পরে বুকের দুধের সঙ্গে অন্যান্য তরল অথবা হালকা কঠিন খাবার খাওয়াতে পরামর্শ দেওয়া হয় । ৪-৬ মাস বয়সে শিশুর ওজন তার জন্মের ওজনের দ্বিগুণ হওয়া উচিত ।
২) সদ্য হাঁটতে শেখা শিশু- ১২ থেকে ৩৬ মাস
এটি আপনার শিশুর জীবনের একটি সক্রিয় ভাগ, এবং এই বয়সে, মানসিক ও সামাজিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি ঘটে । আপনার শিশু জগৎতাকে খুঁজে বুঝতে শুরু করবে এবং ডে-কেয়ারে অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে অথবা আশেপাশে ঘুরতে নিয়ে গেলে তারা উন্মুক্ত হবে । প্রথম বছরে যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং খাবারের অভ্যাস গড়ে তোলা হয়েছে, তা এই সময় আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে । বিভিন্ন কারণ, মানসিক অবস্থা, বাবা-মায়ের থেকে বিচ্ছেদের উদ্বেগ, নতুন পরিবেশ এবং খাবারের অভ্যাস পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে ওজনের হ্রাস-বৃদ্ধির স্কেল কাজ করে ।
৩) প্রাক-স্কুল পর্যায়ের শিশু- ৪ থেকে ৬ বছর
এই বয়সে শিশুর বিকাশ তার সারাজীবন স্থায়ী হয় । প্রি-স্কুলার শিশুদের ব্যস্ত সময়সূচী এবং সক্রিয় জীবনধারায় অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং নানারকম পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের প্রয়োজন হয় । প্রতি বছর গড়ে তাদের প্রায় ২ কিলোগ্রাম করে ওজন বৃদ্ধি হয় ।
৪) শিশু – ৭ থেকে ১২ বছর
যেহেতু তারা প্রাক-স্কুলার পর্যায় থেকে প্রাক-কিশোর বয়সের দিকে যেতে শুরু করে, শিশুদের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি এবং ওজন বৃদ্ধি প্রতিবছর ৩ কিলোগ্রামে স্থিতিশীল হয় । এই বয়সে, তারা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো একই খাবার খায় ।
সদ্যজাত এবং সদ্য হাঁটতে শেখা বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধির জন্য শ্রেষ্ঠ খাবার
সদ্যজাত এবং সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুদের জন্য খাবারের পরিকল্পনা করার সময়, বাবা-মায়ের শিশুদের জন্য পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রাখা উচিত । শিশুদের সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত, যেটা সুষম এবং স্বাস্থ্যকর ক্যালোরি সরবরাহ করবে । বাবা-মায়ের প্রয়োজন, খাবার সময়টাকে আকর্ষণীয় করে তোলা, যাতে বাচ্চারা নিজে থেকেই এটার প্রত্যাশা করে এবং খাবার ব্যাপারে যেন উদাসীন না হয় ।
কিছু বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের ওজন বাড়ানোর জন্য চিনিভর্তি মিষ্টি খাওয়ান; যদিও, এটি অস্বাস্থ্যকর এবং আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলবে । আপনার শিশুর খাবারে যেন স্বাস্থ্যকর ক্যালোরি থাকে এবং খাবার যেন সুষম হয়, সেটা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ ।
এখানে সদ্যজাত এবং সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুদের ওজন বৃদ্ধির উপযোগী শ্রেষ্ঠ খাবারের তালিকা রইল, যেগুলি আপনি তাদের খাবারে যোগ করতে পারেনঃ
১) বুকের দুধ
শিশুকে তার প্রথম ৬ মাসে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় । এটি পুষ্টিকর, সহজপাচ্য, পুরোপুরি সুষম এবং স্বাস্থ্যকর সুপারফুড, যেটা সারাজীবনের জন্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে । এটা মা ও শিশুর মধ্যে থাকা বন্ধনকে পোষণ করে । যদি আপনার শিশু সক্রিয় হয়, দেখতে স্বাস্থ্যবান লাগে, অ্যালার্জিমুক্ত থাকে, দিনে ৪-৬ বার মলত্যাগ করে এবং ৬-৮টি ডাইপার ভিজিয়ে ফেলে, সেটা ইঙ্গিত দেয় যে, সে যথেষ্ট বুকের দুধ পাচ্ছে । আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনার শিশুর বৃদ্ধি স্বাস্থ্যকর ।৬ মাস বয়সের পর, আপনি বাচ্চার খাবারের তালিকায় বুকের দুধের সঙ্গে তরল এবং হালকা কঠিন খাবার রাখা শুরু করতে পারেন । আপনি সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুর স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় কি কি খাবার যোগ করতে পারেন, তা বলা হলঃ
২) কলা
এই সুপারফ্রুট পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ এবং কার্বোহাইড্রেটে পূর্ণ । এটি ক্যালোরিতেও পূর্ণ এবং শিশুদের ওজন বৃদ্ধির নিখুঁত উৎস ।কলা বেটে অথবা স্ম্যুথি বা শ্যেকে পরিবেশন করুন । ভাপানো কেরালা কলা বেটে শিশুদের খাওয়ালে খুব ভালো ফল দেয় । ভ্রমণের সময় একটি সুবিধাজনক জলখাবার হিসাবে এটি আপনার শিশুর ব্যাগের একটি অংশ হিসাবে থাকতে পারে ।
৩) মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু খুব সহজে সিদ্ধ হয়ে যায় এবং সহজে বাটা যায় । এগুলি সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য এবং স্বাস্থ্যকর । এগুলি ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, কপার, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিযে ভরপুর- শিশুদের ওজন বৃদ্ধির জন্য এগুলি শ্রেষ্ঠ ভিটামিন ।মিষ্টি আলুতে ডায়েটের উপযুক্ত ফাইবার আছে যথেষ্ট পরিমাণে । আপনি এই সবজি দিয়ে সুস্বাদু পিউরি এবং স্যুপ তৈরি করতে পারেন ।
৪) ডাল বা কলাই
ডাল বা কলাই পুষ্টিগুণে ভরপুর । এগুলি প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, ফাইবার এবং পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ । ৬ মাস পর, আপনি ডালের স্যুপ বা ডাল পানির আকারে আপনার শিশুর সঙ্গে পরিচয় করাতে পারেন, যেটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সবথেকে জনপ্রিয় ওজনবৃদ্ধির পানীয় ।
আপনি ভালোভাবে বাটা খিচুড়িও খাওয়াতে পারেন । মুগডাল খুব সহজপাচ্য এবং শিশুদের জন্য একটি ভালো বিকল্প । পুষ্টিকর এবং ফাইবার-পূর্ণ খাবারের জন্য চালের সঙ্গে অথবা সবজি দিয়ে ডাল রান্না করুন ।
৭-৯ মাসের আশেপাশের সময় আপনার শিশুকে কিছু নতুন স্বাদ এবং গঠনের সঙ্গে পরিচয় করানোর সঠিক সময় । হালকা-কঠিন, কুচিকুচি এবং বাটা খাবার খাওয়ানো শুরু করুন । বাজারে পাওয়া যায় এমন প্রস্তুত মিশ্রণের মতো বাড়িতে তৈরি পরজ অথবা সিরিয়ালস দিতে শুরু করুন । বাড়িতে তৈরি সিরিয়ালস তৈরির জন্য; আপনি ডাল, মিলেট, কলাই, চাল ধুয়ে নিন এবং রোদে শুকিয়ে নিন, এগুলিকে হালকা রোস্ট করুন এবং মিক্সারে পিষে নিন । চটজলদি খাবারের বিকল্প হিসাবে নানারকম গুঁড়ো প্রস্তুত করুন এবং লেবেলযুক্ত বোতলে ভরে রাখুন, যদি আপনি একজন কম ওজনযুক্ত শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করেন । যখন যেমন প্রয়োজন, ব্যবহার করুন ।
৫) রাগি
ফিঙ্গার মিলেট অথবা ‘নাচানি’ নামেও পরিচিত, এই সুপারফুড শিশুর বিকাশ ও ওজন বৃদ্ধির জন্য একেবারে উপযুক্ত । এটি ডায়েট-উপযুক্ত ফাইবার, ক্যালসিয়াম, লোহা, প্রোটিন এবং নানান অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল বা খনিজতে ভরপুর ।
এটি সহজপাচ্য এবং ইডলি, ডোসা, পরজ, মল্ট বা সিরিয়ালস রূপে শিশুদের দেওয়া যেতে পারে এবং সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুদের জন্য কেক, কুকিজ এবং পুডিং আকারে দেওয়া যাবে ।
৬) ঘি
ঘি বা পরিশোধিত মাখনে উচ্চ পুষ্টিগুণ আছে । আপনার বাচ্চার ৮ম মাসের আশেপাশের সময়ে এটির সঙ্গে পরিচয় করান । কয়েক ফোঁটা ঘি পরজে যোগ করুন অথবা বাটা খিচুড়ি অথবা ডালের স্যুপের উপর ছড়িয়ে দিন ।
আপনি যদি ভেজাল নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে বাড়িতে দুধ অথবা মালাই/ক্রিম থেকে তৈরি ঘি সবথেকে ভালো বিকল্প । শিশুদের স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি খুব ভালো খাবার । ঘি-এর ব্যবহার বিষয়ে সীমাবদ্ধ বা পরিমিত হওয়ার কথা মনে রাখবেন, কারণ এটি অতিরিক্ত খেলে আপয়ানার শিশুর পেত খারাপ করতে পারে ।যখন আপনার শিশু ৮-১০ মাস বয়সে পৌঁছায়, আপনি ওজন বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত খাবারগুলি তাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনঃ
৭) দুগ্ধজাত পদার্থ
আপনার বাচ্চার খাবারে দইয়ের মতো দুগ্ধজাত পণ্য যোগ করা উপযুক্ত । শিশুদের স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির জন্য দইয়ে ফ্যাট এবং পুষ্টিকর ক্যালোরি থাকে ।
এছাড়াও দই হজম শক্তিকে উন্নত করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় সাহায্য করে । বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধির জন্য ফলের টুকরো যোগ করে, দইয়ের স্মুথি অথবা শ্যেক তৈরি করে এটাকে আকর্ষণীয় করা যেতে পারে । প্যাক করা দুধ, মাখন, চীজ বা পনির ইত্যাদি ১২ মাস বয়সের পর বা শিশুবিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়ার পরই চালু করা উচিত । মাখন, চীজ বা পনির সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুদের ক্ষেত্রে খাবারকে আকর্ষণীয় করে এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় চর্বিযুক্ত পদার্থ যোগ করে । বাচ্চাদের জন্য আকর্ষণীয় খাবার তৈরি করতে, মাখনের একটি মন্ড অথবা চীজ বা পনিরের একটি টুকরো যোগ করুন ।
১ বছর বয়সের পর বাচ্চাদের গরুর দুধের সঙ্গে পরিচয় করানো উচিত । আপনার শিশু তার কৈশোরে পৌঁছানো পর্যন্ত, নিশ্চিত করুন যে, তার খাবারে যেন দিনে দুই গ্লাস দুধ থাকে । কিছু শুকনো ফল অথবা বাজারে পাওয়া যাওয়া হেলথ মিক্স যোগ করে দুধকে আকর্ষণীয় কোরতে পারেন । দুগ্ধজাত পণ্য খুব বেশি খাওয়া বা খুব কম খাওয়াকে অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ, খুব বেশি বা খুব কম পরিমান সমস্যা তৈরি করতে পারে । যদি আপনার শিশুর ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স (দুগ্ধজাত পদার্থ সহ্য করতে না পারে) অথবা দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পর গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভোগে, দয়া করে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।
৮) ডিম
১২ মাস পূর্ণ হওয়ার পরেই শুধুমাত্র, শিশুদের প্রোটিনে ভরপুর এই উৎসের সঙ্গে পরিচয় করানো উচিত । ডিম সাচ্যুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজতে পূর্ণ; আপনি একে অমলেট, ভুজিয়া, সিদ্ধ, ডিম-ভাত অথবা ফ্রেঞ্চ টোস্ট হিসাবে পরিবেশন করতে পারেন ।
অ্যালার্জির পরীক্ষা এবং ভালো মানের জন্য যত্ন নেওয়া উচিত, স্বাস্থ্যগত সমস্যা এড়াতে রোগ-মুক্ত কৃষিজ ডিম নিতে হবে । যেসব পরিবার আমিষ খাবার বেশি পছন্দ করে, তাঁরা শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে মাংস বা মাছ খাওয়ানো শুরু করতে পারেন ।
৯) শুকনো ফল এবং বীজ
আমন্ড, পেস্তা, আখরোট, শুকনো খেজুর (এপ্রিকট), কাজু, কিশমিশ এবং তিন, কুমড়ো, মসিনা প্রভৃতি বীজ বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধির জন্য শ্রেষ্ঠ ভিটামিনের জোগান দেয় । নানা আকর্ষণীয় উপায়ে এগুলিকে খাবারে যোগ করা যায় । এগুলিকে গুঁড়ো করে দুধে দিন অথবা সিরিয়ালসের উপর ছড়িয়ে দিন, অথবা সহজে খাওয়ার জন্য তাদের এক মুঠো করে বাদাম ও বীজ হাতে দিন ।
পিনাট বাটার অথবা আমন্ড-দুধ স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির জন্য সুস্বাদু বিকল্প । আপনি ‘এনারজি বার’ তৈরি কোরতে পারেন অথবা রুটি বা পরোটা তৈরির সময় এগুলিকে আটার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন । দুধের সঙ্গে খেজুরের সিরাপ যোগ করলে, বাচ্চাদের জন্য লোহা-পূর্ণ খাবার বিকল্প হবে । এটা প্রায়ই ওজন বৃদ্ধির পানীয় হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।
১০) অ্যাভাকাডো
এগুলি ভিটামিন বি৬, ই, সি, কে, ফোলেট তামা, ডায়েট-উপযুক্ত ফাইবার, প্যান্টোটেনিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস, এবং প্রচুর ফ্যাটযুক্ত । কেটে, ছাড়িয়ে বা বীজ বের করে পরিবেশন করা হয়, অ্যাভাকাডো কোন খাবারে একটি অপ্রতিরোধ্য সংযোজন । এগুলিকে মিল্ক-শ্যেকেও যোগ করা যেতে পারে ।
১১) মুরগির মাংস
সহজপাচ্য প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস । সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী, এটি শিশুকে পেশির ভর তৈরি করতে সাহায্য করে এবং এইভাবে স্বাস্থ্যকর ওজন অর্জন করা যায় ।মুরগির মাংস একটি বহুমুখী খাবারের বিকল্প এবং যেকোনো রূপে পরিবেশ করা যায়- তাজা স্যালাড থেকে গাঢ় ভারতীয় কারি, অথবা মনমুগ্ধকর কাবাব ।
১২) গ্রীষ্মকালীন ফল এবং সবজি
প্রাকৃতিক শর্করা, অপরিহার্য ভিটামিন এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গঠনকারী খনিজতে ভরপুর; গ্রীষ্মকালীন ফল ও সবজিগুলি প্রত্যেক শিশুর খাদ্যতালিকায় থাকা অপরিহার্য । এতে পেঁপে, আম এবং আনারস অন্তর্ভুক্ত ।সিদ্ধ সবজিকে মাখনে উল্টেপাল্টে নিয়ে অথবা রঙিন ফলের স্যালাডের সঙ্গে নিয়ে আপনার শিশুকে জলখাবারে দিন ।
শিশুদের ওজন বাড়ানোর জন্য খাদ্যতালিকা
৯ মাস বয়সী শিশুর জন্য নমুনা খাদ্যতালিকা (নিরামিষাশী)
১ম দিন ২য় দিন ৩য় দিন ৪র্থ দিন ৫ম দিন ৬ষ্ঠ দিন ৭ম দিন
সকাল ৮টা বুকের বা গুঁড়ো দুধ বুকের বা গুঁড়ো দুধ বুকের বা গুঁড়ো দুধ বুকের বা গুঁড়ো দুধ বুকের বা গুঁড়ো দুধ বুকের বা গুঁড়ো দুধ বুকের বা গুঁড়ো দুধ
সকাল ৯:৩০
ব্রেকফাস্ট বাড়িতে তৈরি ব্রাউন রাইস সিরিয়াল সুজির পায়েস রাগির পরজ গমের সিরিয়াল ওটের সিরিয়াল কলার প্যানকেক বার্লির সিরিয়াল
সকাল ১১:০০
সকালের স্ন্যাক সবেদা/কলার স্মুথি ব্রেড স্টিক পনিরের টুকরো ফলের ইয়োগার্ট যেকোনো ফল ব্রেড স্টিক যেকোনো ফল
সকাল ১১:৩০ ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময়
দুপুর ১টা
ল্যাঞ্চ গাজর ও আলুরর বাটা খিচুড়ি মুগ ডাল ও ভাত উত্তপম সবজি-ভাত শস্যদানার খিচুড়ি সিদ্ধ ডোসা কুমড়োর খিচুড়ি
দুপুর ২টো ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময়
বিকাল ৪টে
সন্ধ্যের স্ন্যাক বাড়িতে তৈরি কুকিজ আপেল কলা ব্রেড স্টিক গাজর/টমেটোর স্যুপ পনিরের টুকরো মিষ্টি আলু সিদ্ধ
বিকাল ৫টা খেলার সময় খেলার সময় খেলার সময় খেলার সময় খেলার সময় খেলার সময় খেলার সময়
সন্ধ্যে ৭টা নারকেল কারির সঙ্গে রাগির ডোসা রাভা ইডলি ডালে ভেজানো চাপাটি আলুর খিচুড়ি প্লেন সেভাল উত্তপম খিচুড়ি
রাত ৮টা ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময় ঘুমের সময়
নোট মধু, গরুর দিধ, পিনাট, ডিমের সাদা অংশ, চিনি এবং লবন আপনার শিশুর বয়স ১ বছর বয়সের আগে খাওয়াবেন না
সুপারিশ করা খাবারগুলির মাঝে শিশুর চাহিদা অনুযায়ী বুকের দুধ খাওয়াবেন । বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেবেন না, কারণ এটি শিশুর পুষ্টির প্রধান উৎস ।
খাদ্যতালিকা বা ডায়েট চার্ট সাপ্তাহিক মেনু অথবা খাবার পরিকল্পনার আকারে হতে পারে, যাতে বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি অন্তর্ভুক্ত থাকে । এগুলিকে রেফ্রিজারেটরের উপর আকর্ষণীয় খাবারের ছবির সঙ্গে লাগানো যেতে পারে । মেনু তৈরিকে উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলতে এবং খাবার সময়কে মজার বানাতে নিশ্চিত করেন যে, বাবা-মা ও শিশু উভয়েই যেন এতে অংশগ্রহণ করে । প্রতি সপ্তাহে, আপনি একটি নতুন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করাতে পারেন এবংআপনার সন্তানের জন্য খাবারের বিকল্পগুলি বাড়াতে পারেন ।
খাদ্যতালিকা বয়স অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় । নিশ্চিত করুন যে, সুষম খাবার তৈরি করতে আপনি ফল, শাকসবজি, দুগ্ধজাত পদার্থ, স্বেতসার বা স্টার্চ এবং প্রোটিন যোগ করেছেন ।
কীভাবে শিশুরা স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে পারে
আপনার বাচ্চারা আপনার পদচিহ্নকেই অনুসরণ করবে । অতএব, বাচ্চার স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে, আপনাকেই তার উদাহরণ হতে হবে । উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, আপনি যদি আপনি প্যাকেট করা জাঙ্কফুড খেয়ে বেঁচে থাকেন, আপনি আপনার শিশুকে একই কাজ করা থেকে আটকাতে পারবেন না ।
স্বাস্থ্যকর খাওয়ার টিপস
• খাবার সময়কে আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক করে তুলতে, রঙিন প্লেট, বাসনপত্র, সঙ্গীত, বাচ্চাদের পার্টি ইত্যাদি ব্যবহার করুন । আপনি মাঝে মাঝে বাচ্চাকে পার্কে নিয়ে গিয়ে পিকনিকের মতো খাওয়াতে পারেন ।
• খাওয়ানোর সময় তাড়াহুড়ো করবেন না । ধৈর্য রাখুন এবং, যদি দরকার পরে, পরিবারের অন্য সদস্যকে বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য সময় কাটাতে দিন । এটা তাদের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং আপনার থেকে কিছুটা চাপ কমবে, যাতে আপনি অন্য কাজ করতে পারেন ।
• অনেক সময়, বাচ্চারা খেতে চায় না; রেগে যাবেন না বা জোর করে খাওয়াবেন না । ধৈর্যই হল চাবিকাঠি; আপনি অন্য কোন দিন বা অন্য কোন উপায়ে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন ।
• বাচ্চাদের তৈরি হতে পারা অ্যালার্জির উপর নজর রাখুন । বাদাম, গ্লুটেন, মাছ বা ল্যাক্টোজে অসহিষ্ণু হতে পারে ।
• খাবারের সময় নির্দিষ্ট করুন, যাতে শিশুর শারীরিক চক্র সেই অনুসারেই নির্দিষ্ট হবে । খাবার সময়গুলির মাঝে খাওয়াবেন না ।
• অত্যাধিক খওয়া এমনকি কম খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত ।
• বাচ্চাদের জন্য বাড়িতে তৈরি খাবার প্রদান করুন; ভ্রমণকালে, জাঙ্কফুড বা অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে ফলের মতো স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলিই বাছুন ।
• শিশুরা বড় হওয়ার সাথে সাথে, খাবারের বিকল্পগুলি বেছে নেওয়ার জন্য এবং রান্নায় আপনাকে সাহায্য করার জন্য তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অন্তর্ভুক্ত করুন । যদি খাবার বাছাই করতে এবং তৈরি করতে সাহায্য করলে, তারা খাওয়ার ব্যাপারটিকে আরও ভালোভাবে গ্রহণ করবে ।
• তাদের প্রিয় খাবারগুলির সঙ্গে সাপ্তাহিক অন্তরে নতুন নতুন খাবার যোগ করুন । নতুন কিছু চেষ্টা করার সময় তাদের প্রশংসা করুন ।
মনে রাখবেন যে, বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস বজায় রাখা, ওজনের দিকে লক্ষ্য রাখার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । যদি আপনার শিশু স্বাস্থ্যকর ও পূর্ণ খাবার খায়, তারা ঠিকই তাদের সঠিক সুস্থ ওজন অর্জন করবে । অত্যাধিক খাওয়া অথবা খুব কম খাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন, কারণ এটি শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে । উপরের টিপস ও খাবার গুলির চেষ্টা করার পরেও যদি আপনি আপনার শিশুর ওজন বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন । তিনি পরিস্থিতির মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনে শিশুদের জন্য ওজন বৃদ্ধির সম্পূরক নির্ধারণ করতে সক্ষম হবেন ।
CLTD: banglaparenting.firstcry