শিশুদের টুনা দিচ্ছেন-উপকারীতা এবং ঝুঁকিসমূহ

শারীরিক বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টুনা পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ।এটি প্রোটিন এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ এবং দেহকে হৃদ রোগ ও ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা প্রাদান করে,টুনা সম্পর্কিত মার্কারির প্রকাশ এ ব্যাপারে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ,তবে উপযুক্ত সঠিক বয়সানুযায়ী কম মার্কারিযুক্ত মাছ সীমিত পরিমাণে পরিবেশন করা নিরাপদ বলে মনে করা হয়।

শিশুদের টুনা মাছ দেওয়া কি নিরাপদ?

বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য মাছ খাওয়া প্রয়োজন।এক্ষেত্রে সবচেয়ে বৈধ উদ্বেগ হল মার্কারি দূষণ।কিন্তু আপনি যদি খুবই কম পরিমাণে বাচ্চাকে দেন যা তার বয়সের জন্য একদম সঠিক,তবে সেক্ষেত্রে টুনা মাছ তার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।আপনার বাচ্চাকে যদি ক্যানজাত টুনা দেওয়া যায় তবে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ করা যেতে পারে।

শিশুরা কখন টুনা মাছ খেতে পারে?

আপনার বাচ্চাকে কখন টুনা দেবেন সেই ব্যাপারে যখন সিদ্ধান্ত নেবেন,এটি থেকে হতে পারা অ্যালার্জিগুলি সম্পর্কে আপনার সতর্ক হওয়া উচিত।সমুদ্রজাত খাদ্য যেগুলি দেহে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে সেই ধরনের খাদ্যের মধ্যে যদিও টুনা পড়ে না,প্রতিটি মানব দেহ ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়।আপনার বাচ্চার থালায় যেকোনও খাবারের সাথে টুনাকে সাজিয়ে তোলার পূর্বে আপনার বাচ্চার ছয় মাসের সীমারেখাটিকে ছুঁয়ে ফেলা উচিত।এটির অল্প পরিমাণে পরিবেশন বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনও ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার কারণ হয়ে ওঠে, কি ওঠে না সেটি পরীক্ষা করে নিয়ে,আপনি অবশ্যই তাকে প্রায় ঘন ঘন টুনা খাওয়াতে পারেন।

টুনায় উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদানগুলি

টুনায় পুষ্টির ভাগ খুবই বেশি।এটি ভিটামিন-B3,ভিটামিন-B12,ভিটামিন-B6,ভিটামিন-B1,ভিটামিন-B2 এবং ভিটামিন-D এর মত বহু ভিটামিনের সমাহার।এছাড়াও এটি আবার ফসফরাস এবং সেলেনিয়ামে সমৃদ্ধ এবং পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও আয়োডিনের মত খনিজের চমৎকার উৎস।

শিশুদের জন্য টুনার স্বাস্থ্যকর উপকারীতাগুলি

ক্যানে সংরক্ষিত টুনা মাছ কি শিশুদের দেওয়া যেতে পারে?যদি সেই প্রসঙ্গই এসে থাকে,তবে বলা ভাল,ক্যানজাত হালকা টুনা মাছগুলি ছোট শিশুদের জন্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত!এর মধ্যস্থ ওমেগা-3 জয়েন্টের যন্ত্রণা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া হ্রাস করে,বাচ্চাদের স্নায়বিক বিকাশকে উন্নত করে এবং অ্যাস্থেমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহায়তা করে।এর প্রোটিন সমৃদ্ধ উপাদান পেশী গঠণ করে এবং ক্যালোরিযুক্ত উপাদানগুলির ভারসাম্য বজায় রাখে।উপভোগ করার জন্য এটি নিশ্চিতভাবে একটি শক্তিশালী সুপারখাদ্য!

বাচ্চাদের সাথে টুনার পরিচয় করানোর সময় যে পদক্ষেপগুলি নিতে হবে

শিশু খাদ্যের জন্য টুনা ব্যবহারের পূর্বে আপনার অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত এমন কিছু গুরুত্বপুর্ণ পদক্ষেপগুলি হলঃ

১. কেবল খুব ভাল ভাবে রান্না করা টুনা মাছই ব্যবহার করুন

ক্যানজাত টুনা মাছগুলিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির মত প্রবল ঝুঁকি থাকার কারণে সেগুলিকে সম্পূর্ণরূপে ভালভাবে রান্না করে নেওয়ার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন।বাচ্চার গলায় বিঁধতে পারে বা এর জন্য তার শ্বাসরোধ হয়ে যেতে পারে এমন ধরনের কোনও কাঁটা যাতে সেগুলির মধ্যে না থাকে সে ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই যন্তশীল হতে হবে।

২. এটি গ্রহণের পরিমাণ সীমিত করা উচিত

শিশুদের জন্য অপেক্ষাকৃতভাবে নিরাপদ এমন ধরনের টিন বা ক্যানজাত টুনা মাছগুলিকেই কেনার কথা মাথায় রাখবেন।খুব বেশি পরিমাণে টুনা মাছ পরিবেশন বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে,সুতরাং এক সপ্তাহে বাচ্চাকে টুনা মাছ কেবল দু‘বার খাওয়ানোর মধ্যেই সেটিকে সীমাবদ্ধ রাখুন।

৩. অ্যালার্জির উপর নজর জারি রাখুন

অ্যালার্জিগুলির উপর সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখুন যেগুলি বাচ্চাদের টুনা মাছ খাওয়ানোর ফলে হয়ে থাকতে পারে।টুনা মাছ খাওয়ানোর পর যদি আপনার বাচ্চার ঠোঁট অথবা মুখের উপর র‍্যাশ দেখা দেয় অথবা জিভ ফুলে ওঠে,তবে তাকে টুনা মাছ খাওয়ানো বন্ধ করে দেওয়া উচিত।আর যদি আপনার বাচ্চা বমি করতে থাকে,সাঁ সাঁ করে নিশ্বাস ফেলতে থাকে,পেট গণ্ডগোল করে কিম্বা ডায়রিয়া হয়ে থাকে,তবে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান কারণ এগুলি হল অ্যালার্জির লক্ষণ।

৪. টুনার সহিত রকমারি সবজির সংযোজন

এই নতুন খাদ্যটিকে শিশুদের কাছে মজাদার এবং পুষ্টিকর করে তোলার শ্রেষ্ঠ উপায় হল খাঁটি সবজির পিউরির সহিত টুনা মাছের একত্রিকরণ যা প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান আপনার সন্তানের পাওয়াকে নিশ্চিত করে।

বাচ্চাদের টুনা মাছ দেওয়ার সাথে সংযুক্ত ঝুঁকিগুলি

টুনা মাছগুলি মার্কারি দ্বারা দূষিত হতে পারে যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে,তাই যখন বাচ্চাদের মাছ খাওয়ানোর সময় আসে এটি একটি বড় ঝুঁকি অথবা উদ্বেগ হয়ে ওঠে।যদি তাদের অস্বাথ্যকর পরিমাণে টুনা খাওয়ানো হয় তবে এক্ষেত্রে বাচ্চার স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে,সুতরাং,সপ্তাহে কেবল একবার অথবা দু‘বারের মত ছোট ছোট পরিবেশনের উপর জোর দিন।

আপনার ছোট বাচ্চাকে টুনা মাছ দেওয়ার সময় যে সাবধানতাগুলি আপনার নেওয়া উচিত

নিরাপদ ভাবে টুনা মাছ গ্রহণ করাকে নিশ্চিত করার জন্য কিছু সাবধানতা গ্রহণ করতে হবে।

১. মাথায় রাখবেন যে এর মধ্যে কিন্তু মার্কারি বা পারদ থাকতে পারে

এমনকি ক্যানজাত টুনার মধ্যেও আবার অ্যালবাকোর(সাদা)টুনার মধ্যে ক্যানজাত হালকা টুনা বা স্কিপজ্যাকের তুলনায় বেশি মাত্রায় মার্কারি থাকে।তাই কম পরিমাণে পারদ বা মার্কারি আছে এমন ধরনের বিকল্পের দিকে যাওয়াই তুলনামুলক নিরাপদ।

২. সংক্ষিপ্ত বিরতির পর টুনা গ্রহণ করুন

আপনার সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট্ট বাচ্চাটির সাথে টুনার পরিচয় ঘটানোর সময়,প্রথমে খুব অল্প পরিমাণে নিয়ে ধীরে ধীরে এটি করুন।তার সমুদ্রজাত খাদ্যে কোনওরকম অ্যালার্জি আছে কিনা তা আগে খুঁজে বের করুন এবং তারপর পুনরায় এটি তাকে দিন এবং নজরের মধ্যে রাখুন যে আপনার বাচ্চার মধ্যে অ্যালার্জির কোনও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পাচ্ছে কিনা।

৩. অন্যান্য ধরনের মাছগুলি খাওয়ানোর চেষ্টা করুন

আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে মাছ খাওয়াতে চান কিন্তু এর মধ্যস্থ মার্কারি উপাদানটির কারণে চিন্তিত হয়ে থাকেন,তবে আপনি সেক্ষেত্রে স্যালমন মাছ খাওয়ানোরও চেষ্টা করতে পারেন।টুনার ন্যায় স্যালমন মাছের মধ্যেও প্রায় একইরকম সকল পুষ্টিকর গুণগুলি উপস্থিত যা এটিকে একটি দুর্দান্ত বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলেছে।

৪. ছোট ছোট পরিবেশন বজায় রাখুন

সুরক্ষার স্বার্থের জন্য সঠিক বয়স ভিত্তিক অনুপাতে পরিবেশন জারি রাখুন।

বাচ্চাদের জন্য টুনা মাছের সহজ রেসিপিগুলি

আপনার ছোট্ট সোনাটি তার 6 মাস বয়স অতিক্রম করলে এবং কঠিণ খাদ্যের প্রতি তার স্বাদ বিকাশ পেতে শুরু করলে আপনি তাকে খাওয়াতে পারেন এমন ধরনের দু‘টি রেসিপির উল্লেখ এখানে করা হলঃ

১. দইয়ের সহিত টুনা মাছের স্যালাড

এই অত্যন্ত সাধারণ এবং সহজ রেসিপিটির সহিত আপনার বাচ্চার সাথে টুনার পরিচয় পর্বটি সেরে ফেলুন।
উপকরণ
• 1 ক্যান কম সোডিয়ামযুক্ত হালকা টুনা
• 1/4 কাপ জৈব হোল মিল্ক দ্বারা প্রস্তুত সাদা দই
• বড় 1 চামচ তাজা পার্সলে পাতা কুঁচি অথবা শুকনো গুঁড়ো
প্রণালী
• একটি বাটিতে সকল উপকরণগুলিকে সংগ্রহ করে সব এক সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে নিন।
• বাচ্চা যাতে মিশ্রণটিকে সহজে ভালভাবে গিলে ফেলতে পারে তা নিশ্চিত করতে মিশ্রণটিকে সঠিক ভাবে চটকে নিতে পারেন।

২. টুনার কেক

বাচ্চারা এই রেসিপিটির ছোট,কামড়ের আকারের অংশটিকে বেশ উপভোগ করতে পারে,তবে এটি পরিবারের সকল সদস্যদের জন্যই একটি দুর্দান্ত মনোরঞ্জনকারী হয়ে উঠতে পারে।
উপকরণ
• 1 ক্যান টুনা মাছ
• পাউরুটির মাঝের নরম অংশগুলি
• 1 টি ডিম
• 2 টি ছোট আলু
• 1/2 পিঁয়াজ কুঁচি
প্রণালী
• প্রথমে আলুগুলিকে সেদ্ধ করে নিন এবং একটি ব্লেন্ডারের সাহায্যে সেটিকে পিঁষে নিন।
• পাউরুটির মাঝের নরম অংশটির সহিত বাকি সকল উপকরণগুলিকে একটি বাটির মধ্যে মিশ্রিত করুন।
• এবার একটি চাটুতে সামাণ্য মাখন গরম করে তার উপর মিশ্রণটির কিছুটা অংশ করে নিয়ে সেগুলিকে গোলাকার রূপ দিয়ে রান্না করুন।এক পাশ রান্না হয়ে গেলে উলটে দিয়ে অপর পাশটিকেও রান্না করে নিন।

টুনা মাছ হল অপরিহার্য পুষ্টিকর উপাদানগুলির শক্তিঘর যা বহু স্বাস্থ্যকর উপকারিতা প্রদান করে থাকে।আপনার সন্তান কোনও রকম সমস্যা ছাড়াই টুনা মাহগুলিকে গ্রহণ করতে পারছে কিনা তা পরীক্ষা করা নিশ্চিত করুন!

CLTD: banglaparenting

Sharing is caring!

Comments are closed.