দুই বছরের কম বয়সী শিশুর খাদ্য ও পুষ্টি

নতুন মায়েদের জন্য ,যারা ভবিষ্যতে মা হবেন তাদের জন্য এবং যেসব মা আবারও মা হবেন তাদের জন্য আজকের এই লেখা । আমাদের দেশে শিশু জন্মের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রথা প্রচলিত আছে। জন্মের সাথে সাথে মুখে মধু দেওয়া, মাথার কাছে লোহা, আগুন এর প্রতীক হিসাবে ম্যাচ বাক্স রাখা, মায়ের বুকের দুধ না দিয়ে ফরমুলা মিল্ক খাওয়ানো ইত্যাদি। আজকে আমরা শিশু জন্মের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টির বেসিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। এবং সেই সাথে শিশু জন্মের পর শিশুকে কীভাবে কোলে নিতে হবে, কীভাবে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করব।

জিরো থেকে ৩০ দিন বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য–
-শিশু জন্মের সাথে সাথে ১ ঘণ্টার মধ্যে তাকে মায়ের স্তন চুষতে দিতে হবে।
-মায়ের দুধ ছাড়া শিশুকে পানি,চিনির পানি, মধু,তেল বা অন্য কিছুই দেয়া যাবে না।
-মা ও শিশুর অবস্থান (পজিশন) ঠিক রাখতে হবে ।
(নিচের অবস্থান কে পজিশন বলে)
• মা পিঠ হেলান দিয়ে বসেছে।
• এক হাত দিয়ে শিশুর পিঠ ও পাছা ভালোভাবে ধরতে হবে।
• শিশুর শরীর মায়ের দিকে ফেরানো আছে ।
মায়ের বুকে শিশু ভালোভাবে লেগেছে (এটাচমেন্ট) ঠিক রাখতে হবে ।
( নিচের পদ্ধতিতে বাচ্চাকে কোলে রাখাকে এটাচমেন্ট বলে)
• শিশুর নিচের ঠোঁট উল্টানো এবং সে বড় হা করেছে ।
• স্তনের কালো অংশের বেশির ভাগ শিশুর মুখের ভেতর এবং দুধ গেলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে ।
• মায়ের হাত “ C “ মত করে স্তন ধরবেন।

জিরো থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য
মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ ঠিক রাখা।
• দুধের পরিমাণ বাড়াতে হলে স্তন খালি করতে হবে যেভাবে-
o ঘন ঘন মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
o একবারে একটি স্তন বেশি সময় নিয়ে খাওয়াতে হবে, পরের বার অন্য স্তন থেকে একই নিয়মে খাওয়াতে হবে ।
o অবস্থান (পজিশন), মায়ের বুকে ঠিকভাবে লেগে আছে (এটাচমেন্ট ) খেয়াল করতে হবে।
o অন্য কোনো খাবার এমন কী পানিও দেয়া যাবে না।
মা কীভাবে বুঝবে যে শিশু যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে-
• দিনে কমপক্ষে ৬ বার প্রশ্রাব করছে।
• ভালোমতো ঘুমায় ও খেলাধুলা করে।
• ওজন বাড়ছে ।

জিরো থেকে ৬ মাস বয়সের শিশুড় জন্য –
কম ওজনের শিশু হলে-
• ঘন ঘন মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
• মায়ের দুধ টানতে না পারলে দুধ গেলে কাপ ও চামচ দিয়ে খাওয়াতে হবে ।
• স্তন ফুলে শক্ত হয়ে গেলে-
• গরম কাপড় দিয়ে স্তন সেঁক দিতে হবে,
• অল্প দুধ গেলে ফেললে স্তন নরম হয়ে আসবে।
• শিশুকে স্বাভাবিকভাবে মায়ের দুধ খেতে দিতে হবে ।
• স্তনের বোঁটা ফেটে গেলে –
• অবস্থান (পজিশন) ও মায়ের বুকে ঠিক ভাবে লেগেছে (এটাচমেন্ট ) ঠিক রাখতে হবে ।
• ফেটে যাওয়া বোঁটার বুকের দুধ লাগিয়ে বাতাসে শুকাতে হবে।
• যে স্তনের বোঁটা ভালো আছে তা থেকে শিশুকে প্রথমে খাওয়াতে হবে।
• অসুবিধা চলতে থাকলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
• শিশু অসুস্থ হলেও তাকে ঘন ঘন মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে ।
মায়ের দুধ কীভাবে গালতে হয়-
• মাকে দুশ্চিন্তামুক্ত খুশি মনে থাকতে হবে।
• একটি বড় মুখের বাটি ও দুই হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
• বাটি স্তনের নিচে ধরতে হবে ।
• স্তনের উপরে বুড়া আঙ্গুল ও স্তনের নিচের কালো অংশের বাইরে বাকি ৪ আঙ্গুল রাখতে হবে ।
• স্তন চাপ দিয়ে বোঁটার দিকে আনতে হবে। কোনো অবস্থায় বোঁটায় চাপ দেয়া যাবে না।
• সব আঙ্গুল ঘুরিয়ে সমস্ত স্তনে চাপ দিয়ে দুধ গালতে হবে। গালানো দুধ ৬ ঘণ্টা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা যাবে ।

১৮১ দিন থেকে ৮ মাস বয়সী শিশু –করনীয়
• পারিবারিক চটকানো খাবার দিতে হবে।
• প্রতিদিন মাছ বা ডিম বা মুরগির কলিজা বা মাংস + ঘন ডাল+ শাক+ হলুদ সবজি ও ফল + তেলে ভাজা খাবার দিতে হবে।
• ২৫০ মিলিলিটার বাটির ১/২ বাটি করে দিনে ২ বার ।
• খাবার তৈরির এবং খাওয়ানোর আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে ।

৯ মাস থেকে ১১ মাস পূর্ণ বয়সের শিশুর জন্য-
• সময় নিয়ে শিশুকে নিজে নিজে খেতে শিখানো।
• প্রতিদিন মাছ বা ডিম বা মুরগির কলিজা বা মাংস + ঘন ডাল+ শাক+ হলুদ সবজি ও ফল + তেলে ভাজা খাবার দিতে হবে।
• ২৫০ মিলিলিটার বাটির ১/২ বাটি করে দিনে ৩ বার এবং ১-২ বার পুষ্টিকর নাস্তা দিতে হবে ।
• খাবার তৈরির এবং খাওয়ানোর আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে ।

১২ থেকে ২৩ মাস পূর্ণ বয়সী শিশুর জন্য-
• শিশুকে নিজে নিজে খেতে উৎসাহ দিতে হবে ।
• প্রতিদিন মাছ বা ডিম বা মুরগির কলিজা বা মাংস + ঘন ডাল+ শাক+ হলুদ সবজি ও ফল + তেলে ভাজা খাবার দিতে হবে।
• ২৫০ মিলিলিটার বাটির ১ বাটি করে দিনে ৩ বার এবং ১-২ বার পুষ্টিকর নাস্তা দিতে হবে ।
• খাবার তৈরির এবং খাওয়ানোর আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে ।

শিশু যারা খেতে চায় না –
• যখন খিদা পাবে তখন খাওয়াবেন।
• বিভিন্ন ধরনের খাবার দিতে হবে কারণ একই ধরনের খাবার বার বার দিলে সে খাবে না ।
• জুস , পানি, চকলেট, চিপস জাতীয় খাবার দিয়ে শিশুর পেট ভরাবেন না।
• উৎসাহ দিয়ে ও প্রশংসা করে খাওয়াতে হবে।
• সময় নিয়ে খাওয়াতে হবে।
• শিশুকে তার পছন্দের পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
• কখনই জোর করা যাবে না।

অসুস্থ শিশুকে খাওয়ানো –
• ঘন ঘন মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
• তার পছন্দের পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে ।
• অল্প অল্প করে ঘন ঘন খেতে দিতে হবে।
• অসুস্থতা থেকে সেরে উঠলে আগের ওজন না হওয়া পর্যন্ত অন্তত ১ সপ্তাহ বেশি পরিমাণে ঘন ঘন পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে ।

বয়স অনুযায়ী শিশুর বিকাশ –
• ৩ থেকে ৪ মাস – ঘাড় শক্ত হয় ।
• ৭ মাস – সাপোর্ট ছাড়া বসতে পারে।
• ৯-১০ মাস – কিছুর সাহায্যে দাঁড়াতে পারে ।
• ১০ থেকে ১১ মাস – হামাগুড়ি দেয় ।
• ১২ মাস – ২ – ৩ টি অর্থ পূর্ণ শব্দ বলতে পারে ।
• ১৩ থেকে ১৮ মাস – সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারে ।
• ২৪ মাস- ২/৩ শব্দের বাক্য বলতে পারে ।

ধন্যবাদ ।
মডেল ঃ ইব্রাহিম সাইদ ।
লিখেছেনঃ ডাঃ এম এম রহমান রাজীব
খিলগাঁও ডায়াবেটিক ও স্পেশালাইজড ডক্টর’স চেম্বার

CLTD: shajgoj

Sharing is caring!

Comments are closed.