বাচাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ান এই ৫ অব্যর্থ উপায়ে

আমরা এখন এমন একটি দুর্বার বিশ্বে বাস করি যা একই সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ ও ক্লান্তিকর। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি অল্পবয়সি শিশু এবং ছাত্রছাত্রীরাও তাদের কম স্মৃতিশক্তি দিয়েও একাধিক দৈনন্দিন কাজের জালে জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেট বাচ্চাদের মনোযোগ ও একাগ্রতায় ভাগ বসাচ্ছে, এমনকি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। কিন্তু এটি ভুলে গেলেও চলবে না যে আগামী প্রজন্ম অতীতের তুলনায়ও বেশি স্মার্ট পৃথিবীতে বাস করবে। তাদের ফিসিক্যাল ও ভার্চুয়াল বাস্তবতা তখন একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করবে এবং তাদের পড়াশোনার পদ্ধতি ও ধারণক্ষমতার একটি পরিবর্তন তখন কাম্য হয়ে উঠবে।

সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ, ইন্টারনেটে নানান তথ্যের উপস্থিতি এবং মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার এখন অনিবার্য। এখন আমাদের মেনে নেওয়া উচিত যে, বাচ্চারা প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস জানতে চায় এবং এর জন্য তাদের নানা ইন্টারাক্টিভ টুলস প্রদান করা উচিত যা তাদের ব্যস্ত রাখবে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। বাচ্চাদের মন থেকে বিভ্রান্তি দূর করে কী ভাবে তাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায়, তার জন্য এখানে কিছু টিপস দেওয়া রইল।
​গেমিফিকেশান

পড়াশোনা ও খেলাধুলোর স্বাস্থ্যকর মিশ্রণ ঘটানোর সহজ পদ্ধতি হল গেমিফিকেশান। এটি অত্যন্ত চমকপ্রদ। নানান ভাবে এটি সন্তানের সামনে পেশ করতে পারেন, যেমন ট্রিভিয়া কুইজ, পাজল এমনকি সামগ্রিক শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতার গ্রহণের জন্য কোনও কর্মসূচী ইত্যাদি। এটি প্রমাণিত যে গেম খেলার মধ্য দিয়ে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে কাঠামোগত ও কার্যকরী পরিবর্তন দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সেই সমস্ত স্থান বড় ও সক্রিয় হয় যা মনোযোগ ও চাক্ষুষ দক্ষতার জন্য দায়ী। পড়াশোনার সঙ্গে যখন খেলাধুলো মিশিয়ে দেওয়া হয়, তখন বাচ্চাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়টি সুনিশ্চিত করা যায় এবং কোনও চাপ ছাড়াই তারা জ্ঞান লাভ করতে পারে। এর ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে, পাশাপাশি স্মৃতিশক্তিও বাড়বে অভাবনীয় হারে।

​ইন্টারাক্টিভ শিক্ষা

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম অনুযায়ী উন্নত ও উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও বিশেষ ভাবে নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির শিক্ষাগ্রহণের ওপর নির্ভর করে, যা শুধুমাত্র নির্দেশ ও মুখস্থ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিশ্বের এক বৃহদ অংশ এখনও শিক্ষাকে ইন্টারাক্টিভ ও অভিজ্ঞতামূলক করে তোলার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এআর এবং ভিআর-এর মাধ্যমে অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্যাসিভ শিক্ষাগ্রহণ পদ্ধতি থেকে পৃথক। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা সিমুলেশান এবং বাস্তব জীবনের অ্যাপ্লিকেশাল ভিত্তিক বিষয়বস্তুর সাহায্যে জটিল বিষয়ও সহজে বুঝতে পারবে এবং এটি তাদের বোধগম্যতাকেও শক্তিশালী করবে।

দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে ভারসাম্য

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সকালের পারিবারিক প্রাতঃরাশ ইত্যাদি কোনওটিই যাতে বাচ্চার ওপর প্রয়োজনাতিরিক্ত ভাবে চাপিয়ে দেওয়া না-হয়, যার ফলে তারা সবসময় এদিন ওদিক ছুটতে থাকে, সে বিষয়ও লক্ষ্য রাখতে হবে। বাচ্চারা কী করতে ভালোবাসে তা খুঁজে বার করুন এবং তার সঙ্গে সামাজিক মেলামেশা, পড়াশোনা, এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটি এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করুন। এই সমস্ত কাজে তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, যাতে তারা অধিক চাপ অনুভব না-করে।

পজিটিভ স্ক্রিন টাইম

স্ক্রিন টাইম যে সবসময় ক্ষতিকর হবে তার কোনও মানে নেই। এ ক্ষেত্রে মডারেশানে অভ্যস্ত করে তুলতে পারেন সন্তানকে। তবে লক্ষ্য রাখবেন ফোন বা ল্যাপটপের সঙ্গে তারা যে সময় কাটাচ্ছে, তা যাতে ফলদায়ক হয়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এআর-এর মাধ্যমে বাচ্চারা নতুন একটি পৃথিবী খুঁজে পাবে এবং গেমিফিকেশান তাদের দীর্ঘকালীন পড়াশোনার সঙ্গে জড়িয়ে রাখবে। এর পাশাপাশি নিমগ্ন অভিজ্ঞতা ও যোগাযোগমূলক কনটেন্ট তাদের ডিজিটাল কনজেশান কমাতে সাহায্য করবে। তবে যে সমস্ত কনটেন্ট তারা দেখে যাচ্ছে, তার ওপর নজরদারি চালাতে ভুলবেন না।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

এটি শরীর ও মস্তিষ্ককে রিজুভিনেট করে। এটি অক্সিজেন বৃদ্ধি করে যা স্বাস্থ্যকর বিকাশে সহায়ক। একটি জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রিত শ্বাসপ্রশ্বাসের ফলে মস্তিষ্ক জুড়ে নিউরোনাল অসকিলেশান হয়, বিশেষত সেই অংশে যা আবেগের সঙ্গে জড়িত। তাই অল্পবয়স থেকেই নিজের সন্তানকে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে উৎসাহিত করুন। এর ফলে তারা চাপমুক্ত থাকতে পারবে এবং ভালো ঘুম সুনিশ্চিত করতে পারবে।
cl: eisamay

Sharing is caring!

Comments are closed.