বাড়ন্ত বয়সে মেনে চলুন সঠিক এই ডায়েট চার্ট

বাড়ন্ত বাচ্চার ওজন বাড়াতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ

প্রোটিন: ছোট্ট শরীরের কোষগঠন থেকে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা— এই সব কিছুর পিছনেই রয়েছে প্রোটিন। তাই প্রোটিনের অভাবে যেমন বাড়বে না ওজন, তেমনই শিশু সহজেই বিভিন্ন অসুখে পড়তে পারে। আবার বিশেষজ্ঞদের কথায়, অসুখে পড়লেও কমতে পারে ওজন।

ফাইবার: ফাইবার জাতীয় খাবার ছোট্ট শরীরকে সারাদিনের দুষ্টুমির জন্য এনার্জি জোগায়। দুষ্টুমি, দৌড়ঝাঁপের ফলে শরীরের ক্যালোরি অত্যাধিক কমে যাওয়ার ভয় থাকে। তবে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে ওজন কমা নিয়ে আর দুশ্চিন্তার দরকার নেই।

ফ্যাট: বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক মায়েরাই ভাবেন, ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার দিলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। অথচ মায়ের দুধেই থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্যাট। ফ্যাট বাচ্চাকে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালোরি জোগায়। তাই ফ্যাট ছাড়া ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুব কম‌।

খনিজ পদার্থ: ছোট্ট সোনার হাড়, রক্ত, মেটাবলিজম ইত্যাদি গঠনে খনিজ পদার্থই সাহায্য করে। খনিজ পদার্থের অভাবে কোষের ক্রিয়াবিক্রিয়া ঠিক মতো হয় না। যার ফলে কমতে থাকে ওর ওজন। তাই ওজন ঠিক রাখতে ডায়েটে খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার রাখা মাস্ট।

বাচ্চার ওজন বাড়াতে কোন কোন খাদ্যগুণ বা নিউট্রিশন প্রয়োজন, তা তো জেনে নেওয়া গেল। এবারে জেনে নিতে হবে, কোন কোন খাবার খেলে শিশু এই সব ক’টি উপকরণই পাবে। শিশুর ডায়েট যাই হোক না কেন, কিছু নির্দিষ্ট খাবার তাতে রাখা উচিত, এমনটাই বলেন শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলো সম্পর্কে।

বাচ্চার ওজন বাড়াতে খাদ্য তালিকায় রাখুন এই ৯টি খাবার

কলা: পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলেও ছোট্ট সোনার খাবার ঠিক মতো হজম হচ্ছে না। তাই কমে যাচ্ছে ওজন‌। এসব ক্ষেত্রে সমাধান একটাই— কলা। কলা এমন একটি ফল যা খাবার হজম করানোর পাশাপাশি পৌষ্টিকতন্ত্রের অন্যান্য সমস্যাও সারিয়ে দিতে পারে। কলায় রয়েছে ভিটামিন বি-৬,ভিটামিন সি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শিশুকে বিভিন্ন অসুখের থেকেও দূরে রাখে। কলায় থাকা পটাশিয়াম শিশুর হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। তাই সোনামণির ব্রেকফাস্টে এবার থেকে কলা মাস্ট।

অলিভ অয়েল: ছোট্ট সোনার প্যাংক্রিয়াস থেকে নিঃসৃত উৎসেচকই ওকে খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এই প্যাংক্রিয়াসকে ভালো রাখে অলিভ অয়েলে থাকা মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। শিশুর বয়স ছ’মাস পেরিয়ে গেলে চিকিৎসকরা খাবারে অল্প অলিভ অয়েল মিশিয়ে খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। অলিভ অয়েলে থাকা উদ্ভিজ্জ ফ্যাট বাচ্চার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে একশো গ্ৰাম খাবারে এক চা-চামচ অলিভ অয়েল যথেষ্ট। এর থেকে বেশি দিলে বাচ্চার ডায়রিয়া হতে পারে। এবং অলিভ অয়েল দেওয়ার সময় শুধুমাত্র একস্ট্রা ভার্জিন তেলই দেবেন। এটাই কাঁচা খাওয়ানো যায়। যদি রান্নায় দিতে হয়, সেক্ষেত্রে পিওর অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন।

স্ত*ন্যপান: শিশুর ওজন কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চার ওজন বাড়াতে মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্য আর কিছু নেই। সব চিকিৎসকই বাচ্চাকে প্রথম একবছর টা*না দু*ধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করলেও এই দুধ খাওয়া যেন বন্ধ না-হয়। কারণ মায়ের দু*ধে থাকা ফ্যাট বাচ্চার শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি জোগায়। দুধের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম বাচ্চার হা*ড় শক্ত করে।

ওটস্: বাচ্চা দৌড়ঝাঁপ আর দুষ্টুমি করতে ওস্তাদ। অত্যাধিক ক্যালোরি বার্নের ফলেই কমে যাচ্ছে ওজন। এমন অবস্থায় ওটস খুবই কার্যকরী। ওটস-এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার । তাই এটি সহজে হজম হয়। আর কে না জানে, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার শিশুকে অফুরন্ত এনার্জি দেয়। তাই এবার থেকে লাঞ্চে রাখুন ওটস্-এর পরিজ।

অ্যাভোকাডো: ছোট্ট সোনা পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিদ্রব্য না পেলে ওজনে কমতে বাধ্য। তাই চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন বাচ্চার প্রধান খাবারের সঙ্গে অ্যাভোকাডো রাখতে। কারণ অ্যাভোকাডোয় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, রাইফ্লাভিন, থিয়ামিন, ফোলিক অ্যাসিড ও জিঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিদ্রব্য। এই উপাদানগুলো শিশুর কোষের গঠন থেকে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি— সবেতেই ভূমিকা নেয়। পাশপাশি বাচ্চাকে জোগায় পর্যাপ্ত পরিমাণে এনার্জি। তাই বাচ্চার ওজন কম নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলে ওর লাঞ্চ বা ব্রেকফাস্টে রাখুন অ্যাভোকাডো।

বাদাম: খনিজ পদার্থের অভাবে শিশুর শরীরের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াবিক্রিয়া থমকে থাকে। যার প্রভাবে ওজন কমে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। শিশুস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা তাই বাচ্চাকে বাদাম খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। কাজুবাদাম, পিনাট বাটারে আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ। তাই বাচ্চাকে এবার থেকে লাঞ্চ বা ব্রেকফাস্টে পেস্ট করা বাদাম খাওয়াতে ভুলবেন না।

চিজ: বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চার ওজন বাড়াতে ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খুবই প্রয়োজন। আর সেদিক থেকে চিজের বিকল্প খুব কম। কারণ চিজে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ফ্যাট ও ক্যালসিয়াম। তবে বাচ্চাদের খাওয়ার জন্য ক্রিম চিজ ও কটেজ চিজই সবচেয়ে নিরাপদ। চিজ প্রায় সব বাচ্চারই পছন্দের খাবার। তাই খাওয়ানো নিয়ে মায়েদের বেশি ঝামেলা নেই। তবে দুই বছরের কমবয়সি শিশুদের গ্ৰেট করা চিজ খাবারে মিশিয়ে দিন। নয়তো গলায় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সবজি: ভিটামিন আর খনিজ পদার্থের অভাবে শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে ওজন কমে যাওয়া স্বাভাবিক। শিশুর ওজন বাড়াতে ভিটামিন আর খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার ডায়েটে রাখা মাস্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট্ট সোনা যখন থেকে শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করছে, তখন থেকেই পাতাযুক্ত শাকসবজিও ওর প্লেটে রাখা উচিত। যেমন গাজর আর বিনসে রয়েছে ভিটামিন এ, কে, বি-৬, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ পদার্থ। তাই ডিনার বা লাঞ্চ— যে কোনও সময়েই একটি সবজি ওর প্লেটে থাকুক।

ডিম: ছোট্ট সোনার কোনও অসুখ হলে তার প্রভাব ওজনে পড়তে বাধ্য। ডিমে রয়েছে এমন কয়েকটি প্রোটিন, যা শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে। এই প্রোটিনগুলো শিশুর শরীর নিজে তৈরি করতে পারে না। অথচ এগুলোই ওর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে প্রয়োজন। তাই আট মাস বয়সের পর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে নিয়মিত ডিম খাওয়ান

cl: babydestination

Sharing is caring!

Comments are closed.