
বাচ্চাদেরকে নম্র ও ভদ্র করতে এই পদ্ধতি মেনে চলুন
আমরা ছোটবেলা থেকেই নম্র, ভদ্র ও সভ্য হওয়ার শিক্ষা পেয়ে এসেছি। নিজের সন্তানকেও আমরা এই শিক্ষাই দিয়ে থাকি। সন্তানকে অল্পবয়স থেকে এই শিক্ষা দেওয়া হলে, তা তাদের মনে গেঁথে যায় এবং তারা সেই অনুযায়ী ব্যবহার করে। তবে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে সন্তানের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ, কঠোর ব্যবহার দেখা দেয়। অনেক সময় সন্তানের এমন ব্যবহার দেখে মা-বাবা আহত হন। ছেলে বা মেয়েকে কখনও ভালোবেসে বুঝিয়ে আবার কখনও ধমক দিয়ে নম্র, ভদ্র হওয়ার পাঠ পড়িয়ে থাকি। এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল, যা সন্তানকে বিনম্র করে তোলার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাহায্য করবে। ভদ্রতার শিক্ষা সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই দেওয়া উচিত।
নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনুন
মা-বাবার দেখাদেখি বাচ্চারা অনেক কিছু শিখে থাকে। তারা যদি মা-বাবাকে কারও সঙ্গে কঠোর ভাবে কথা বলতে দেখে, তা হলে তারা নিজের অজান্তেই সেই ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। তাই এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম অভিভাবকদের মধ্যে পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রথমে নিজের নম্র আচরণ করুন। ধৈর্য ধরতে শিখুন। আপনাদের দেখাদেখি সন্তানও তাই করবে।
সন্তানকে সাহায্য করতে শেখান
এখন প্রত্যেকে নিজের নিজের জীবনে ব্যস্ত। অন্যের সাহায্য করার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই কমে গিয়েছে। তাই নিজের সন্তানকে অন্যের সাহায্য করতে শেখান। এর ফলে তাদের মনে বিনম্রতার সঞ্চার হবে। অন্যের সাহায্য করলে মানসিক শান্তি লাভ করা যায়। তাদের এই স্বভাব ভবিষ্যতে সাহায্য করবে।
ভালো ব্যবহার করুন
সন্তানকে ভালো ব্যবহারের শিক্ষাও মা-বাবাকেই দিতে হবে। কোনও ভুল করে থাকলে তা স্বীকার করতে শেখান। এর ফলে তারা মিথ্যা কথা বলা ও নিজের ভুল অন্যের ওপর আরোপ করার অভ্যাসও ত্যাগ করবে। সন্তানকে ভুল স্বীকার করতে এবং ক্ষমা চাইতে শেখান। এটি তাদের স্বভাবকে নমনীয় করবে।
অহংকার দূর করুন
অহংকারের মনোভব বাচ্চাদের মানসিকতার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অহংকারের ফলে তাদের মনে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আসে। তাই বাচ্চাদের মনে অহংকার জন্মাতে দেবেন না। আবার সন্তানের মনে অহংকার থাকলে তাকে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করতে শেখান। এর ফলে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারবে এবং তারা অন্যকে বোঝার চেষ্টা করবে।
নিজে থেকে খাবার খেতে শেখান বাচ্চাকে, জেনে নিন সহজ উপায়
খাবারের প্রতি বাচ্চাদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ থাকে। বাচ্চারা নানান শাক-সবজি নিয়ে নিলেও সে সব খেয়ে ওঠে না। আবার তাদের জোর করে কিছু খাওয়াতে গেলে তারা নিজে থেকে সেটি খেতেও চাইবে না। তাই আপনি যদি নিজের সন্তানকে খাবার খাওয়ার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তা হলে তাদের পছন্দের খাবার পরিবেশন করুন। এর ফলে বাচ্চাদের মধ্যে খাওয়ার প্রতি রুচি বাড়বে এবং তারা নিজে থেকে খাবার খাওয়ার উৎসাহ বোধ করবে।
অধিকাংশ সময় ছোট বাচ্চারা অর্ধ তরল খাবার খেয়ে থাকে, যেমন- খিচুড়ি, পায়েস, দই, দালিয়া ইত্যাদি। এর ফলে তারা নিজে থেকে শিখতে সময় নেয়। কারণ এ ধরনের অর্ধ তরল খাবার খাওয়ার জন্য চামচ ধরা, চামচ সোজা রেখে খাবার মুখে ভরা ইত্যাদি শিখতে হয়। বাচ্চাদের কাছে এই কায়দা কঠিন ঠেকতে পারে। তাই তাদের এমন কিছু খাবার দিন, যা তারা মুঠোয় ধরে রেখে খেতে পারে। আপেল, গাজর, শশা, নাশপাতির লম্বা করে কাটা টুকরো তাদের হাতে ধরিয়ে দিন। এর ফলে বাচ্চারা ঘুরতে ফিরতে এগুলি খেতে শুরু করবে।
একবারে একটি টুকরোই বাচ্চাদের দিন। তারা যাতে খাবারের টুকরোটি তর্জনী ও বুড়ো আঙুল দিয়ে ধরতে পারে, তা সুনিশ্চিত করুন। বাচ্চাদের সামনে প্লেট বা থালায় খাবার দিলে, তারা সেখান থেকে এক একটি টুকরো খাবার না-তুলে মুঠো করে অনেকগুলি খাবার তুলে ফেলে। তাই তাদের হাতে এক একটি টুকরো ধরিয়ে দিন। এর ফলে তারা আঙুলের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে বুঝতে পারবে।
৯ মাসে বাচ্চাদের যে ভাবে সিপার ধরতে শেখান, তেমনই দেড় বছরের বাচ্চাদের চামচের সাহায্যে নিজে খাবার খেতে শেখানো উচিত। এখন বাজারে অল্পবয়সি বাচ্চাদের উপযুক্ত চামচ পাওয়া যায়। এগুলি বাচ্চাদের কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে। এই চামচগুলি মোলায়েম ও মোটা হয়। অন্য দিকে এই বয়সে বাচ্চারা নিজের কব্জির সঠিক ব্যবহার করতে জানে না বলে এই চামচগুলির সামনের অংশ সামান্য বাঁকা। যাতে হাত বেশি না-ঘুরিয়ে তা সহজে মুখে চলে যেতে পারে।
মা বা বাবা যদি বাচ্চাকে খাইয়ে থাকে তা হলে সঠিক পরিমাণ মতো খাওয়াতে পারে। কিন্তু সেই পরিমাণই বাচ্চাদের খেতে দিলে তারা অনেক খাবারই নষ্ট করে ফেলবে। তাই বাচ্চা নিজে থেকে খাবার খাওয়া শেখানোর সময় প্রথমে এক চামচ বা দু চামচ খাবার পরিবেশ করুন। সেই খাবার শেষ হলে ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ান। প্রতিবার খাবার শেষ হওয়ার পর বাচ্চাদের উৎসাহিত করুন।
কারও দেখাদেখি বাচ্চারা সহজে খাবার খাওয়া শিখতে পারবে। তাই দিনে অন্তত একবার পরিবারের সমস্ত সদস্যদের সঙ্গে বাচ্চাদের খেতে বসান। পাশাপাশি অন্য সময় বাচ্চা একা খেতে বসলেও মা অথবা বাবা তার সঙ্গে বসুন।
খাবার-দাবারের চেয়ে বেশি বাসনের প্রতি ঝোঁক থাকে বাচ্চার। তাই তাদের জন্য নানান রঙের, সুন্দর বাসন নির্বাচন করতে পারেন। এ ধরনের বাসন বাচ্চাদের নিজে থেকে খাবার খাওয়ার উৎসাহ বৃদ্ধি করবে। আবার বাচ্চার হাত থেকে বাসন পরে যাবে বলে ভয় পেলে সাকশান কাপ বা বাটি কিনতে পারেন। এগুলি টেবিলের সঙ্গে আটকে থাকে এবং সহজে পড়ে যায় না।
অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি শোনান
মহাপুরুষদের জীবনের অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি শুনিয়েও সন্তানের মনে নম্রতার সঞ্চার করতে পারেন। এ ধরনের কাহিনি বাচ্চাদের উৎসাহিত করে এবং তারা সেই মহাপুরুষদের নিজের আদর্শ করে জীবনে এগিয়ে যেতে চাইবে। এর ফলে ধীরে ধীরে বাচ্চাদের মনে পরিবর্তন দেখা দেবে।
অন্যের প্রশংসা করতে শেখান
নিজের প্রশংসা শুনতে কে না ভালোবাসে। আপনার সন্তানও নিজের প্রশংসা শুনে গর্ববোধ করে। কিন্তু এর পাশাপাশি অন্যের প্রশংসা করাও জরুরি। এর ফলে আপনার সন্তানের প্রতি সকলের আকর্ষণ বাড়বে। এমনকি সন্তানের মনে বিনম্রতারও সঞ্চার হবে।
মিলেমিশে থাকুন
বাচ্চাদের মনে বিনম্রতার ধারণা সৃষ্টি করার জন্য পরস্পরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে বাচ্চাদের একাগ্রতা বৃদ্ধি পাবে এবং ধৈর্য ও বিনম্রতার বিকাশ ঘটবে। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে নিজের সন্তানকেও বাইরে খেলতে যেতে দিন। তাদের মেলামেশার পরিসর বাড়বে এবং তারা মিশুকে হয়ে উঠতে পারবে।
নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করান
প্রত্যেকটি মা-বাবা সন্তানকে নিজেদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানান। বড়দের সম্মান করা, অন্যের সাহায্য করা, দরিদ্র ও অসহায়দের দান করা ইত্যাদি করতে শেখান সন্তানকে। এটি বাচ্চাদের নম্র, ভদ্র ও সভ্য করে গড়ে তুলবে।
cl: eisamay